মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করে তাকে ‘লো-আইকিউ’ বা কম বুদ্ধির লোক এবং কোন মতে সজাগ আছেন বলে বর্ণনা করেছেন। এ সব কথার পাশাপাশি নিউ হ্যাম্পশায়ারের ম্যানচেস্টারে বিমানবন্দরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে গতকাল ট্রাম্প নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষাকারী হিসেবেও তিনি নিজেকে বর্ণনা করেন। বিবিসি।

আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি নিশ্চিত জয়ী হবেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এমনকি এ বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ আছে কিনা বলেও তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি বলেন, আমি ‘লো-আইকিউ’র একজন লোকের কাছে হেরে যাবো, আমি তা চাই না। তিনি জো বাইডেনকে ‘স্লিপি জো’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই লোক জানে না যে সে বেঁচে আছে। ডেমোক্রেট নৈরাজ্যকারীদের কাছ থেকে দেশকে রক্ষারও অঙ্গীকার করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মারা গেছে ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি লোক।

তবু ট্রাম্প বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, আমরা সকলে আমেরিকান জনগণ ও বামপন্থী উশৃঙ্খল জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। এই উশৃঙ্খলদের কাছ থেকে আপনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই চরম নিম্নমানের প্রার্থীকে পরাজিত করতে হবে। হাস্যোজ্জ্বল ও উৎফুল্ল ট্রাম্প (৭৪) বাইডেনকে (৭৭) দূর্বল এবং ডেমোক্রেটদের সবচেয়ে খারাপ প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেন। আগের মতোই ট্রাম্প মিথ্যেভাবে বললেন, বাইডেন ঈশ্বর বিরোধী। যদিও বাইডেন আজীবনের ক্যাথলিক। এ দিকে হাজার হাজার লোক শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। ট্রাম্প জাতিগত সহিংসতার জন্যে নিউজ চ্যানেল সিএনএন ও এমএসএনবিসিকে দায়ি করেন। তিনি বলেন, তারা যে আগুন উস্কে দিচ্ছে তা তারা জানে। ট্রাম্প নিউহ্যাম্পশয়ারে ২০১৬ সালে অল্পভোটে হেরে যান। এ বছর তিনি এখানে জয়ের আশা করছেন। তিনি বলেন, ডেমোক্রেটরা আমেরিকান সীমান্ত মুছে দিতে চায় এবং কর বাড়িয়ে আত্মঘাতী মিশনের পরিকল্পনা করছে। ট্রাম্প বলেন, ভালো হয় আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। না হয় যা কখনও দেখেননি সে রকম মহামন্দা প্রত্যক্ষ করবেন। এদিকে হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে দলীয় মনোনয়নের আয়োজন করায় শুক্রবার বাইডেন ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তিনি ট্ইুটারে বলেন, মি. প্রেসিডেন্ট আমেরিকানরা তাদের বিয়ের আয়োজন বাতিল করছে ও পরিবার ছাড়াই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ সারছে। আমেরিকানরা যাতে মারা না যায় সে জন্যে তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করছে। কিন্তু আপনি উদাহরণ সৃষ্টি না করে সাউথ লনে ব্যাপক আয়োজন করেছেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বটাকে আপনি কখন গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন?

এদিকে আগামী মাসে প্রথম নির্বাচনী বিতর্কের আগে জো বাইডেনকে ড্রাগ টেস্টের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৩ নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন দু’জন। ওয়াশিংটন এগজামিনারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প একথা বলেন। তিনি সাম্প্রতিক বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্সের উন্নতি লক্ষ্য করছেন। সেজন্যই ট্রাম্প আহ্বান করেন তাদের দু’জনেরই ড্রাগ টেস্ট করানোর। বিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

বাইডেনের সঙ্গে ৩ নভেম্বর নির্বাচনের আগে তিনটি বিতর্ক হবে ট্রাম্পের। নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমনিতেই বিতর্কে ভালো।’ ২০১৬’র নির্বাচনের সময় সর্বশেষ টিভি বিতর্কের আগে হিলারিকেও ড্রাগ টেস্টের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, হিলারিও ‘প্রত্যাশার চেয়ে ভালো’ বিতর্ক করছে। তিনি কোথাও থেকে ‘অতিরিক্ত শক্তি পাচ্ছেন’। বিবিসি জানিয়েছে ট্রাম্প বুধবার বলেন, সর্বশেষ বিতর্কে বাইডেনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে প্রার্থিতা যাচাইয়ে যে ১১টি বিতর্ক হয়েছিল সেখানে বাইডেনকে তেমন সুসংগঠিত মনে হয়নি। কিন্তু ১৫ মার্চ বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে বাইডেনের বিতর্ক দর্শককে নিবিষ্ট হয়ে শুনতে দেখা গেছে। ট্রাম্প বলেন, এত অপটু একজন বক্তা বাইডেন কীভাবে যে বার্নির বিরুদ্ধে অমন জ্বলে উঠলেন আমি বুঝতে পারি না। আমি বলছি না, তিনি উইনস্টন চার্চিল হয়ে উঠেছেন, কারণ তিনি তা নন। এটা সাধারণ, বিরক্তিকর বিতর্কই ছিল, বলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, বিশেষ কিছু না ঘটলেও আমরা ড্রাগ টেস্টের কথা বলছি। কারণ এছাড়া তো কোন উপায় নেই। কেননা আপনি তা (ড্রাগ) করতে পারেন না। তিনি বলেন, বিতর্কটা পুরস্কারের জন্যই লড়া। গ্ল্যাডিয়েটরদের মতোই। শুধু আমরা আমাদের মাথা ও মুখ ব্যবহার করব। দাঁড়িয়ে। আমি চাই সবাই দাঁড়িয়ে থাকুক। তারা চায় বসে থাকতে। তিনটি বিতর্কের মধ্যে ওহাইয়োর ক্লিভল্যান্ডে ২৯ সেপ্টেম্বর একটা, তারপর ফ্লোরিডার মায়ামিতে ১৫ অক্টোবর এবং টেনেসির ন্যাশভিলে ২২ অক্টোবর।