শেরপুরে এলজিইডি’র প্রকল্প কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ!

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শেষ না করেই কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া রয়েছে প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করা, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর আওতায় টেন্ডারের মাধ্যমে ৩৩টি প্রকল্পে ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৪৪ টাকা এবং পিআইসির মাধ্যমে ৬টি প্রকল্পে ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়া উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১৬টি প্যাকেজে পৌনে দুই কোটি টাকার ৭৮টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল রাস্তা সোলিং, গাইডওয়াল নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ ও ড্রেন নির্মাণ। প্রকল্পের কাজগুলো গত ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করে চূড়ান্ত বিল উত্তোলনের কথা থাকলেও বেশকিছু প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের ১৪নং প্যাকেজের ৩নং প্রকল্পের গাড়ীদহ ইউনিয়নের বনমরিচা খালের কালভার্ট নির্মাণ (বাগড়া কলোনী বটতলা হতে উত্তরে) প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের কোন কাজই শুরু হয়নি। অথচ কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

১৫নং প্যাকেজের ২নং প্রকল্পের শাহবন্দেগীর মাজার হইতে মোজাহার আলী কোল্ডস্টোরেজ ব্রিজ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ কাজের অর্ধেক ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পুরো বিলই উত্তোলন করা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণ কাজে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান লিটন স্থানীয়দের নিকট থেকে চাঁদাও নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই ইউপি সদস্যের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

একই প্যাকেজের ৪নং প্রকল্পের মালেক সরকারের বাড়ি পাকার মাথা হতে নুরুল আমীনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও ইটের সোলিং প্রকল্পে নামমাত্র নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে আংশিক কাজ করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

১৪নং প্যাকেজের ৬নং প্রকল্প শাহবন্দেগী ইউনিয়নের হাসপাতাল রোড পলিটেকনিক কলেজ হইতে পল্লীবাস হামিদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সোলিং এবং হামিদের বাড়ির সামনে ৩৫ ফুট গাইডওয়াল নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও আংশিক কাজ করেই পুরো বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে কালভার্ট নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) শেরপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাজ না হলেও বিল ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের সমস্ত টাকাই ফেরত যেত।

একই দফতরের হিসাবরক্ষক এসএম আকবর হোসেন জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের কাজ ১০০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বিলও দেয়া হয়েছে। তবেকিছু কাজ যেগুলো ঠিকাদার করতে পারেনি সেগুলোর বিডি (জামানত) জমা রেখে বিল দেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর উপজেলা প্রকৌশলী নুর মোহাম্মাদের অফিসে গিয়ে এবং তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ জানান, যেসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর বিডি জমা রেখে বিল দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কাজে অন্য কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।

মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১৫ ভাদ্র ১৪২৭

শেরপুরে এলজিইডি’র প্রকল্প কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ!

প্রতিনিধি, শেরপুর (বগুড়া)

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শেষ না করেই কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া রয়েছে প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করা, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর আওতায় টেন্ডারের মাধ্যমে ৩৩টি প্রকল্পে ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৪৪ টাকা এবং পিআইসির মাধ্যমে ৬টি প্রকল্পে ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়া উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১৬টি প্যাকেজে পৌনে দুই কোটি টাকার ৭৮টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল রাস্তা সোলিং, গাইডওয়াল নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ ও ড্রেন নির্মাণ। প্রকল্পের কাজগুলো গত ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করে চূড়ান্ত বিল উত্তোলনের কথা থাকলেও বেশকিছু প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের ১৪নং প্যাকেজের ৩নং প্রকল্পের গাড়ীদহ ইউনিয়নের বনমরিচা খালের কালভার্ট নির্মাণ (বাগড়া কলোনী বটতলা হতে উত্তরে) প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের কোন কাজই শুরু হয়নি। অথচ কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

১৫নং প্যাকেজের ২নং প্রকল্পের শাহবন্দেগীর মাজার হইতে মোজাহার আলী কোল্ডস্টোরেজ ব্রিজ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ কাজের অর্ধেক ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পুরো বিলই উত্তোলন করা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণ কাজে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান লিটন স্থানীয়দের নিকট থেকে চাঁদাও নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই ইউপি সদস্যের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

একই প্যাকেজের ৪নং প্রকল্পের মালেক সরকারের বাড়ি পাকার মাথা হতে নুরুল আমীনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও ইটের সোলিং প্রকল্পে নামমাত্র নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে আংশিক কাজ করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

১৪নং প্যাকেজের ৬নং প্রকল্প শাহবন্দেগী ইউনিয়নের হাসপাতাল রোড পলিটেকনিক কলেজ হইতে পল্লীবাস হামিদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সোলিং এবং হামিদের বাড়ির সামনে ৩৫ ফুট গাইডওয়াল নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও আংশিক কাজ করেই পুরো বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে কালভার্ট নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) শেরপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাজ না হলেও বিল ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের সমস্ত টাকাই ফেরত যেত।

একই দফতরের হিসাবরক্ষক এসএম আকবর হোসেন জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের কাজ ১০০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বিলও দেয়া হয়েছে। তবেকিছু কাজ যেগুলো ঠিকাদার করতে পারেনি সেগুলোর বিডি (জামানত) জমা রেখে বিল দেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর উপজেলা প্রকৌশলী নুর মোহাম্মাদের অফিসে গিয়ে এবং তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ জানান, যেসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর বিডি জমা রেখে বিল দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কাজে অন্য কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।