সীতাকুণ্ডে বাস টার্মিনাল না থাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে বিশৃঙ্খলা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গণপরিবহনের জন্য বাস টার্মিনাল না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করছেন চালকরা। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবহন মালিক ও চালকরা বলছেন পৌরসভাকে টোল দিয়েও বাস টার্মিনাল, শৌচাগারসহ কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় এ বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। অন্যদিকে পৌর মেয়র বলছেন, সওজ জায়গা না দেয়ায় স্থায়ী বাস টার্মিনালসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পর্যটন, মহাতীর্থ ও শিল্প অধ্যুষিত উপজেলা সীতাকুণ্ডে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। এ কারণে এখানে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সবচেয়ে বেশি গণপরিবহন চলাচল করে পৌরসদর থেকে। সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড বারৈয়ারহাট এবং সীতাকুণ্ড বড় দারোগারহাট রুটে প্রতিদিন অন্তত ২৫০টি গাড়ি চলাচল করে। পৌরসভা এসব গাড়ির প্রতিটি থেকে নিয়মিত ৪০ টাকা করে টোল আদায় করে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এখানে একটি বাস টার্মিনাল, শৌচাগার, পরিবহন শ্রমিক বিশ্রামাগারসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা দেয়া হয়নি। ফলে এখানে অঘোষিত বাস স্টপেজে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। কখনও কখনও এই বিশৃঙ্খলা থেকে দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনাও ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফাঁদে পড়ে দুর্ঘটনায় এক পরিবহন টোল আদায়কারী নিহতও হন। পরিবহন মালিক সমিতি ও গাড়ি চালকরা এসব বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে লিখিত আবেদনও করেছে। কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনালসহ অন্যান্য সুবিধা তারা পাননি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক সমিতি’র যুগ্ম-সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে আমরা সীতাকুণ্ড থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি পরিচালনা করছি। সে সময় ১৫ টাকা টোল দিয়েছি। পৌরসভা এই টোল বাড়াতে বাড়াতে এখন ৪০ টাকা করেছে। এখন সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম রুটে আমাদের ১৫০টির মতো বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এছাড়া সীতাকুণ্ড-বারৈয়ারহাট, সীতাকুণ্ড বড় দারোগারহাট রুটে আরও শতাধিক গাড়ি মিলিয়ে মোট প্রায় ২৫০টি বাস চলাচল করে।

এত গাড়ি একটি বাজার এলাকায় আসা যাওয়া করলে অবশ্যই টার্মিনাল থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি বারৈয়ারহাট পৌরসভাতেও চলে। সেখানে টোল নেয় ২০ টাকা। অথচ সীতাকুণ্ডে টোল নিচ্ছে ৪০ টাকা! এত টাকা আর কোথাও নেয় না। টোলের বিনিময়ে আমাদের স্থায়ী বাস টার্মিনাল, শৌচাগার, পরিবহন শ্রমিকদের বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের কথা। কিন্তু আমরা বারবার এসব সুবিধা চেয়েও পাইনি। এ কারণে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও এ রকম বিশৃঙ্খলার মাঝে পড়ে নজরুল করিম নামক এক টোল আদায়কারী মারা যান। এছাড়া অনেক যাত্রী এখানে হতাহত হয়েছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় এমপি আলহাজ দিদারুল আলমও বারবার পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে পৌর এলাকায় পরিবহন নিয়ে বিশৃঙ্খলা বিষয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বদিউল আলম বলেন, লোকাল এই গণপরিবহনগুলোর জন্য একটি বাস টার্মিনাল দরকার এ কথা ঠিক। কিন্তু পৌরসভার নিজস্ব কোন জায়গা নেই। তাই আমি উত্তর বাজার সংলগ্ন হাজেরা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সওজের জায়গায় একটি বাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সওজ আমাকে সে জায়গা না দেয়ায় তা আর করা হয়নি। ওই জায়গাটি পেলে সেখানে টার্মিনালসহ তাদের চাহিদামতো অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হতো। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।

শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০

সীতাকুণ্ডে বাস টার্মিনাল না থাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে বিশৃঙ্খলা

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

image

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গণপরিবহনের জন্য বাস টার্মিনাল না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করছেন চালকরা। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবহন মালিক ও চালকরা বলছেন পৌরসভাকে টোল দিয়েও বাস টার্মিনাল, শৌচাগারসহ কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় এ বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। অন্যদিকে পৌর মেয়র বলছেন, সওজ জায়গা না দেয়ায় স্থায়ী বাস টার্মিনালসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পর্যটন, মহাতীর্থ ও শিল্প অধ্যুষিত উপজেলা সীতাকুণ্ডে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। এ কারণে এখানে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সবচেয়ে বেশি গণপরিবহন চলাচল করে পৌরসদর থেকে। সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড বারৈয়ারহাট এবং সীতাকুণ্ড বড় দারোগারহাট রুটে প্রতিদিন অন্তত ২৫০টি গাড়ি চলাচল করে। পৌরসভা এসব গাড়ির প্রতিটি থেকে নিয়মিত ৪০ টাকা করে টোল আদায় করে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এখানে একটি বাস টার্মিনাল, শৌচাগার, পরিবহন শ্রমিক বিশ্রামাগারসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা দেয়া হয়নি। ফলে এখানে অঘোষিত বাস স্টপেজে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। কখনও কখনও এই বিশৃঙ্খলা থেকে দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনাও ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফাঁদে পড়ে দুর্ঘটনায় এক পরিবহন টোল আদায়কারী নিহতও হন। পরিবহন মালিক সমিতি ও গাড়ি চালকরা এসব বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে লিখিত আবেদনও করেছে। কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনালসহ অন্যান্য সুবিধা তারা পাননি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক সমিতি’র যুগ্ম-সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে আমরা সীতাকুণ্ড থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি পরিচালনা করছি। সে সময় ১৫ টাকা টোল দিয়েছি। পৌরসভা এই টোল বাড়াতে বাড়াতে এখন ৪০ টাকা করেছে। এখন সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম রুটে আমাদের ১৫০টির মতো বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এছাড়া সীতাকুণ্ড-বারৈয়ারহাট, সীতাকুণ্ড বড় দারোগারহাট রুটে আরও শতাধিক গাড়ি মিলিয়ে মোট প্রায় ২৫০টি বাস চলাচল করে।

এত গাড়ি একটি বাজার এলাকায় আসা যাওয়া করলে অবশ্যই টার্মিনাল থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি বারৈয়ারহাট পৌরসভাতেও চলে। সেখানে টোল নেয় ২০ টাকা। অথচ সীতাকুণ্ডে টোল নিচ্ছে ৪০ টাকা! এত টাকা আর কোথাও নেয় না। টোলের বিনিময়ে আমাদের স্থায়ী বাস টার্মিনাল, শৌচাগার, পরিবহন শ্রমিকদের বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের কথা। কিন্তু আমরা বারবার এসব সুবিধা চেয়েও পাইনি। এ কারণে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও এ রকম বিশৃঙ্খলার মাঝে পড়ে নজরুল করিম নামক এক টোল আদায়কারী মারা যান। এছাড়া অনেক যাত্রী এখানে হতাহত হয়েছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় এমপি আলহাজ দিদারুল আলমও বারবার পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে পৌর এলাকায় পরিবহন নিয়ে বিশৃঙ্খলা বিষয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বদিউল আলম বলেন, লোকাল এই গণপরিবহনগুলোর জন্য একটি বাস টার্মিনাল দরকার এ কথা ঠিক। কিন্তু পৌরসভার নিজস্ব কোন জায়গা নেই। তাই আমি উত্তর বাজার সংলগ্ন হাজেরা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সওজের জায়গায় একটি বাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সওজ আমাকে সে জায়গা না দেয়ায় তা আর করা হয়নি। ওই জায়গাটি পেলে সেখানে টার্মিনালসহ তাদের চাহিদামতো অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হতো। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।