১৯৬৩-এর চেতনায়

ওয়াশিংটনে বর্ণবাদবিরোধী বিশাল সমাবেশ

ওয়াশিংটনে গত শুক্রবার বর্ণবাদবিরোধী বিশাল সমাবেশ আয়োজন করা হয়। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভ আর দাবিগুলোকে ঐতিহাসিক পটভূমিতে দাঁড় করাতে, তাদের প্রবাদপ্রতীম প্রয়াত নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সবটাই ডেমোক্র্যাটদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৩ সালের আগস্ট। ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার দাবিতে জড়ো হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গরা। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ স্বপ্নদ্রষ্টা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

এরপর পেরিয়ে গেছে ৫৭টি বসন্ত। ২০২০ সালের আগস্ট। আবারও হাজারো মার্কিনি যোগ দিলেন গতকাল শুক্রবার আয়োজিত ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশে। ঐতিহাসিক ওই স্থানে বড় আকারের সমাবেশটির আয়োজনে ছিল নিউইয়র্কভিত্তিক এনএএন, মেরিল্যান্ডভিত্তিক এনএএসিপি ও ন্যাশনাল আরবান লিগ। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

সমাবেশে আসা মানুষের হাতে হাতে ছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান খচিত ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকা। এ সমাবেশে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেয় মার্টিন লুথার কিংয়ের নাতনি ইওলানদা রিনি কিং। বারো বছর বয়সী ইওলানদা রিনি কিং বলে, ‘বর্ণবাদ প্রথাকে বিলুপ্ত করতে আমরা জড়ো হয়েছি। এবার যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদকে নিঃশেষ করব। পুলিশের নির্মমতা ও বন্দুক সহিংসতা শেষ করব আমরা। আমরা করব জয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে এ ধরণীকে রক্ষার প্রত্যয়ও রয়েছে আমাদের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিরতরে দারিদ্রকে শেষ করতে চাই। বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী রাষ্ট্র হবে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা করব জয় নিশ্চয়ই।’ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড ও জ্যাকব ব্লেকের ওপর শেতাঙ্গ পুলিশের গুলির প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সমাবেশে যোগ দিয়েছে তাদের পরিবারও। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে সমর্থনও জানান তারা। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটন ডিসি হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, বর্ণবাদবিরোধী এই সমাবেশ, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাটদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা মাত্র। এদিকে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের ঘটনায় মুখোমুখি এখন ট্রাম্প-বাইডেনের নির্বাচনমুখী অবস্থান। বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নতুন মোড় নিয়েছে ওরেগন অঙ্গরাজ্যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আসন্ন নির্বাচনে তার ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন মুখোমুখি এ অবস্থানের প্রেক্ষিতে গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের সঙ্গে বর্ণবাদবিরোধী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের কর্মীদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি নিহত হন। কিছুদিন ধরে পোর্টল্যান্ডের রাজপথে টানা বিক্ষোভ চলছে। সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানানো হয়। টানা ৩য় শনিবার সর্বশেষ ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হলো।পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট দলীয় মেয়র টেড হুইলার ‘তার শহরে হত্যা ও ধ্বংসকে প্রশ্রয় দিয়েছেন’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এদিকে জো বাইডেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘অবিরাম সংঘাতকে উসকানি দিয়ে আসছেন।’

এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থ। তিনি থাকলে পোর্টল্যান্ড আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। মেয়র তো নিজের বেসমেন্টে গিয়ে বসে আছেন। নেতৃত্ব দেয়া দূরে থাক, তিনি একটা কথাও বলতে পারছেন না।’

মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১৫ ভাদ্র ১৪২৭

১৯৬৩-এর চেতনায়

ওয়াশিংটনে বর্ণবাদবিরোধী বিশাল সমাবেশ

image

ওয়াশিংটনে গত রোববার বর্ণবাদবিরোধী বিশাল সমাবেশের একাংশ -এএফপি

ওয়াশিংটনে গত শুক্রবার বর্ণবাদবিরোধী বিশাল সমাবেশ আয়োজন করা হয়। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভ আর দাবিগুলোকে ঐতিহাসিক পটভূমিতে দাঁড় করাতে, তাদের প্রবাদপ্রতীম প্রয়াত নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সবটাই ডেমোক্র্যাটদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৩ সালের আগস্ট। ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার দাবিতে জড়ো হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গরা। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ স্বপ্নদ্রষ্টা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

এরপর পেরিয়ে গেছে ৫৭টি বসন্ত। ২০২০ সালের আগস্ট। আবারও হাজারো মার্কিনি যোগ দিলেন গতকাল শুক্রবার আয়োজিত ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশে। ঐতিহাসিক ওই স্থানে বড় আকারের সমাবেশটির আয়োজনে ছিল নিউইয়র্কভিত্তিক এনএএন, মেরিল্যান্ডভিত্তিক এনএএসিপি ও ন্যাশনাল আরবান লিগ। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

সমাবেশে আসা মানুষের হাতে হাতে ছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান খচিত ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকা। এ সমাবেশে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেয় মার্টিন লুথার কিংয়ের নাতনি ইওলানদা রিনি কিং। বারো বছর বয়সী ইওলানদা রিনি কিং বলে, ‘বর্ণবাদ প্রথাকে বিলুপ্ত করতে আমরা জড়ো হয়েছি। এবার যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদকে নিঃশেষ করব। পুলিশের নির্মমতা ও বন্দুক সহিংসতা শেষ করব আমরা। আমরা করব জয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে এ ধরণীকে রক্ষার প্রত্যয়ও রয়েছে আমাদের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিরতরে দারিদ্রকে শেষ করতে চাই। বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী রাষ্ট্র হবে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা করব জয় নিশ্চয়ই।’ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড ও জ্যাকব ব্লেকের ওপর শেতাঙ্গ পুলিশের গুলির প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সমাবেশে যোগ দিয়েছে তাদের পরিবারও। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে সমর্থনও জানান তারা। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটন ডিসি হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, বর্ণবাদবিরোধী এই সমাবেশ, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাটদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা মাত্র। এদিকে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের ঘটনায় মুখোমুখি এখন ট্রাম্প-বাইডেনের নির্বাচনমুখী অবস্থান। বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নতুন মোড় নিয়েছে ওরেগন অঙ্গরাজ্যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আসন্ন নির্বাচনে তার ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন মুখোমুখি এ অবস্থানের প্রেক্ষিতে গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের সঙ্গে বর্ণবাদবিরোধী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের কর্মীদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি নিহত হন। কিছুদিন ধরে পোর্টল্যান্ডের রাজপথে টানা বিক্ষোভ চলছে। সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানানো হয়। টানা ৩য় শনিবার সর্বশেষ ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হলো।পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট দলীয় মেয়র টেড হুইলার ‘তার শহরে হত্যা ও ধ্বংসকে প্রশ্রয় দিয়েছেন’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এদিকে জো বাইডেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘অবিরাম সংঘাতকে উসকানি দিয়ে আসছেন।’

এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থ। তিনি থাকলে পোর্টল্যান্ড আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। মেয়র তো নিজের বেসমেন্টে গিয়ে বসে আছেন। নেতৃত্ব দেয়া দূরে থাক, তিনি একটা কথাও বলতে পারছেন না।’