মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত) বীরউত্তমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী শ্মশানঘাটে এই বীরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর আগে তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গান ফায়ারের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।
সকাল আটটায় মহাখালী ডিওএইচএসে সিআর দত্তকে শ্রদ্ধা জানান বিএনপিসহ বনানী ও মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার মানুষ। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সেখানে সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সেনাবাহিনীর সাবেক সহকর্মীরাও।
সিআর দত্তের ছেলের হাতে দলের পক্ষ থেকে শোকবাণী তুলে দিয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি মহান সন্তানকে হারালো।
এরপর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিআর দত্তকে নেওয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি দল গান স্যালুট দিয়ে তাকে সম্মান জানায়। মন্দিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিআর দত্তকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সিআর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ পূজা উদ?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটসহ আরও অনেক সংগঠন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সিআর দত্ত শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে জাতিকে সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সাহসী ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। এ স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, সে ক্ষেত্রে তার (সিআর দত্ত) অনন্য ভূমিকার কথা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’
সকাল ১১টা পর্যন্ত সিআর দত্তকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাখা হয়। এরপর তাকে আনা হয় সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালী মন্দিরে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
প্রথমে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। এরপর তার সম্মানে সামরিক কায়দায় ১৫টি ফাঁকা গুলি (হলি ফায়ার) ছোড়া হয়। এ সময় এই বীর উত্তমকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম শামীম উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, সেনাবাহিনীপ্রধানের পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল মো. মুশফেকুর রহমান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম। সবশেষে বিউগলের করুণ সুরে সিআর দত্তকে রাষ্ট্রীয় সালাম জ্ঞাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এরপর তার শ্মশানঘাট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গত ২৫ আগস্ট সিআর দত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত) বীরউত্তমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী শ্মশানঘাটে এই বীরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর আগে তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গান ফায়ারের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।
সকাল আটটায় মহাখালী ডিওএইচএসে সিআর দত্তকে শ্রদ্ধা জানান বিএনপিসহ বনানী ও মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার মানুষ। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সেখানে সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সেনাবাহিনীর সাবেক সহকর্মীরাও।
সিআর দত্তের ছেলের হাতে দলের পক্ষ থেকে শোকবাণী তুলে দিয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি মহান সন্তানকে হারালো।
এরপর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিআর দত্তকে নেওয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি দল গান স্যালুট দিয়ে তাকে সম্মান জানায়। মন্দিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিআর দত্তকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সিআর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ পূজা উদ?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটসহ আরও অনেক সংগঠন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সিআর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সিআর দত্ত শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে জাতিকে সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সাহসী ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। এ স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, সে ক্ষেত্রে তার (সিআর দত্ত) অনন্য ভূমিকার কথা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’
সকাল ১১টা পর্যন্ত সিআর দত্তকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাখা হয়। এরপর তাকে আনা হয় সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালী মন্দিরে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
প্রথমে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। এরপর তার সম্মানে সামরিক কায়দায় ১৫টি ফাঁকা গুলি (হলি ফায়ার) ছোড়া হয়। এ সময় এই বীর উত্তমকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম শামীম উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, সেনাবাহিনীপ্রধানের পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল মো. মুশফেকুর রহমান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম। সবশেষে বিউগলের করুণ সুরে সিআর দত্তকে রাষ্ট্রীয় সালাম জ্ঞাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এরপর তার শ্মশানঘাট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গত ২৫ আগস্ট সিআর দত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।