গীত চতুর্বেদীর কবিতা

মূল হিন্দি থেকে অনুবাদ : অমৃতা বেরা

কবিতার রাত

প্রতি বছরই এমন একটা রাত আসে

যখন একটি কবিতা

বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে

জোনাকি হয়ে উড়ে চলে যায় জঙ্গলে

যখন সূর্যে একটানা গ্রহণ লাগবে

চাঁদ চলে যাবে কোথাও ক্ষুণœ হয়ে

ফিরে আসবে জঙ্গল থেকে ওই সব জোনাকিরা

আর আলো দেবে অন্ধকারে ভয় পাওয়া মানুষদের

কাঠ আর জল

আমি কড়া নাড়লাম

যে ছিলো ভেতরে শুনলো না, কিন্তু দরজাটা ঠিকই শুনে নিলো

যখনই আমি কড়া নাড়ি,

সুদূর সেই দরজা জেনে নেয় আমার সংগীত

আমি প্রথমবার যখন নদীতে পা রাখলাম,

টের পেলাম আমার দেহের সাথে স্নান করছে নদী

আমার ভেতরের জল আর বাইরের জল মধ্যে

আছে বয়ে চলার বন্ধুত্ব

কাঠে আছে আমার কড়া নাড়ার স্পন্দন

জলে আছে ছোঁয়ার কম্পন

আমার কবিতা, আমার ভবিষ্যৎ

শহরের বাইরে সাঁকোর নিচে আবর্জনার মধ্যে বসে

আমার ভাষার সবচেয়ে বুড়ো কবি চা তে পাউরুটি ডুবিয়ে খায়

সে আফজালেরও আগে প্রথম আবিষ্কার করেছিলো শায়েরী

সবই দেবতা তার দাড়িতে উঁকুন হয়ে থাকে

তার শরীরের যে কটা লোম, সব তার অলিখিত কবিতা

সে হাওয়ায় আঙুল বুলিয়ে শব্দ প্রতিস্ফুট করে

প্রত্যেক রাতে সে এভাবে নিজের অতীতকে চিঠি লেখে

যার খাম খুঁজে পাওয়ার আগেই হারিয়ে যায়

মৃত্যুর আগে একবার, অন্তত একবার

সে মনে করতে চায় সেই রমণীর সঠিক নাম আর চেহারা

যে কোনও এক সময় তার কবিতার বই

রেখে ঘুমোতো বালিশের তলায়।

অনবরত

এই কবিতাটির আগেও আমি ছিলাম।

আমার থাকার আগেও ছিলো এই কবিতা।

কারুর মৃত্যু হয়ে না,

না তোমার, না আমার

যে একবার ঢুকে পড়ে

দিল আর দুনিয়ার কাবাড়খানায় (জাঙ্কয়ার্ডে)

সে আর পারে না বাইরে বেরোতে

রয়ে যায় বিস্মৃতিতে পুরাতন আসবাবের মতন।

আবারও ফিরে আসে নতুন খোঁজের মতো।

পরিচিতি

গীত চতুর্বেদী হিন্দির সুখ্যাত কবি, সাহিত্যিক। জন্ম ১৯৭৭ মুম্বাইয়ে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধের ১০টি বই প্রকাশিত। দেশের ১০টি ভাষায় ওনার লেখা অনুবাদ হয়েছে। কবিতার জন্যে ভারত ভূষণ অগ্রবাল সম্মান, গল্পের জন্যে কৃষ্ণপ্রতাপ কথা সম্মান, এবং কৃষ্ণা বলদেব বৈদ্য ফেলোশিপ। গীত মধ্যপ্রদেশে ভোপাল শহরে থাকেন।

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

গীত চতুর্বেদীর কবিতা

মূল হিন্দি থেকে অনুবাদ : অমৃতা বেরা

image

শিল্পী : মাসুম চিশতি

কবিতার রাত

প্রতি বছরই এমন একটা রাত আসে

যখন একটি কবিতা

বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে

জোনাকি হয়ে উড়ে চলে যায় জঙ্গলে

যখন সূর্যে একটানা গ্রহণ লাগবে

চাঁদ চলে যাবে কোথাও ক্ষুণœ হয়ে

ফিরে আসবে জঙ্গল থেকে ওই সব জোনাকিরা

আর আলো দেবে অন্ধকারে ভয় পাওয়া মানুষদের

কাঠ আর জল

আমি কড়া নাড়লাম

যে ছিলো ভেতরে শুনলো না, কিন্তু দরজাটা ঠিকই শুনে নিলো

যখনই আমি কড়া নাড়ি,

সুদূর সেই দরজা জেনে নেয় আমার সংগীত

আমি প্রথমবার যখন নদীতে পা রাখলাম,

টের পেলাম আমার দেহের সাথে স্নান করছে নদী

আমার ভেতরের জল আর বাইরের জল মধ্যে

আছে বয়ে চলার বন্ধুত্ব

কাঠে আছে আমার কড়া নাড়ার স্পন্দন

জলে আছে ছোঁয়ার কম্পন

আমার কবিতা, আমার ভবিষ্যৎ

শহরের বাইরে সাঁকোর নিচে আবর্জনার মধ্যে বসে

আমার ভাষার সবচেয়ে বুড়ো কবি চা তে পাউরুটি ডুবিয়ে খায়

সে আফজালেরও আগে প্রথম আবিষ্কার করেছিলো শায়েরী

সবই দেবতা তার দাড়িতে উঁকুন হয়ে থাকে

তার শরীরের যে কটা লোম, সব তার অলিখিত কবিতা

সে হাওয়ায় আঙুল বুলিয়ে শব্দ প্রতিস্ফুট করে

প্রত্যেক রাতে সে এভাবে নিজের অতীতকে চিঠি লেখে

যার খাম খুঁজে পাওয়ার আগেই হারিয়ে যায়

মৃত্যুর আগে একবার, অন্তত একবার

সে মনে করতে চায় সেই রমণীর সঠিক নাম আর চেহারা

যে কোনও এক সময় তার কবিতার বই

রেখে ঘুমোতো বালিশের তলায়।

অনবরত

এই কবিতাটির আগেও আমি ছিলাম।

আমার থাকার আগেও ছিলো এই কবিতা।

কারুর মৃত্যু হয়ে না,

না তোমার, না আমার

যে একবার ঢুকে পড়ে

দিল আর দুনিয়ার কাবাড়খানায় (জাঙ্কয়ার্ডে)

সে আর পারে না বাইরে বেরোতে

রয়ে যায় বিস্মৃতিতে পুরাতন আসবাবের মতন।

আবারও ফিরে আসে নতুন খোঁজের মতো।

পরিচিতি

গীত চতুর্বেদী হিন্দির সুখ্যাত কবি, সাহিত্যিক। জন্ম ১৯৭৭ মুম্বাইয়ে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধের ১০টি বই প্রকাশিত। দেশের ১০টি ভাষায় ওনার লেখা অনুবাদ হয়েছে। কবিতার জন্যে ভারত ভূষণ অগ্রবাল সম্মান, গল্পের জন্যে কৃষ্ণপ্রতাপ কথা সম্মান, এবং কৃষ্ণা বলদেব বৈদ্য ফেলোশিপ। গীত মধ্যপ্রদেশে ভোপাল শহরে থাকেন।