আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার যা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এভাবে টানা কয়েক মাস একের পর এক মাইলফলক অতিক্রম করে চলেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার পাশাপাশি জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ৩০ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভ এই নতুন মাইলফলকে পৌঁছায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অগাস্ট মাসের ২৭ দিনে ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো অগাস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এতো বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত জুনে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যদিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল। মার্চে দেশে মহামারীর ধাক্কা লাগতে শুরু করার পর এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিট্যান্সের চেয়েও কম। এ বছর এপ্রিলে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

মহামারী রোধে চলা বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়, তবে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি আয় বেড়ে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে উঠলেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত অর্থবছরের যে কোন মাসের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে পণ্য রপ্তানি থেকে। মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগের মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যদিও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আর সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসের প্রথম ৩০ দিনে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। এই ৩০ দিনে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আগস্টের পুরো মাসের (আগস্ট মাস ৩১ দিনে) তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২২৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) এই দাতা সংস্থাগুলোর দেয়া প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার যা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এভাবে টানা কয়েক মাস একের পর এক মাইলফলক অতিক্রম করে চলেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার পাশাপাশি জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ৩০ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভ এই নতুন মাইলফলকে পৌঁছায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অগাস্ট মাসের ২৭ দিনে ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো অগাস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এতো বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত জুনে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যদিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল। মার্চে দেশে মহামারীর ধাক্কা লাগতে শুরু করার পর এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিট্যান্সের চেয়েও কম। এ বছর এপ্রিলে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

মহামারী রোধে চলা বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়, তবে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি আয় বেড়ে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে উঠলেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত অর্থবছরের যে কোন মাসের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে পণ্য রপ্তানি থেকে। মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগের মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যদিও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আর সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসের প্রথম ৩০ দিনে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। এই ৩০ দিনে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আগস্টের পুরো মাসের (আগস্ট মাস ৩১ দিনে) তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২২৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) এই দাতা সংস্থাগুলোর দেয়া প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।