বরুড়ায় আউশের বাম্পার ফলন-দামে খুশি কৃষক

কুমিল্লা জেলার শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় বৈশ্বিক মহামারী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও এ বছর কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯০ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। বোরোতে লাভবান হওয়ায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূলে থাকায় আর অন্য কোন সময়ের চেয়ে কৃষকদের মাঝে আউশের প্রণোদনা তথা সার, বীজ সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে এ বছর কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা আউশের আবাদ করেছেন বলে এমন অভিমত কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কৃষকদের। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এ উপজেলায় ১২৭০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। আবাদ হয়েছে প্রায় ১৩৩৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে ১১৭৭০ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাত রয়েছে ১৭২০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৯০ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌর শহরের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ষড় ঋতুর পালাচক্রে শরৎ ঋতুর প্রথমার্ধে লঘু চাপের প্রভাবে সংগঠিত হওয়া কখনও হাল্কা বৃষ্টি আবার কখনও ভারি বৃষ্টিপাত আর রোদ বৃষ্টির লুকোচুরির খেলায় প্রকৃতির এমন বদমেজাজি হেয়ালিপনা পরিবেশে এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কৃষকেরা পরম যতেœ তাদের জমিতে আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের আউশ ধান কর্তন, মাড়াই, হাটবাজারে বিক্রি এবং একই সময়ে আমন আবাদের কাজে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কৃষকদের সাথে আলাপকালে শিলমুড়ী (উঃ) ইউনিয়নের যোগীপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল হক (৬৫) জানান, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রিধান-২৮, ৪৮ এবং ৪৯ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। আর স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন মণ প্রতি প্রায় ৯শত টাকা। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন। শাকপুর ইউনিয়নের কৈয়নী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী (৭০) জানান, তিনি ৭৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮, ৫৮ এবং বি.আর-২০ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি গত বছরের আউশ আবাদের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। বাজারে বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন। এতে তিনি মহাখুশি। গালিমপুর ইউনিয়নের ধনিশ্বর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আমান উল্লাহ জানান, তিনি তার ৫০ শতক জমিতে বি.আর-২০ জাতের ধান এবং ৪৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। ঝলম ইউনিয়নের সিংগুর গ্রামের কৃষক নিতাই দেবনাথ (৬৫) জানান, তিনি তার ৩০ শতক জমিতে ব্রিধান-২০ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় আড়াই মণ। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন। আগানগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন জানান, তিনি তার ৮৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২০ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। বাজারে বিক্রি করেও তিনি লাভবান হয়েছেন। পৌর শহরের দেওড়া গ্রামের কৃষক মো. খালেক জানান, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাত হীরা-২ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গন্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৭ মণ। বাজারে মণ প্রতি তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ৮শত টাকা। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন।

অপরদিকে উপজেলার বরুড়া সদর বাজার, সুলতানপুর বাজার, ঝলম বাজার, রামমোহন বাজার, আমড়াতলী বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা প্রকারভেদে আউশের বিভিন্ন জাতের ধান ৮৮০ টাকা থেকে প্রায় ৯শত টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর এ উপজেলায় বোরোতে কৃষকেরা বাজারে ধান বিক্রিতে লাভবান হয়েছেন। যার ফলে কৃষকেরা আউশ আবাদে অধিকতর নজর দিয়েছেন। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা আউশ আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। বাজারে ধান বিক্রিতেও তারা লাভবান হচ্ছেন।

image
আরও খবর
নাব্যতা সংকট ডুবোচরে অধিকাংশ ফেরি বন্ধ
মুরাদনগরে মেম্বারের বাড়ি থেকে বিপুল কাঠ উদ্ধার
বদরগঞ্জে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
পাবনা-৪ আসনে নৌকা পেলেন নুরুজ্জামান
কাশিয়ানীতে বালু ব্যবসায়ীকে জরিমানা
কলমাকান্দায় ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা : মামলা
৫ জেলায় নতুন শনাক্ত ৬২
বনে সিসা কারখানা : মালিকের জেল
তালায় গাছ চুরির অভিযোগ
শেরপুরে এলজিইডি’র প্রকল্প কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ!
প্রস্তাবিত ‘খুলনা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়’র জমি অধিগ্রহণে উচ্ছেদ আতঙ্কে ৪ গ্রাম
হামলায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা, অবরুদ্ধ পরিবার
পাহাড়পুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন

মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১৫ ভাদ্র ১৪২৭

বরুড়ায় আউশের বাম্পার ফলন-দামে খুশি কৃষক

প্রতিনিধি,বরুড়া (কুমিল্লা)

image

কুমিল্লা জেলার শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় বৈশ্বিক মহামারী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও এ বছর কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯০ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। বোরোতে লাভবান হওয়ায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূলে থাকায় আর অন্য কোন সময়ের চেয়ে কৃষকদের মাঝে আউশের প্রণোদনা তথা সার, বীজ সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে এ বছর কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৯০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা আউশের আবাদ করেছেন বলে এমন অভিমত কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কৃষকদের। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এ উপজেলায় ১২৭০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। আবাদ হয়েছে প্রায় ১৩৩৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে ১১৭৭০ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাত রয়েছে ১৭২০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৯০ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌর শহরের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ষড় ঋতুর পালাচক্রে শরৎ ঋতুর প্রথমার্ধে লঘু চাপের প্রভাবে সংগঠিত হওয়া কখনও হাল্কা বৃষ্টি আবার কখনও ভারি বৃষ্টিপাত আর রোদ বৃষ্টির লুকোচুরির খেলায় প্রকৃতির এমন বদমেজাজি হেয়ালিপনা পরিবেশে এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কৃষকেরা পরম যতেœ তাদের জমিতে আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের আউশ ধান কর্তন, মাড়াই, হাটবাজারে বিক্রি এবং একই সময়ে আমন আবাদের কাজে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কৃষকদের সাথে আলাপকালে শিলমুড়ী (উঃ) ইউনিয়নের যোগীপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল হক (৬৫) জানান, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রিধান-২৮, ৪৮ এবং ৪৯ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। আর স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন মণ প্রতি প্রায় ৯শত টাকা। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন। শাকপুর ইউনিয়নের কৈয়নী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী (৭০) জানান, তিনি ৭৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮, ৫৮ এবং বি.আর-২০ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি গত বছরের আউশ আবাদের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। বাজারে বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন। এতে তিনি মহাখুশি। গালিমপুর ইউনিয়নের ধনিশ্বর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আমান উল্লাহ জানান, তিনি তার ৫০ শতক জমিতে বি.আর-২০ জাতের ধান এবং ৪৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। ঝলম ইউনিয়নের সিংগুর গ্রামের কৃষক নিতাই দেবনাথ (৬৫) জানান, তিনি তার ৩০ শতক জমিতে ব্রিধান-২০ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় আড়াই মণ। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন। আগানগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন জানান, তিনি তার ৮৮ শতক জমিতে ব্রিধান-২০ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গণ্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৩ মণ। বাজারে বিক্রি করেও তিনি লাভবান হয়েছেন। পৌর শহরের দেওড়া গ্রামের কৃষক মো. খালেক জানান, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাত হীরা-২ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি গন্ডা প্রতি (৮ শতক) ফলন পেয়েছেন প্রায় ৭ মণ। বাজারে মণ প্রতি তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ৮শত টাকা। এতে তিনি লাভবান হয়েছেন।

অপরদিকে উপজেলার বরুড়া সদর বাজার, সুলতানপুর বাজার, ঝলম বাজার, রামমোহন বাজার, আমড়াতলী বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা প্রকারভেদে আউশের বিভিন্ন জাতের ধান ৮৮০ টাকা থেকে প্রায় ৯শত টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর এ উপজেলায় বোরোতে কৃষকেরা বাজারে ধান বিক্রিতে লাভবান হয়েছেন। যার ফলে কৃষকেরা আউশ আবাদে অধিকতর নজর দিয়েছেন। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা আউশ আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। বাজারে ধান বিক্রিতেও তারা লাভবান হচ্ছেন।