শামুক ভাঙায় লাভবান চিংড়ি খামারি, ঠকছেন নারীরা

ঝুঁকিতে পরিবেশ-প্রকৃতি

বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ও ফকিরহাট উপজেলার গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র নারীরা আয়-রোজগারের জন্য কোন কর্ম না পেয়ে বিকল্প অবলম্বন হিসেবে বিলের শামুক ভেঙে সংসার চালায়। এলাকার চিংড়ি চাষিরা চিংড়ির জন্য বাজারের মূল্যবান খাবার ক্রয় না করে কম-খরচে বিলের শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ির খাবার দিচ্ছে। দরিদ্র নারীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন শত শত বস্তা শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ি খামারিদের দিচ্ছে।

সস্তায় এ খাবার দিয়ে গুটি কয়েক চিংড়ি খামারি লাভবান হলেও বৃহত্তরভাবে কৃষি-জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে এবং শামুক নিধন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য থাকছে না। দরিদ্র নারীরাও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকছে গত ২৫ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিতলমারী উপজেলার দুর্গাপুর, খড়মখালি, কৃষ্ণনগর সাবোখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে নারী শ্রমিকরা গ্রুপ করে শামুকের খোলস তুলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজ করছে নারীরা।

চিতলমারী উপজেলার গরীবপুর গ্রামের ভ্যান চালক বিধান রায়ের স্ত্রী বিথিকা রানী রায় শামুক ভেঙ্গে আয় করার বিষয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন,স্বামী ভ্যান চালিয়ে যে আয় করেন তা থেকে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচসহ সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

তাই এখানে দলের সাথে শামুক ভেঙ্গে মহাজনের কাছ থেকে ১০০-১২০ টাকা পাই। তা থেকে সংসারের চাহিদা কিছুটা হলেও লাগব হয়। এ দলের নারী শ্রমিক উন্নতি রানী হীরা বলেন, আমরা ৫-৬ জনের গ্রুপে দিনে ১২-১৪ বস্তা শামুকের খোলস খুলি। বস্তা প্রতি মহাজন (চিংড়ি খামারি) ৩৫ টাকা করে দেয়। যা এক সঙ্গে করে আমরা ভাগ করে নেই। আমার স্বামী ভ্যান চালক, তার একার আয়ে ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ পরিবারে চাহিদা মেটাতে পারে না। এরপর চলছে করোনার দুর্যোগ ভ্যানে যাত্রী কম হয়। ফলে ভাড়াও কম পায় করোনার শুরুতে মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়ে ছিলাম ত্রাণ হিসেবে। আর কোন সহযোগিতা আমরা পাই নাই। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শামুক ভেঙ্গে কিছু অর্থ আয় করি। অনুরুপ কথা বলেন খড়মখালি গ্রামের কৃষক অমৃত পোদ্দারের স্ত্রী সুলতা রানী পোদ্দার, কৃষ্ণনগর গ্রামের দিনমজুর উজ্জল গাইনের স্ত্রী মিনতি রানী গাইনসহ অন্য নারী শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে শামুক ভাঙ্গা বিষয়ে বলেন, পেটের দায়ে কাজ করি। শামুক ভাঙ্গতে গিয়ে দুই হাত ক্ষত হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়ি।

চিংড়ি খামারি মালিক ওই এলাকার সুজিত সিংহ, অসিম বিশ^াস ও সুমন রানা এ প্রতিবেদক কে বলেন, এখন আর তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই গোপালগঞ্জের কোটাপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০-৬০ কেজি করে প্রতি বস্তা শামুক ৭-৮শ টাকা দরে ক্রয় করতে হয়। আর এ শামুক এলাকায় নিয়ে এসে স্থানীয় নারী শ্রমিকরা প্রতি বস্তা ৩৫ টাকা দরে খোলস খুলে দেয়। বাগেরহাটের কৃষি অধিদপ্তরের উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সিকদার সরোয়ার আলম বলেন, শামুক কৃষি জমির ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণসহ অনু খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

এছাড়া শামুক পানি শোধনের কাজকরা সহ জলজ প্রাণীর একে অপরের পরিপূরক হিসেবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরিকল্পিত চিংড়ি খামারিদের কারণে আজ এ শামুক বিলুপ্তি পথে।

image

বাগেরহাট : সংসার চালাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শামুক ভাঙছেন নারীরা -সংবাদ

আরও খবর
দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়
আ’লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ
করোনায় একদিনে মৃত্যু ৪ আক্রান্ত ৬৭
সারাদেশে লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধে ঐক্যের ডাক
সাংবাদিক-সাহিত্যিক রাহাত খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি কয়েক ঘণ্টায় আটক
শিক্ষার মানোন্নয়নে সুলতান মোল্লা স্কুলে কাজ করবে গুড নেইবারস
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা তাইন্দংয়ে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা ভগবান টিলা
রাতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে : নৌমন্ত্রী
সিলেটে ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের আড়ালে অবৈধ রক্ত ব্যবসা
ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ : বিয়াম স্কুলের ২ শিক্ষক বরখাস্ত তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্নীতির দায়ে প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ সভাপতি পলাতক আসামি

রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭

শামুক ভাঙায় লাভবান চিংড়ি খামারি, ঠকছেন নারীরা

ঝুঁকিতে পরিবেশ-প্রকৃতি

আজাদুল হক, বাগেরহাট

image

বাগেরহাট : সংসার চালাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শামুক ভাঙছেন নারীরা -সংবাদ

বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ও ফকিরহাট উপজেলার গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র নারীরা আয়-রোজগারের জন্য কোন কর্ম না পেয়ে বিকল্প অবলম্বন হিসেবে বিলের শামুক ভেঙে সংসার চালায়। এলাকার চিংড়ি চাষিরা চিংড়ির জন্য বাজারের মূল্যবান খাবার ক্রয় না করে কম-খরচে বিলের শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ির খাবার দিচ্ছে। দরিদ্র নারীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন শত শত বস্তা শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ি খামারিদের দিচ্ছে।

সস্তায় এ খাবার দিয়ে গুটি কয়েক চিংড়ি খামারি লাভবান হলেও বৃহত্তরভাবে কৃষি-জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে এবং শামুক নিধন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য থাকছে না। দরিদ্র নারীরাও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকছে গত ২৫ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিতলমারী উপজেলার দুর্গাপুর, খড়মখালি, কৃষ্ণনগর সাবোখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে নারী শ্রমিকরা গ্রুপ করে শামুকের খোলস তুলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজ করছে নারীরা।

চিতলমারী উপজেলার গরীবপুর গ্রামের ভ্যান চালক বিধান রায়ের স্ত্রী বিথিকা রানী রায় শামুক ভেঙ্গে আয় করার বিষয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন,স্বামী ভ্যান চালিয়ে যে আয় করেন তা থেকে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচসহ সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

তাই এখানে দলের সাথে শামুক ভেঙ্গে মহাজনের কাছ থেকে ১০০-১২০ টাকা পাই। তা থেকে সংসারের চাহিদা কিছুটা হলেও লাগব হয়। এ দলের নারী শ্রমিক উন্নতি রানী হীরা বলেন, আমরা ৫-৬ জনের গ্রুপে দিনে ১২-১৪ বস্তা শামুকের খোলস খুলি। বস্তা প্রতি মহাজন (চিংড়ি খামারি) ৩৫ টাকা করে দেয়। যা এক সঙ্গে করে আমরা ভাগ করে নেই। আমার স্বামী ভ্যান চালক, তার একার আয়ে ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ পরিবারে চাহিদা মেটাতে পারে না। এরপর চলছে করোনার দুর্যোগ ভ্যানে যাত্রী কম হয়। ফলে ভাড়াও কম পায় করোনার শুরুতে মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়ে ছিলাম ত্রাণ হিসেবে। আর কোন সহযোগিতা আমরা পাই নাই। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শামুক ভেঙ্গে কিছু অর্থ আয় করি। অনুরুপ কথা বলেন খড়মখালি গ্রামের কৃষক অমৃত পোদ্দারের স্ত্রী সুলতা রানী পোদ্দার, কৃষ্ণনগর গ্রামের দিনমজুর উজ্জল গাইনের স্ত্রী মিনতি রানী গাইনসহ অন্য নারী শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে শামুক ভাঙ্গা বিষয়ে বলেন, পেটের দায়ে কাজ করি। শামুক ভাঙ্গতে গিয়ে দুই হাত ক্ষত হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়ি।

চিংড়ি খামারি মালিক ওই এলাকার সুজিত সিংহ, অসিম বিশ^াস ও সুমন রানা এ প্রতিবেদক কে বলেন, এখন আর তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই গোপালগঞ্জের কোটাপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০-৬০ কেজি করে প্রতি বস্তা শামুক ৭-৮শ টাকা দরে ক্রয় করতে হয়। আর এ শামুক এলাকায় নিয়ে এসে স্থানীয় নারী শ্রমিকরা প্রতি বস্তা ৩৫ টাকা দরে খোলস খুলে দেয়। বাগেরহাটের কৃষি অধিদপ্তরের উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সিকদার সরোয়ার আলম বলেন, শামুক কৃষি জমির ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণসহ অনু খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

এছাড়া শামুক পানি শোধনের কাজকরা সহ জলজ প্রাণীর একে অপরের পরিপূরক হিসেবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরিকল্পিত চিংড়ি খামারিদের কারণে আজ এ শামুক বিলুপ্তি পথে।