২৪ মামলায় ১৬ চার্জশিট ৮টির তদন্ত চলছে
২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে র্যাব রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো শুরু করে। আকস্মিক র্যাবের অভিযানে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, টেন্ডারবাজ জিকে শামীমসহ ওই অভিযানে শতাধিক প্রভাশালীকে ধরপাকড় করা হয়। সবমিলিয়ে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিভিন্ন ক্লাব ও জুয়ার আসর থেকে সরঞ্জামসহ র্যাব ও পুলিশের অভিযানে দুশ’র বেশি গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনোর সামগ্রী, অস্ত্র, মাদক ও নগদ টাকাসহ নানা সামগ্রী। ওই ঘটনার এক বছর পার হয়ে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম প্রকাশিত হলেও তারা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অনেকেই অভিযানের সময় নিষ্ক্রিয় বা দেশত্যাগ করেছেন। এদিকে অনেকে আবার আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্নভাবে গোপন বৈঠক করছে। অনেকেই কোন কোন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা করে নিজে কিভাবে বাঁচতে পারে আর দলের আশির্বাদ নেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করা যায় তা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আবার অনেকেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগেরে কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, হাতেগোনা কয়েকজন নেতা গ্রেফতার ও দল থেকে বহিষ্কার হলেও তাদের সহযোগীরা এখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে খালেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব দোকান ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও এখন সেখানে নতুন করে তার গ্রুপের সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনির এলাকার জায়গা এখন নব্য খালেদরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। খিলগাঁও থেকে গুলিস্তানের বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত পুনরায় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন অনেক মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাদের ব্যবসা, বাণিজ্য এখন বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা দলের পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ চিহ্নিত কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঁচার উপায় খুঁজছেন। তারা রাজধানীর মতিঝিলসহ কয়েকটি ভবনের টেন্ডার নেয়ার জন্য আবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরনো পরিচিত বা যাদের সহায়তায় টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় যাদের নাম আসছে তারা অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে আত্মগোপনে গেলেও এখন নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। দলীয়ভাবে তারা সক্রিয় না হলেও নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে তারা কাজ করছেন।
আমাদের আদালত বার্তা পরিবেশক জানান, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় মোট ২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৮টি মামলা এখনো তদন্ত পর্যায়ে আছে। আসামিরা অনেকেই জামিনে ছাড়া পাওয়ার জন্য নানাভাবে লবিং করছেন। আর সহযোগীরা তাদের ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় আবারও কেউ ক্যাসিনো নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপর দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নিয়ে পর সন্দেহভাজন ক্লাবগুলো এখন আর আগের মতো সক্রিয় নেই। কিছু কিছু ক্লাব সদস্য যাওয়া আসা করেন। আর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের এক বছরের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই রদবদল হয়েছে। আর যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য তার জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর ওই সময় ডিএমপিতে কর্মরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাসিনো নিয়ে তাদের গোপন প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। আবার কোন পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে বদলি হয়ে গেছেন। এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ডিসি বলেন, থানায় মামলা দায়ের করার পর মামলাগুলো ডিবি, সিআইডি ও র্যাব তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। থানায় কিছু নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, দেশে এখন ক্যাসিনো ব্যবসা বন্ধ আছে। রাজধানীর ক্লাবপাড়াগুলোয় গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি রয়েছে। তবে সম্রাট ও খালেদের নাম ভাঙিয়ে তাদের সহযোগীরা কিছু কিছু এলাকায় চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১৫ ভাদ্র ১৪২৭
২৪ মামলায় ১৬ চার্জশিট ৮টির তদন্ত চলছে
বাকিবিল্লাহ |
২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে র্যাব রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো শুরু করে। আকস্মিক র্যাবের অভিযানে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, টেন্ডারবাজ জিকে শামীমসহ ওই অভিযানে শতাধিক প্রভাশালীকে ধরপাকড় করা হয়। সবমিলিয়ে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিভিন্ন ক্লাব ও জুয়ার আসর থেকে সরঞ্জামসহ র্যাব ও পুলিশের অভিযানে দুশ’র বেশি গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনোর সামগ্রী, অস্ত্র, মাদক ও নগদ টাকাসহ নানা সামগ্রী। ওই ঘটনার এক বছর পার হয়ে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম প্রকাশিত হলেও তারা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অনেকেই অভিযানের সময় নিষ্ক্রিয় বা দেশত্যাগ করেছেন। এদিকে অনেকে আবার আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্নভাবে গোপন বৈঠক করছে। অনেকেই কোন কোন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা করে নিজে কিভাবে বাঁচতে পারে আর দলের আশির্বাদ নেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করা যায় তা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আবার অনেকেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগেরে কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, হাতেগোনা কয়েকজন নেতা গ্রেফতার ও দল থেকে বহিষ্কার হলেও তাদের সহযোগীরা এখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে খালেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব দোকান ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও এখন সেখানে নতুন করে তার গ্রুপের সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনির এলাকার জায়গা এখন নব্য খালেদরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। খিলগাঁও থেকে গুলিস্তানের বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত পুনরায় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন অনেক মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাদের ব্যবসা, বাণিজ্য এখন বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা দলের পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ চিহ্নিত কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঁচার উপায় খুঁজছেন। তারা রাজধানীর মতিঝিলসহ কয়েকটি ভবনের টেন্ডার নেয়ার জন্য আবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরনো পরিচিত বা যাদের সহায়তায় টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় যাদের নাম আসছে তারা অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে আত্মগোপনে গেলেও এখন নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। দলীয়ভাবে তারা সক্রিয় না হলেও নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে তারা কাজ করছেন।
আমাদের আদালত বার্তা পরিবেশক জানান, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় মোট ২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৮টি মামলা এখনো তদন্ত পর্যায়ে আছে। আসামিরা অনেকেই জামিনে ছাড়া পাওয়ার জন্য নানাভাবে লবিং করছেন। আর সহযোগীরা তাদের ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় আবারও কেউ ক্যাসিনো নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপর দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নিয়ে পর সন্দেহভাজন ক্লাবগুলো এখন আর আগের মতো সক্রিয় নেই। কিছু কিছু ক্লাব সদস্য যাওয়া আসা করেন। আর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের এক বছরের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই রদবদল হয়েছে। আর যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য তার জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর ওই সময় ডিএমপিতে কর্মরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাসিনো নিয়ে তাদের গোপন প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। আবার কোন পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে বদলি হয়ে গেছেন। এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ডিসি বলেন, থানায় মামলা দায়ের করার পর মামলাগুলো ডিবি, সিআইডি ও র্যাব তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। থানায় কিছু নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, দেশে এখন ক্যাসিনো ব্যবসা বন্ধ আছে। রাজধানীর ক্লাবপাড়াগুলোয় গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি রয়েছে। তবে সম্রাট ও খালেদের নাম ভাঙিয়ে তাদের সহযোগীরা কিছু কিছু এলাকায় চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে।