সুপারিশ নিতে কাউন্সিলরদের দ্বারে মেয়র
কাউন্সিলরদের আপত্তির পরও বিধিবহির্ভূতভাবে একজন প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। এজন্য একটি দরখাস্তের মধ্যে অনেক কাউন্সিলরকে বলে সুপারিশও করিয়ে নিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এমনকি তিনি এই সুপারিশের জন্য অনেক কাউন্সিলরের বাড়ি পর্যন্তও গিয়েছেন। অধিকাংশ কাউন্সিলরের ভাষ্য, কেউ চাকরি করতে চাইলে মেয়র বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবে এটাই স্বাভাবিক, এখানে তাদের দিয়ে দরখাস্তের মধ্যে সুপারিশ করিয়ে নেয়া অযৌক্তিক। তবে নিজ নিজ ওয়ার্ডের ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ তারা সেই দরখাস্তে সুপারিশ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু একাধিক কাউন্সিলর সরাসরি এর বিরোধিতা করে এই নিয়োগ আইনের পরিপন্থী বলে আপত্তি তুলেছেন। তারপরও মন্ত্রণালয়কে ভুল বুঝিয়ে নিয়োগটি কার্যকর করার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, সিটি করপোরেশনে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে মেয়র, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এখানে কাউন্সিলরদের কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু গত ২৮ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি ভার্চুয়াল মাসিক সভায় এমনই একটি নিয়োগ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেই সভায় চার নম্বর এজেন্ডায় বলা হয়েছে, রাজি উদ্দিন নামে একজন প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য কাউন্সিলররা আবেদন করেছেন। কিন্তু সভায় এর তীব্র বিরোধিতা করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির চাকরির জন্য কাউন্সিলররা আবেদন করবেন এটা বোধগম্য নয়। এছাড়া চাকরির বয়স অতিক্রম করা ৪৪ বছর বয়সী রাজি উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই নিয়াগের ব্যাপারে সভায় এজান্ডাভুক্ত করা আইনের পরিপন্থী। তিনি এই বক্তব্য লিখিতভাবে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। অন্যের চাকরির জন্য নিজেদের আবেদন কেন- এই প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, ‘মেয়র বলেছেন, সিটি করপোরেশনে এই প্রকৌশলী দরকার। তাই সুপারিশ করেছি’।
অন্যদিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী বলেন, ‘আমরা প্রকৌশলীর জন্য দরখাস্ত করিনি। প্রকৌশলীর দরখাস্তে আমরা নিয়োগের সুপারিশ করেছি’। ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ বলেন, ‘২৮ জুলাইয়ের সভায় নিয়োগের যে এজেন্ডা উত্থাপন করা হয়েছে এটা কাউন্সিলরদের কোন বিষয় না। প্রতিটি নিয়োগেরই সরকারি নীতিমালা আছে। আমার জানামতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়োগ দিতে হয়। তিনি (মেয়র) এটা বিধি মোতাবেক করছেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমাকে সুপারিশ করতে বলায় আমি তা করেছি’।
জানতে চাইলে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস বলেন, ‘সভায় বলা হয়েছিল কাউন্সিলরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে। কিন্তু কাউন্সিলরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তো কোন প্রকৌশলীর নিয়োগ হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করে বলেছি, যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা করার জন্য। অনেক কাউন্সিলর হয়তো না বুঝেই সুপারিশ করে দস্তখত দিয়েছেন’।
এদিকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু বলেন, ‘এই প্রকৌশলী নিয়োগে সুপারিশ নেয়ার জন্য মেয়র আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু বিধিবহির্ভূত হওয়ায় আমি তা করিনি’।
এ বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সিসিক’র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল আলীম শাহকে এ বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে দেয়ার জন্য বার বার বলা হলেও তিনি ব্যর্থ হন। সবশেষে তার হোয়াটসঅ্যাপে এ বিষয়ে তাগিদ দেয়া হলেও কোন সাড়া দেননি।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়টি সভায় আলোচনা হয়েছে। এখানে কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু সরাসরি বিরোধিতা করেছেন’। এ নিয়োগ এখনও হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিধি মোতাবেকই হবে’। যিনি চাকরি করবেন তার আবেদন নেই, অথচ কাউন্সিলরদের আবেদন কেনÑ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই’।
বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭
সুপারিশ নিতে কাউন্সিলরদের দ্বারে মেয়র
বিশেষ প্রতিনিধি
কাউন্সিলরদের আপত্তির পরও বিধিবহির্ভূতভাবে একজন প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। এজন্য একটি দরখাস্তের মধ্যে অনেক কাউন্সিলরকে বলে সুপারিশও করিয়ে নিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এমনকি তিনি এই সুপারিশের জন্য অনেক কাউন্সিলরের বাড়ি পর্যন্তও গিয়েছেন। অধিকাংশ কাউন্সিলরের ভাষ্য, কেউ চাকরি করতে চাইলে মেয়র বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবে এটাই স্বাভাবিক, এখানে তাদের দিয়ে দরখাস্তের মধ্যে সুপারিশ করিয়ে নেয়া অযৌক্তিক। তবে নিজ নিজ ওয়ার্ডের ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ তারা সেই দরখাস্তে সুপারিশ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু একাধিক কাউন্সিলর সরাসরি এর বিরোধিতা করে এই নিয়োগ আইনের পরিপন্থী বলে আপত্তি তুলেছেন। তারপরও মন্ত্রণালয়কে ভুল বুঝিয়ে নিয়োগটি কার্যকর করার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, সিটি করপোরেশনে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে মেয়র, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এখানে কাউন্সিলরদের কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু গত ২৮ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি ভার্চুয়াল মাসিক সভায় এমনই একটি নিয়োগ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেই সভায় চার নম্বর এজেন্ডায় বলা হয়েছে, রাজি উদ্দিন নামে একজন প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য কাউন্সিলররা আবেদন করেছেন। কিন্তু সভায় এর তীব্র বিরোধিতা করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির চাকরির জন্য কাউন্সিলররা আবেদন করবেন এটা বোধগম্য নয়। এছাড়া চাকরির বয়স অতিক্রম করা ৪৪ বছর বয়সী রাজি উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই নিয়াগের ব্যাপারে সভায় এজান্ডাভুক্ত করা আইনের পরিপন্থী। তিনি এই বক্তব্য লিখিতভাবে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। অন্যের চাকরির জন্য নিজেদের আবেদন কেন- এই প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, ‘মেয়র বলেছেন, সিটি করপোরেশনে এই প্রকৌশলী দরকার। তাই সুপারিশ করেছি’।
অন্যদিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী বলেন, ‘আমরা প্রকৌশলীর জন্য দরখাস্ত করিনি। প্রকৌশলীর দরখাস্তে আমরা নিয়োগের সুপারিশ করেছি’। ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ বলেন, ‘২৮ জুলাইয়ের সভায় নিয়োগের যে এজেন্ডা উত্থাপন করা হয়েছে এটা কাউন্সিলরদের কোন বিষয় না। প্রতিটি নিয়োগেরই সরকারি নীতিমালা আছে। আমার জানামতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়োগ দিতে হয়। তিনি (মেয়র) এটা বিধি মোতাবেক করছেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমাকে সুপারিশ করতে বলায় আমি তা করেছি’।
জানতে চাইলে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস বলেন, ‘সভায় বলা হয়েছিল কাউন্সিলরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে। কিন্তু কাউন্সিলরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তো কোন প্রকৌশলীর নিয়োগ হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করে বলেছি, যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা করার জন্য। অনেক কাউন্সিলর হয়তো না বুঝেই সুপারিশ করে দস্তখত দিয়েছেন’।
এদিকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু বলেন, ‘এই প্রকৌশলী নিয়োগে সুপারিশ নেয়ার জন্য মেয়র আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু বিধিবহির্ভূত হওয়ায় আমি তা করিনি’।
এ বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সিসিক’র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল আলীম শাহকে এ বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে দেয়ার জন্য বার বার বলা হলেও তিনি ব্যর্থ হন। সবশেষে তার হোয়াটসঅ্যাপে এ বিষয়ে তাগিদ দেয়া হলেও কোন সাড়া দেননি।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়টি সভায় আলোচনা হয়েছে। এখানে কাউন্সিলর সান্তুনু দত্ত সন্তু সরাসরি বিরোধিতা করেছেন’। এ নিয়োগ এখনও হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিধি মোতাবেকই হবে’। যিনি চাকরি করবেন তার আবেদন নেই, অথচ কাউন্সিলরদের আবেদন কেনÑ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই’।