তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুই নন বাঙালির প্রথম রাষ্ট্রের স্রষ্টা

মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এক কলঙ্কিত অধ্যায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সঙ্গে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকটাত্মীয়। এ নৃশংস ঘটনা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মুজিব ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মূলত ১৯৩৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ গঠন করার প্রস্তাব দিয়ে। তার বাবা সে সময় ছিলেন মাদারীপুর মহকুমার সেরেস্তাদার ছিলেন। ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে মুজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর ওঠে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। জ্বর নিয়েই পরীক্ষা দেয়ার ফল প্রত্যাশা মাফিক হলো না। তখনই তিনি রাজনীতিতে ঘোরতরভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তার নিজের কথায়- সভা করি, বক্তৃতা করি, খেলাধুলা করি না। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে। নতুবা মুসলিমদের বাঁচার উপায় নাই।

ম্যাট্রিক পাস করেই মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। তার নেতৃত্বে ইসলামিয়া কলেজ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে মুজিব বরাবরই গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে, ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে কারাবরণ করতে হয়েছিল। তার সঙ্গে আর যারা ছিলেন, তারা সবাই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ন্যায়ের পক্ষে ক্ষুদ্র আপসটুকু করেননি। ফরিদপুরের দিনমজুর ‘দাওয়ালদের আন্দোলনে যেমন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি এদেশের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলনেও তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা এবং বাঙালির জয়গান করেছেন।

বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন গুদামে খাদ্য নেই, মাঠে ফসল নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ নেই। তিনি এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন।

সৌদির বাদশা ফয়সাল বলেন, ‘সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু জবাব দেন, ‘এ শর্ত বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া আপনাদের দেশের নামও তো ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরব’ নয়।

জাতির পিতার প্রত্যুৎপন্নমতিত্বও ছিল বিস্ময়কর। নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুব গাওয়ান যখন বললেন, ‘অবিভক্ত পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ, কেন আপনি দেশটাকে ভেঙে দিতে গেলেন।’ উত্তরে শেখ মুজিব বলেন, ‘শুনুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনার কথা হয়তো ঠিক অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিল। তার চেয়েও শক্তিশালী হয়তো হতো অবিভক্ত ভারত। কিন্তু সে সবেরও চেয়েও শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া এবং মহাশক্তিশালী হতো একজোট বিশ্ব। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাস্তবে কি এগুলো সম্ভব হয়েছে, সব কিছু চাইলেই কি পাওয়া যায়।’

বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬ দফার ভিত্তিতে স্বশাসনের পক্ষে দাড়াতে ঘোষণা দিলেন: সামরিক সৈরতন্ত্র হঠানোর কথা বললেন, গণতন্ত্রের ওপর দাঁড়াতে বললেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনকে গণরায়ে রূপান্তর করলেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতি স্বত্বাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু তাই আধুনিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক এবং বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা।

ফরাসি লেখক মালরোর জীবনের শেষ রচনায় দেখিয়েছেন, একজন শিল্পিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তিনি পায়ের আঙ্গুলগুলো দিয়ে কয়েকটি ইঁদুরের ছবি আকেন। আর আশ্চর্যের বিষয় ইঁদুরগুলো অলৌকিকভাবে প্রাণ পেয়ে গেল এবং ফাঁসির রজ্জু কেটে শিল্পীকে মুক্তি করে দিল। বঙ্গবন্ধুর পায়ের আঙ্গুলগুলো যদি মাটি স্পর্শ করত তাহলে কি হতো- বঙ্গবন্ধু পায়ের আঙ্গুল দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রই আঁকতেন। যে মানচিত্র জুড়ে থাকত বঙ্গবন্ধুর বিশাল শরীর। কবি রফিক আজাদের ভায়ায়, ‘স্বদেশের মানচিত্রজুড়ে পড়ে আছে বিশাল শরীর।’

কবি বাবলা জোয়ার্দারের ভাষায়-

‘সে ছিল দীঘল পুরুষ-

হাত বাড়ালেই ধরে ফেলতো

পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল,

সাড়ে সাত কোটি হ্দয়

ধরে ফেলতো বৈশাখী মেঘ অনায়াসে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্নদাশংকর রায় লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান সাধারণ রাজনীতিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতির জনক। পদত্যাগ নয়, দেহত্যাগই জাতির জনকের অন্তিম কর্তব্য।’ কিন্তু দেশ এখনও কলঙ্কমুক্ত নয়। এখনও সাম্প্রদায়িকতার ছুরিকাবিদ্ধ জাতির আত্মার রক্তরক্ষণ হচ্ছে, যুদ্ধ এখনও চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন শুধু তখনই নিরাপদ হবে যখন বাংলাদেশের কপাল থেকে যুদ্ধপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা, সামরিক শাসন, সংবিধান থেকে চার মুলনীতির বির্সজন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিবিধ কলঙ্কের ছাপ মোছা হবে, অপসৃত হবে বৈষম্যের পাহাড়।

[লেখক : উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা]

রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭

তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুই নন বাঙালির প্রথম রাষ্ট্রের স্রষ্টা

মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এক কলঙ্কিত অধ্যায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সঙ্গে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকটাত্মীয়। এ নৃশংস ঘটনা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মুজিব ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মূলত ১৯৩৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ গঠন করার প্রস্তাব দিয়ে। তার বাবা সে সময় ছিলেন মাদারীপুর মহকুমার সেরেস্তাদার ছিলেন। ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে মুজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর ওঠে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। জ্বর নিয়েই পরীক্ষা দেয়ার ফল প্রত্যাশা মাফিক হলো না। তখনই তিনি রাজনীতিতে ঘোরতরভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তার নিজের কথায়- সভা করি, বক্তৃতা করি, খেলাধুলা করি না। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে। নতুবা মুসলিমদের বাঁচার উপায় নাই।

ম্যাট্রিক পাস করেই মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। তার নেতৃত্বে ইসলামিয়া কলেজ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে মুজিব বরাবরই গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে, ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে কারাবরণ করতে হয়েছিল। তার সঙ্গে আর যারা ছিলেন, তারা সবাই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ন্যায়ের পক্ষে ক্ষুদ্র আপসটুকু করেননি। ফরিদপুরের দিনমজুর ‘দাওয়ালদের আন্দোলনে যেমন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি এদেশের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলনেও তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা এবং বাঙালির জয়গান করেছেন।

বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন গুদামে খাদ্য নেই, মাঠে ফসল নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ নেই। তিনি এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন।

সৌদির বাদশা ফয়সাল বলেন, ‘সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু জবাব দেন, ‘এ শর্ত বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া আপনাদের দেশের নামও তো ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরব’ নয়।

জাতির পিতার প্রত্যুৎপন্নমতিত্বও ছিল বিস্ময়কর। নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুব গাওয়ান যখন বললেন, ‘অবিভক্ত পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ, কেন আপনি দেশটাকে ভেঙে দিতে গেলেন।’ উত্তরে শেখ মুজিব বলেন, ‘শুনুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনার কথা হয়তো ঠিক অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিল। তার চেয়েও শক্তিশালী হয়তো হতো অবিভক্ত ভারত। কিন্তু সে সবেরও চেয়েও শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া এবং মহাশক্তিশালী হতো একজোট বিশ্ব। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাস্তবে কি এগুলো সম্ভব হয়েছে, সব কিছু চাইলেই কি পাওয়া যায়।’

বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬ দফার ভিত্তিতে স্বশাসনের পক্ষে দাড়াতে ঘোষণা দিলেন: সামরিক সৈরতন্ত্র হঠানোর কথা বললেন, গণতন্ত্রের ওপর দাঁড়াতে বললেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনকে গণরায়ে রূপান্তর করলেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতি স্বত্বাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু তাই আধুনিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক এবং বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা।

ফরাসি লেখক মালরোর জীবনের শেষ রচনায় দেখিয়েছেন, একজন শিল্পিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তিনি পায়ের আঙ্গুলগুলো দিয়ে কয়েকটি ইঁদুরের ছবি আকেন। আর আশ্চর্যের বিষয় ইঁদুরগুলো অলৌকিকভাবে প্রাণ পেয়ে গেল এবং ফাঁসির রজ্জু কেটে শিল্পীকে মুক্তি করে দিল। বঙ্গবন্ধুর পায়ের আঙ্গুলগুলো যদি মাটি স্পর্শ করত তাহলে কি হতো- বঙ্গবন্ধু পায়ের আঙ্গুল দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রই আঁকতেন। যে মানচিত্র জুড়ে থাকত বঙ্গবন্ধুর বিশাল শরীর। কবি রফিক আজাদের ভায়ায়, ‘স্বদেশের মানচিত্রজুড়ে পড়ে আছে বিশাল শরীর।’

কবি বাবলা জোয়ার্দারের ভাষায়-

‘সে ছিল দীঘল পুরুষ-

হাত বাড়ালেই ধরে ফেলতো

পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল,

সাড়ে সাত কোটি হ্দয়

ধরে ফেলতো বৈশাখী মেঘ অনায়াসে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্নদাশংকর রায় লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান সাধারণ রাজনীতিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতির জনক। পদত্যাগ নয়, দেহত্যাগই জাতির জনকের অন্তিম কর্তব্য।’ কিন্তু দেশ এখনও কলঙ্কমুক্ত নয়। এখনও সাম্প্রদায়িকতার ছুরিকাবিদ্ধ জাতির আত্মার রক্তরক্ষণ হচ্ছে, যুদ্ধ এখনও চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন শুধু তখনই নিরাপদ হবে যখন বাংলাদেশের কপাল থেকে যুদ্ধপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা, সামরিক শাসন, সংবিধান থেকে চার মুলনীতির বির্সজন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিবিধ কলঙ্কের ছাপ মোছা হবে, অপসৃত হবে বৈষম্যের পাহাড়।

[লেখক : উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা]