ওমর সানীর সাফল্যের তিন দশক

সিনেমায় অভিনয়ে সাফল্যের প্রায় তিন দশক সময় পার করছেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানী। দর্শকের হৃদয়ের ভালোবাসা নিয়ে এখনও অভিনয়ে নিয়মিত তিনি। নায়ক হিসেবে সাফল্যের পর খল নায়ক হিসেবে অভিনয় করেও সাফর‌্য পেয়েছেন তিনি। ওমর সানীর ভাষ্যমতে একই সময়ে তিনি শেখ নজরুল ইসলামের ‘চাঁদের আলো’, ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘অগ্নিপথ’ এবং আফতাব খান টুলুর ‘আমার জান’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। কিন্তু ‘চাঁদের আলো’ সিনেমাই আগে মুক্তি পায়। সিনেমাটি সেই সময় দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ সিনেমার একটি গান ‘তুমি আমার চাঁদ আমি চাঁদেরই আলো’ এখনো অনেক জনপ্রিয়। অবশ্য ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের আগেই দারাশিকো পরিচালিত ‘সুজন বাঁশি’ সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল ওমর সানী’র। কিন্তু সিনেমাটি নির্মিত হয়নি বলে দারাশিকোই ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন ওমর সানীকে। অভিনয় জীবনের প্রায় তিন দশকের পথচলা এবং নিজের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘অবশ্যই আমি শুরুতেই মহান আল্লাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাবা মায়ের কাছে যাদের কারণে এই পৃথিবীতে আসা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার ওস্তাদ শেখ নজরুল ইসলামের কাছে, শ্রদ্ধেয় দারাশিকোর কাছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন যেমন শ্রদ্ধেয় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এজে মিন্টু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা রাজীব, নূর হোসেন বলাই, উত্তম আকাশসহ আরও বেশ কয়েকজন। আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ আমাদের নন্দিত নায়িকা শাবানা আপার কাছেও। অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড়প্রাপ্তি দর্শকের ভালোবাসা, জীবন চলার পথে আমি এখনও দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি। তবে অপ্রাপ্তি হলো মনের গহীন কোনে কষ্টতো আসলে রয়েই গেছে। আমি যেই সময়টাতে বেশকিছু ভালো ভালো গল্পের চমৎকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেই সময়টাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। যদি তা না হতো তাহলে আমার বিশ^াস ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আমারও প্রাপ্তি হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। আবার আমি যখন খলনায়ক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। তখন খলনায়কের জন্য ক্যাটেগরি ছিল না জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। কিন্তু আমার মেয়ের অনুরোধে যখন এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় ছেড়ে দিলাম, তার কিছুদিন পরেই এই ক্যাটেগরিতেও পুরস্কার প্রদান শুরু হলো। কী দুর্ভাগ্য আমার।’ ওমর সানীর প্রবল ইচ্ছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’র মতো গল্পের সিনেমায় কাজ করার। তার ভাষ্যমতে তার অভিনীত সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় বাম্পার হিট সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘চাঁদের আলো’, ‘বাংলার বধূ’, ‘আত্মঅহংকার’, ‘মহৎ’, ‘প্রেমের অহংকার’, ‘প্রেম গীত’, ‘হারানো প্রেম’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘ক্ষুধা’ ইত্যাদি। খলনায়ক হিসেবে ওমর সানী প্রথম অভিনয় করেন ‘ওরা দালাল’ সিনেমায়। ওমর সানীর জন্মস্থান কেরানীগঞ্জ। তবে তিনি জানান ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি কোন পারিশ্রমিক পাননি। পরবর্তীতে সিনেমাটি কোটি টাকার ব্যবসা করলেও তিনি কোনকিছুই পাননি। তবে ‘অগ্নিপথ’ সিনেমায় অভিনয় করে ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান প্রথম। ওমর সানীর গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। তার ডাক নাম ইমরান। তার ওমর নামটি রাখেন পরিচালক জালাল উদ্দিন রুমী এবং সানী নামটি তিনি নিজেই রাখেন। এই দুই মিলিয়ে ওমর সানী। ওমর সানীর প্রবল বিশ্বাস বাংলাদেশের সিনেমার ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবেই। ওমর সানী’র স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। তার দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজা। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৭০টি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন।

মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১৫ ভাদ্র ১৪২৭

ওমর সানীর সাফল্যের তিন দশক

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

সিনেমায় অভিনয়ে সাফল্যের প্রায় তিন দশক সময় পার করছেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানী। দর্শকের হৃদয়ের ভালোবাসা নিয়ে এখনও অভিনয়ে নিয়মিত তিনি। নায়ক হিসেবে সাফল্যের পর খল নায়ক হিসেবে অভিনয় করেও সাফর‌্য পেয়েছেন তিনি। ওমর সানীর ভাষ্যমতে একই সময়ে তিনি শেখ নজরুল ইসলামের ‘চাঁদের আলো’, ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘অগ্নিপথ’ এবং আফতাব খান টুলুর ‘আমার জান’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। কিন্তু ‘চাঁদের আলো’ সিনেমাই আগে মুক্তি পায়। সিনেমাটি সেই সময় দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ সিনেমার একটি গান ‘তুমি আমার চাঁদ আমি চাঁদেরই আলো’ এখনো অনেক জনপ্রিয়। অবশ্য ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের আগেই দারাশিকো পরিচালিত ‘সুজন বাঁশি’ সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল ওমর সানী’র। কিন্তু সিনেমাটি নির্মিত হয়নি বলে দারাশিকোই ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন ওমর সানীকে। অভিনয় জীবনের প্রায় তিন দশকের পথচলা এবং নিজের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘অবশ্যই আমি শুরুতেই মহান আল্লাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাবা মায়ের কাছে যাদের কারণে এই পৃথিবীতে আসা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার ওস্তাদ শেখ নজরুল ইসলামের কাছে, শ্রদ্ধেয় দারাশিকোর কাছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন যেমন শ্রদ্ধেয় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এজে মিন্টু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা রাজীব, নূর হোসেন বলাই, উত্তম আকাশসহ আরও বেশ কয়েকজন। আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ আমাদের নন্দিত নায়িকা শাবানা আপার কাছেও। অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড়প্রাপ্তি দর্শকের ভালোবাসা, জীবন চলার পথে আমি এখনও দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি। তবে অপ্রাপ্তি হলো মনের গহীন কোনে কষ্টতো আসলে রয়েই গেছে। আমি যেই সময়টাতে বেশকিছু ভালো ভালো গল্পের চমৎকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেই সময়টাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। যদি তা না হতো তাহলে আমার বিশ^াস ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আমারও প্রাপ্তি হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। আবার আমি যখন খলনায়ক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। তখন খলনায়কের জন্য ক্যাটেগরি ছিল না জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। কিন্তু আমার মেয়ের অনুরোধে যখন এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় ছেড়ে দিলাম, তার কিছুদিন পরেই এই ক্যাটেগরিতেও পুরস্কার প্রদান শুরু হলো। কী দুর্ভাগ্য আমার।’ ওমর সানীর প্রবল ইচ্ছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’র মতো গল্পের সিনেমায় কাজ করার। তার ভাষ্যমতে তার অভিনীত সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় বাম্পার হিট সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘চাঁদের আলো’, ‘বাংলার বধূ’, ‘আত্মঅহংকার’, ‘মহৎ’, ‘প্রেমের অহংকার’, ‘প্রেম গীত’, ‘হারানো প্রেম’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘ক্ষুধা’ ইত্যাদি। খলনায়ক হিসেবে ওমর সানী প্রথম অভিনয় করেন ‘ওরা দালাল’ সিনেমায়। ওমর সানীর জন্মস্থান কেরানীগঞ্জ। তবে তিনি জানান ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি কোন পারিশ্রমিক পাননি। পরবর্তীতে সিনেমাটি কোটি টাকার ব্যবসা করলেও তিনি কোনকিছুই পাননি। তবে ‘অগ্নিপথ’ সিনেমায় অভিনয় করে ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান প্রথম। ওমর সানীর গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। তার ডাক নাম ইমরান। তার ওমর নামটি রাখেন পরিচালক জালাল উদ্দিন রুমী এবং সানী নামটি তিনি নিজেই রাখেন। এই দুই মিলিয়ে ওমর সানী। ওমর সানীর প্রবল বিশ্বাস বাংলাদেশের সিনেমার ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবেই। ওমর সানী’র স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। তার দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজা। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৭০টি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন।