জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

চ্যানেল-আইসহ কয়েকটি টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যায় পুরাতন জেএমবির সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিআইডির তদন্তেও। ৬ বছর আগের এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ৪ বছর ডিবিতে থাকার পর গত ২ বছর ধরে তদন্ত করছে সিআইডি। ইতোমধ্যে আদালতে ৪৬ বার সময় নিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। সিআইডি বলছে, নৃশংসভাবে এ হত্যার প্রধান হোতা পুরাতন জেএমবির এক শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে না পারায় আটকে আছে তদন্ত প্রতিবেদন। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে ওই শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতার করার তৎপরতা চালাচ্ছে সিআইডি। শীর্ষ ওই জঙ্গি নেতা গ্রেফতার হলেই ফারুকী হত্যা মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া সহজ হবে বলে সিআইডি জানায়। সিআইডি জানায়, মাওলানা ফারুকী ‘চ্যানেল আই’র ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’, ‘মাই টিভি’র লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধানে’র উপস্থাপক ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রম নিয়ে মাওলানা ফারুকীকে অপছন্দ করতো পুরাতন জেএমবির জঙ্গিরা। আর ধর্মীয় মতবাদ থেকেই পুরাতন জেএমবির সদস্যরাই মাওলানা ফারুকীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ফারুকী হত্যা জঙ্গিদের কাজ বলে সন্দেহ করা হলেও তা অস্পষ্ট ছিল। কোন গ্রুপের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়েছে কিলিং মিশনে কারা অংশ নিয়েছে এসব অনেককিছুই ধারণার বাইরে ছিল। মামলটি শুরু থেকে ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করেছে। ডিবি তখন বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে। পরে মামলাটি ২০১৮ সালের দিকে তদন্তের জন্য অপরাধ তথ্য বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়। একদফা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয় মামলাটির বর্তমানে সিআইডির অর্গনাইড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান এর তদন্ত করছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান সংবাদকে বলেন, গত ৫ মাস আগে মামলাটি তদন্তের জন্য তার কাছে আসে। এর আগে সিআইডির অন্য আরেক কর্মকর্তা তদন্তের দায়িত্বে ছিল। গত ৫ মাসের তদন্তে মাওলানা ফারুকী হত্যায় কারা জড়িত, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা পরিষ্কার হয়েছে অনেকটা। এখন পর্যন্ত এ হত্যায় পুরাতন জেএমবির সংশ্লিষ্ট মিলছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু আসামিকে আগের তদন্ত টিমের সদস্যরা গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জেলে আছে আবার অনেকেই জামিনে আছে। ভাটারা এলাকায় জঙ্গি অভিযানে গ্রেফতার এক জঙ্গিকে এ মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। আরেকজন জঙ্গি ভারতে অবস্থান করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে। মূলত ওই জঙ্গিকে গ্রেতফার করা পুরো হত্যকা-ের মোটিভ পরিষ্কার হবে। চার্জশিটও দ্রুত দেয়া সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় মাওলানা ফারুকীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ছেলে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বতর্মানে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফরহানের নেতৃত্বেধীন টিম মামলাটি তদন্ত করছে। ওই সময় করা মামলার এজাহার বলা হয়ে, ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় কলিংবেল চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসার দরজা খুললে দুইজন লোক প্রবেশ করে নুরুল ইসলামের সঙ্গে ড্রয়িং রুমে বসে। এর কিছুক্ষণ পর আরও ৬/৭ জন বাসায় প্রবেশ করে। বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ফারুকীর মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ভেতর থেকে চেয়ার আনতে যায়। ফিরে এসে দেখেন ফারুকীর মাথায় পিস্তল ও চাপাতি ধরে রেখেছে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা বাসার সবাইকে বেঁধে ফারুকীতে হত্যা করে। আসামির বাসা থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, ক্যামেরা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলার পর ডিবির কাছে তদন্তভার দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ তখন বেশ কয়েজনকে গ্রেফতার করে। ওই সময় ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জঙ্গিরা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। ধর্মীয় মতপার্থ্যকের কারণে মাওলানা ফারুকীকে হত্যা করা হয়। ফারুকীকে হত্যায় আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা জড়িত। ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাদিসুর রহমান সাগর, আবদুল গাফ্ফার, মিঠু প্রধান ও খোরশেদ আলম নামে চার আসামি কারাগারে রয়েছে। আর রাকিব ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাকিব, তারেকুল ইসলাম মিঠু, আলোক ব্যাপারি, মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ জামিনে আছে।

আদালত সূত্র জানায়, মাওলানা ফারুকী হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ৪৬ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ হত্যা মামলায় পুরাতন জেএমবির সদস্য হাদিসুর রহমান সাগর নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে আরও নতুন নতুন আসামি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে (জাফা) অদ্যাক্ষরের এক জঙ্গির নাম এসছে। ওই জঙ্গি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। তাকে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফারুকী হত্যায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকলেও অনেকটা অস্পষ্ট ছিল। হত্যার অভিযোগে কিছু আসামি গ্রেফতার হলেও বেশ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে কারা জড়িত কারা জড়িত না এসব নিয়েও অস্পৃষ্টতা ছিল। সিআইডির তদন্তে অস্পষ্টতা দূর হয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া জঙ্গিদের নাম পরিচয় পরিষ্কার হয়েছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, মাওলানা ফারুকে পুরাতন জেএমবির জঙ্গিরা হত্যা করেছিল। তখন জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করার জন্য পুলিশের স্পেশাল কোন ইউনিট ছিল না। জঙ্গি রিলেটেড ঘটনাগুলো ডিবি পুলিশ তদন্ত করত। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি দমনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন হয়। এর আগে ডিবির তদন্তে মাওলানা ফারুকীকে হত্যা জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তখন বেশকিছু পুরতান জেএমবির সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হয়। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে পাঠানো হয়। বর্তমানে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ , ৮ মহররম ১৪৪২, ২৮ আগস্ট ২০২০

মাওলানা ফারুকী হত্যা

জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

সাইফ বাবলু

চ্যানেল-আইসহ কয়েকটি টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যায় পুরাতন জেএমবির সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিআইডির তদন্তেও। ৬ বছর আগের এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ৪ বছর ডিবিতে থাকার পর গত ২ বছর ধরে তদন্ত করছে সিআইডি। ইতোমধ্যে আদালতে ৪৬ বার সময় নিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। সিআইডি বলছে, নৃশংসভাবে এ হত্যার প্রধান হোতা পুরাতন জেএমবির এক শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে না পারায় আটকে আছে তদন্ত প্রতিবেদন। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে ওই শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতার করার তৎপরতা চালাচ্ছে সিআইডি। শীর্ষ ওই জঙ্গি নেতা গ্রেফতার হলেই ফারুকী হত্যা মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া সহজ হবে বলে সিআইডি জানায়। সিআইডি জানায়, মাওলানা ফারুকী ‘চ্যানেল আই’র ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’, ‘মাই টিভি’র লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধানে’র উপস্থাপক ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রম নিয়ে মাওলানা ফারুকীকে অপছন্দ করতো পুরাতন জেএমবির জঙ্গিরা। আর ধর্মীয় মতবাদ থেকেই পুরাতন জেএমবির সদস্যরাই মাওলানা ফারুকীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ফারুকী হত্যা জঙ্গিদের কাজ বলে সন্দেহ করা হলেও তা অস্পষ্ট ছিল। কোন গ্রুপের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়েছে কিলিং মিশনে কারা অংশ নিয়েছে এসব অনেককিছুই ধারণার বাইরে ছিল। মামলটি শুরু থেকে ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করেছে। ডিবি তখন বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে। পরে মামলাটি ২০১৮ সালের দিকে তদন্তের জন্য অপরাধ তথ্য বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়। একদফা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয় মামলাটির বর্তমানে সিআইডির অর্গনাইড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান এর তদন্ত করছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান সংবাদকে বলেন, গত ৫ মাস আগে মামলাটি তদন্তের জন্য তার কাছে আসে। এর আগে সিআইডির অন্য আরেক কর্মকর্তা তদন্তের দায়িত্বে ছিল। গত ৫ মাসের তদন্তে মাওলানা ফারুকী হত্যায় কারা জড়িত, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা পরিষ্কার হয়েছে অনেকটা। এখন পর্যন্ত এ হত্যায় পুরাতন জেএমবির সংশ্লিষ্ট মিলছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু আসামিকে আগের তদন্ত টিমের সদস্যরা গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জেলে আছে আবার অনেকেই জামিনে আছে। ভাটারা এলাকায় জঙ্গি অভিযানে গ্রেফতার এক জঙ্গিকে এ মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। আরেকজন জঙ্গি ভারতে অবস্থান করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে। মূলত ওই জঙ্গিকে গ্রেতফার করা পুরো হত্যকা-ের মোটিভ পরিষ্কার হবে। চার্জশিটও দ্রুত দেয়া সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় মাওলানা ফারুকীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ছেলে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বতর্মানে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফরহানের নেতৃত্বেধীন টিম মামলাটি তদন্ত করছে। ওই সময় করা মামলার এজাহার বলা হয়ে, ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় কলিংবেল চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসার দরজা খুললে দুইজন লোক প্রবেশ করে নুরুল ইসলামের সঙ্গে ড্রয়িং রুমে বসে। এর কিছুক্ষণ পর আরও ৬/৭ জন বাসায় প্রবেশ করে। বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ফারুকীর মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ভেতর থেকে চেয়ার আনতে যায়। ফিরে এসে দেখেন ফারুকীর মাথায় পিস্তল ও চাপাতি ধরে রেখেছে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা বাসার সবাইকে বেঁধে ফারুকীতে হত্যা করে। আসামির বাসা থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, ক্যামেরা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলার পর ডিবির কাছে তদন্তভার দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ তখন বেশ কয়েজনকে গ্রেফতার করে। ওই সময় ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জঙ্গিরা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। ধর্মীয় মতপার্থ্যকের কারণে মাওলানা ফারুকীকে হত্যা করা হয়। ফারুকীকে হত্যায় আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা জড়িত। ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাদিসুর রহমান সাগর, আবদুল গাফ্ফার, মিঠু প্রধান ও খোরশেদ আলম নামে চার আসামি কারাগারে রয়েছে। আর রাকিব ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাকিব, তারেকুল ইসলাম মিঠু, আলোক ব্যাপারি, মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ জামিনে আছে।

আদালত সূত্র জানায়, মাওলানা ফারুকী হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ৪৬ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ হত্যা মামলায় পুরাতন জেএমবির সদস্য হাদিসুর রহমান সাগর নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে আরও নতুন নতুন আসামি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে (জাফা) অদ্যাক্ষরের এক জঙ্গির নাম এসছে। ওই জঙ্গি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। তাকে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফারুকী হত্যায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকলেও অনেকটা অস্পষ্ট ছিল। হত্যার অভিযোগে কিছু আসামি গ্রেফতার হলেও বেশ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে কারা জড়িত কারা জড়িত না এসব নিয়েও অস্পৃষ্টতা ছিল। সিআইডির তদন্তে অস্পষ্টতা দূর হয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া জঙ্গিদের নাম পরিচয় পরিষ্কার হয়েছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, মাওলানা ফারুকে পুরাতন জেএমবির জঙ্গিরা হত্যা করেছিল। তখন জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করার জন্য পুলিশের স্পেশাল কোন ইউনিট ছিল না। জঙ্গি রিলেটেড ঘটনাগুলো ডিবি পুলিশ তদন্ত করত। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি দমনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন হয়। এর আগে ডিবির তদন্তে মাওলানা ফারুকীকে হত্যা জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তখন বেশকিছু পুরতান জেএমবির সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হয়। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে পাঠানো হয়। বর্তমানে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে।