দক্ষিণাঞ্চলে অনেক জনপদ ও সম্পদ গিলে খাচ্ছে নদী

বর্ষা বিদায়ের লগ্নে ভাদ্রের বড় অমাবস্যায় ভর করে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের সঙ্গে উজানের ঢল আর অবিরাম বর্ষণের ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। কিন্তু এর পরেও নদী ভাঙন রোধে দ্রত কোন প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলে। এমনকি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে নদী ভাঙন রোধে আজ পর্যন্ত কোন সমন্বিত নিবিড় কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়নি। যেসব প্রকল্প অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন লাভ করেছে তার বাস্তবায়নও হচ্ছে বিলম্বিত। এমনকি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এখনো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। সবধরনের জটিলতা এড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণসহ জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করারও দাবি উঠেছে। বরিশালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও টেকসই নিরাপত্তায় প্রয়োজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন না ঘটে পাউবোর প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে বাঁধ নির্মাণ ও নদী ভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারার দাবি করা হয়েছে ওই সেমিনারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৪৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ৪১ কোটি টাকা। ফলে বাঁধ সংস্কারসহ নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না বলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।

দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর ভাঙন রোধসহ নদী শাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইতিপূর্বে ৩১টি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশ কিছু নদী শাসন ও ভাঙন রোধ প্রকল্প যাচাই-বাছাই কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী এখনও পুনর্গঠন পর্যায়ে রয়েছে। কিছু প্রকল্প-প্রস্তাবনা ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট’ এর তহবিলের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ অধিকতর যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনাধীন বলেও জানা গেছে। আবার কিছু প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রি-একনেকের বিবেচনায় রয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প-প্রস্তাবনা বিবেচনা না করেই ফেরত দেয়া হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। আবার অর্থের অভাবে অনুমোদিত অনেক প্রকল্পের অগ্রগতিই খুব একটা আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে নেই। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে পাঁচ সহস্রাধিক কোটি টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে বরিশাল জেলার ৮টি স্থানে নদীভাঙন রোধে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা, পটুয়াখালীর ৩টি নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা, ভোলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনপদ রক্ষায় ৮টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, ঝালকাঠীর সুগন্ধা ও কালিজিরা নদীর ভাঙন থেকে নৌবাহিনীর আঞ্চলিক বেজ স্টেশনসহ ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা এবং বরগুনার ৩টি প্রকল্প বাস্তায়নে ৪২৭ কোটি টাকার প্রকল্প-প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। এছাড়াও পিরোজপুর জেলার দুটি প্রকল্পের জন্যও প্রায় ৫৪ কোটি টাকা প্রয়াজন। তবে জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার এই দুটি প্রকল্প জিওবির তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের দোয়ারিকাতে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও এর সংযোগ সড়ক রক্ষায় প্রায় ৮ বছর আগে ১১ কোটি টাকার প্রকল্পÑপ্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় এখন একই প্রকল্প বাস্তবায়ণে প্রয়োজন হবে প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা। এসংক্রান্ত প্রকল্পÑপ্রস্তাবনাটি আরও প্রায় ১০মাস আগে একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করলেও এখনও তা দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৭ সনের নভেম্বরে বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার কির্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধে ৩৩১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করলেও তার বাস্তবায়নও বিলম্বিত হচ্ছে একর পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে অর্থ সংকটের কারণে। সরকারি নির্দেশনার আলোকে প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে অর্থ ছাড় না করায় প্রকল্পের কাজ কাক্সিক্ষত মাত্রায় এগুচ্ছে না। গত অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ৫০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যায় ৫ কোটি টাকারও কম।

মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বলেশ্বর, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, বিষখালী ও পায়রাসহ বড় নদ-নদীগুলো উজানের পানি সাগরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে ভাঙছে দক্ষিণাঞ্চলের একের পর এক জনপদ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসমূহ। কিন্তু তা প্রতিরোধ কার্যক্রমে এখনো যথেষ্ট ধীরগতি। অতি সাম্প্রতিক প্লাবণ আর উজানের ঢলের পানিতে সয়লাব দক্ষিণাঞ্চলের পানি সাগরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে নদ-নদীগুলোর ভাঙন ক্রমশ তীব্রতর হয়েছে। বরিশালের মেঘনা পাড়ের মেহেন্দিগঞ্জের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারিÑবেসরকারি স্থাপনাও নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। একই অবস্থা বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ ও বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তের সুগন্ধ নদী তীরের মানুষের। সুগন্ধার বুকে বিলীন হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর উজানে একটি স্কুল ভবনসহ মসজিদও। কুয়াকাটা সাগর সৈকত ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আঘাত হানলেও গত দশ বছর ধরে শুধু নানা ধরনের গবেষণা আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিসম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম সরজমিনে কুয়াকাটা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোলায় ভাঙন রোধে একাধিক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তব কার্যক্রম শুরু হলেও অর্থের অভাবে গতি ক্রমশ ধীর হচ্ছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নদী ভাঙনে সর্বশান্ত মানুষের আহাজারি।

আরও খবর
ডিএমসিএইচ, টিএসসি ও পাবলিক লাইব্রেরি দ্রুত আধুনিকায়নের নির্দেশ
আ’লীগের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বঙ্গবন্ধু কর্নার বই জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদন একমাসের মধ্যে জমার নির্দেশ
টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ডিজাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা
সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ আর দখলদারদের দখলে
চান্দিনায় হাসপাতালে রোগীর মেয়েকে যৌন নির্যাতন
মামলায় দুই ধরনের স্বীকারোক্তি : তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন
জেনারেল হাসপাতালে আগুন : রোগীদের দ্রুত স্থানান্তর
রাজস্ব আদায়ে ৮৩৪টি হোল্ডিংসে অভিযান
চার পুলিশ কর্মকর্তা বদলি
সবজির অগ্নিমূল্য দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষ
শ্যালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাজা কমল

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

প্রকল্প অনুমোদনে ধীরগতি, অর্থের অভাব

দক্ষিণাঞ্চলে অনেক জনপদ ও সম্পদ গিলে খাচ্ছে নদী

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

বর্ষা বিদায়ের লগ্নে ভাদ্রের বড় অমাবস্যায় ভর করে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের সঙ্গে উজানের ঢল আর অবিরাম বর্ষণের ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। কিন্তু এর পরেও নদী ভাঙন রোধে দ্রত কোন প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলে। এমনকি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে নদী ভাঙন রোধে আজ পর্যন্ত কোন সমন্বিত নিবিড় কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়নি। যেসব প্রকল্প অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন লাভ করেছে তার বাস্তবায়নও হচ্ছে বিলম্বিত। এমনকি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এখনো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। সবধরনের জটিলতা এড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণসহ জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করারও দাবি উঠেছে। বরিশালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও টেকসই নিরাপত্তায় প্রয়োজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন না ঘটে পাউবোর প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে বাঁধ নির্মাণ ও নদী ভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারার দাবি করা হয়েছে ওই সেমিনারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৪৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ৪১ কোটি টাকা। ফলে বাঁধ সংস্কারসহ নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না বলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।

দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর ভাঙন রোধসহ নদী শাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইতিপূর্বে ৩১টি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশ কিছু নদী শাসন ও ভাঙন রোধ প্রকল্প যাচাই-বাছাই কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী এখনও পুনর্গঠন পর্যায়ে রয়েছে। কিছু প্রকল্প-প্রস্তাবনা ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট’ এর তহবিলের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ অধিকতর যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনাধীন বলেও জানা গেছে। আবার কিছু প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রি-একনেকের বিবেচনায় রয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প-প্রস্তাবনা বিবেচনা না করেই ফেরত দেয়া হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। আবার অর্থের অভাবে অনুমোদিত অনেক প্রকল্পের অগ্রগতিই খুব একটা আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে নেই। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে পাঁচ সহস্রাধিক কোটি টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে বরিশাল জেলার ৮টি স্থানে নদীভাঙন রোধে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা, পটুয়াখালীর ৩টি নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা, ভোলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনপদ রক্ষায় ৮টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, ঝালকাঠীর সুগন্ধা ও কালিজিরা নদীর ভাঙন থেকে নৌবাহিনীর আঞ্চলিক বেজ স্টেশনসহ ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা এবং বরগুনার ৩টি প্রকল্প বাস্তায়নে ৪২৭ কোটি টাকার প্রকল্প-প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। এছাড়াও পিরোজপুর জেলার দুটি প্রকল্পের জন্যও প্রায় ৫৪ কোটি টাকা প্রয়াজন। তবে জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার এই দুটি প্রকল্প জিওবির তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের দোয়ারিকাতে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও এর সংযোগ সড়ক রক্ষায় প্রায় ৮ বছর আগে ১১ কোটি টাকার প্রকল্পÑপ্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় এখন একই প্রকল্প বাস্তবায়ণে প্রয়োজন হবে প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা। এসংক্রান্ত প্রকল্পÑপ্রস্তাবনাটি আরও প্রায় ১০মাস আগে একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করলেও এখনও তা দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৭ সনের নভেম্বরে বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার কির্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধে ৩৩১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করলেও তার বাস্তবায়নও বিলম্বিত হচ্ছে একর পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে অর্থ সংকটের কারণে। সরকারি নির্দেশনার আলোকে প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে অর্থ ছাড় না করায় প্রকল্পের কাজ কাক্সিক্ষত মাত্রায় এগুচ্ছে না। গত অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ৫০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যায় ৫ কোটি টাকারও কম।

মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বলেশ্বর, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, বিষখালী ও পায়রাসহ বড় নদ-নদীগুলো উজানের পানি সাগরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে ভাঙছে দক্ষিণাঞ্চলের একের পর এক জনপদ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসমূহ। কিন্তু তা প্রতিরোধ কার্যক্রমে এখনো যথেষ্ট ধীরগতি। অতি সাম্প্রতিক প্লাবণ আর উজানের ঢলের পানিতে সয়লাব দক্ষিণাঞ্চলের পানি সাগরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে নদ-নদীগুলোর ভাঙন ক্রমশ তীব্রতর হয়েছে। বরিশালের মেঘনা পাড়ের মেহেন্দিগঞ্জের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারিÑবেসরকারি স্থাপনাও নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। একই অবস্থা বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ ও বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তের সুগন্ধ নদী তীরের মানুষের। সুগন্ধার বুকে বিলীন হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর উজানে একটি স্কুল ভবনসহ মসজিদও। কুয়াকাটা সাগর সৈকত ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আঘাত হানলেও গত দশ বছর ধরে শুধু নানা ধরনের গবেষণা আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিসম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম সরজমিনে কুয়াকাটা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোলায় ভাঙন রোধে একাধিক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তব কার্যক্রম শুরু হলেও অর্থের অভাবে গতি ক্রমশ ধীর হচ্ছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নদী ভাঙনে সর্বশান্ত মানুষের আহাজারি।