স্কুল ভবনের কাজ না করেই ১০ লাখ টাকা উত্তোলন

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। এ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই নির্মাণ কাজটি পায় জে আর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত চার মাস আগে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। যার নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ১ বছর। কিন্তু গত চার মাসেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি ঠিকাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক ব্যক্তি ও একাধিক ঠিকাদার জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্কুলের নতুন ভবনের কাজ শুরু না করলেও উপজেলা প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে গত ৩০ জুনের আগে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। যা উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের ঠিকাদারি বিল পরিশোধের চেক ও কাগজপত্র তল্লাশি দিলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এত বড় জালিয়াতির ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খোদেজা আক্তার জানান, গত রমজান মাসে বিদ্যালয়ের একটি পুরাতন ভবন ভাঙ্গার কাজ করে ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদার তা অর্ধেক করে কাজ ফেলে রেখেছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২টি গাছ কাটার কথা রয়েছে সেটিও কাটা হয়নি। নির্মাণ কাজের কোন সামগ্রীও আনা হয়নি এরই মধ্যে ঠিকাদার নাকি ১০ লাখ টাক তুলে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও দেওটি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোরশেদ আলম বলেন, সোনাইমুড়ী উপজেলার শিক্ষা অফিসার খগেন্দ্র চন্দ্র দাসের যোগসাজশে টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলের পুরাতন ভবন ভাঙ্গার কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়েছে। ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু করেনি এমনকি নির্মাণ সামগ্রীও আনেনি। ইতোমধ্যে কাজের ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়টিও লোক মুখে শোনা যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে আর এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার সাইদুজ্জামান স্বপন বলেন, ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ের কাজটি তিনি ৪-৫ মাস আগে পেয়েছেন। কিন্তু রড টেষ্ট করতে সময় লাগে এ ছাড়া করোনার কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করতে পারেননি। তবে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। তিনি কোন টাকা উত্তোলন করেননি দাবি করে বলেন স্থানীয় কিছু ঠিকাদার কাজ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করছেন। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা খগেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এটা ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলীর কাজ। এতে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত আমিন পাটোয়ারী বলেন, কোন ঠিকাদারকে তিনি কাজ না করে বিল দেননি। জে আর এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারকে ১০ লাখ টাকার বিলও তিনি দেননি বলে দাবী করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার টিনা পাল বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ-খবর নেবেন। এই ব্যাপারে কাগজপত্র না দেখে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

স্কুল ভবনের কাজ না করেই ১০ লাখ টাকা উত্তোলন

প্রতিনিধি, চাটখিল (নোয়াখালী)

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। এ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই নির্মাণ কাজটি পায় জে আর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত চার মাস আগে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। যার নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ১ বছর। কিন্তু গত চার মাসেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি ঠিকাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক ব্যক্তি ও একাধিক ঠিকাদার জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্কুলের নতুন ভবনের কাজ শুরু না করলেও উপজেলা প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে গত ৩০ জুনের আগে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। যা উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের ঠিকাদারি বিল পরিশোধের চেক ও কাগজপত্র তল্লাশি দিলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এত বড় জালিয়াতির ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খোদেজা আক্তার জানান, গত রমজান মাসে বিদ্যালয়ের একটি পুরাতন ভবন ভাঙ্গার কাজ করে ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদার তা অর্ধেক করে কাজ ফেলে রেখেছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২টি গাছ কাটার কথা রয়েছে সেটিও কাটা হয়নি। নির্মাণ কাজের কোন সামগ্রীও আনা হয়নি এরই মধ্যে ঠিকাদার নাকি ১০ লাখ টাক তুলে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও দেওটি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোরশেদ আলম বলেন, সোনাইমুড়ী উপজেলার শিক্ষা অফিসার খগেন্দ্র চন্দ্র দাসের যোগসাজশে টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলের পুরাতন ভবন ভাঙ্গার কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়েছে। ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু করেনি এমনকি নির্মাণ সামগ্রীও আনেনি। ইতোমধ্যে কাজের ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়টিও লোক মুখে শোনা যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে আর এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার সাইদুজ্জামান স্বপন বলেন, ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ের কাজটি তিনি ৪-৫ মাস আগে পেয়েছেন। কিন্তু রড টেষ্ট করতে সময় লাগে এ ছাড়া করোনার কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করতে পারেননি। তবে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। তিনি কোন টাকা উত্তোলন করেননি দাবি করে বলেন স্থানীয় কিছু ঠিকাদার কাজ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করছেন। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা খগেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এটা ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলীর কাজ। এতে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত আমিন পাটোয়ারী বলেন, কোন ঠিকাদারকে তিনি কাজ না করে বিল দেননি। জে আর এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারকে ১০ লাখ টাকার বিলও তিনি দেননি বলে দাবী করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার টিনা পাল বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ-খবর নেবেন। এই ব্যাপারে কাগজপত্র না দেখে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না।