মামলায় দুই ধরনের স্বীকারোক্তি : তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

বরিশালে আলোচিত এক হত্যা মামলায় দুই তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে পৃথক পৃথক স্বীকারোক্তি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার আসামি ও নিহতের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০) অভিযোগ করেছেন তাকে নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামী হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ঘটনার দেড় বছর পর গ্রেফতার হওয়া তিন চোর স্বীকার করেছে, তারা চুরি করতে গিয়ে খুন করেন গৃহকর্তা দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে (৪৫)। পুলিশের এমন পরস্পর বিরোধী তদন্তের বিষয়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার বলেন, মামলাটির তদন্তে পুলিশ চরম গাফিলতি রয়েছে। ফলে স্ত্রী ঘাতক না হয়েও স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) এখন ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন বলে মত দেন এই আইনজীবী। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দুটি স্বীকারোক্তির কোনটি সঠিক এবং অপরটির ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীকে নির্যাতন করে বাধ্য করা হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বিএনপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। যে কারণে লিজার জবানবন্দির পর ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করা হলেও দ্বিতীয়বার তিন চোরের দেয়া স্বীকারোক্তি নিয়ে তারা নিশ্চুপ।

লিজা বলেন, তাকে গ্রেফতারের পর সারারাত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক বশির আহমেদ। তার মা ও দুই ভাইবোনকে থানায় আটকে রেখে তাদেরও মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে তিনি পুলিশের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি দুই গ্রহণে আদালতেও আইনি প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলে লিজার অভিযোগ। লিজা বলেন, তিনি কারাগারে থাকাকালীন জবানবন্দি প্রত্যাহারে আবেদন করলেও আদালত গ্রহণ করেনি। এরপরে লকডাউনে আদালত বন্ধ ছিল। এখন আবার আবেদন করবেন।

দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে গত বছর ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের বসতঘরে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। তখন অন্তঃসত্ত্বা লিজা ছিল ঘরের অন্য কক্ষে। লিজা জানান, স্বামীকে হত্যার সময় তিনি ১৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। কারাগারে মেয়ে সন্তান প্রসব করেছেন। লিজার গর্ভে সন্তান আছে তা জানতো না দেবর রিপন। লিজার অভিযোগ সে কারণেই রিপন ভাইয়ের সম্পত্তি গ্রাসের জন্য পরিকল্পনা করে এই মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছেন। দলিল লেখক ছাড়াও জমি কেনাবেচা এবং সুদের ব্যবসা করায় রিয়াজ আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল ছিলেন।

রিয়াজ নিহত হওয়ার পর ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. বশির আহমেদ সন্দেজনক আসামি হিসাবে স্ত্রী লিজাকে গ্রেফতার করে। গতবছর ২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনিসুজ্জামান লিজার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে লিজা বলেছেন, রিয়াজের সহকর্মী মাসুমের (পলাতক) সঙ্গে তার পরকীয়া ছিল। ঘটনার দিন রাতে মাসুম এক সহযোগী নিয়ে লিজার সহযোগিতায় রিয়াজের ঘরে ঢুকে পালিয়ে থাকে। তাদের আনা ঘুমের ওষুধ লিজা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে স্বামীকে খেতে দেয়। এতে রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ঘরের সিঁদ কেটে রাখা হয়।

এরপরে একই থানার উপ পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুন মামলাটির তদন্তের দয়িত্ব পেলেও নতুন কোন অগ্রগতি হয়নি। মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছগীর হোসেন গত ১৪ আগস্ট বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে একটি চুরি মামলায় জলিল সিকদার (২৮) নামক এক যুবককে গ্রেফতার করেন। তার স্বীকারোক্তিনুযায়ী ২৭ আগস্ট ঢাকা থেকে রায়হান চৌকিদার (২০) এবং ২৮ আগস্ট বরিশাল থেকে শাকিল হাওলাদার (২০) নামক আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করেন তিনি। রায়হান ও শাকিল নিহত রিয়াজের প্রতিবেশী।

পরিদর্শক ছগীর জানান, ওই তিন চোর রিয়াজকে হত্যার কথা স্বীকার করে গত ২৮ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে পরিদর্শক ছগীর জানান, তিন চোর নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য প্রায়শই চুরি ছিনতাই করে। প্রতিবেশী সচ্ছল রিয়াজের ঘরে চুরির জন্য একাধিকবার হানা দিলেও রিয়াজ জেগে থাকায় সম্ভব হয়নি। ঘটনার দিন রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী তারা দা দিয়ে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকলে রিয়াজ জেগে ওঠে। রিয়াজ তাদের চিনে ফেলায় কিছু বোঝার আগেই হাতে থাকা দা দিয়ে জলিল রিয়াজের গলায় একাধিক কোপ এবং শাকিল পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। তিন যুবকের দাবি, রিয়াজ বিছানায় একা ছিল, স্ত্রী লিজা ছিল অন্য ঘরে। তিনি ওই কক্ষে আসার আগেই তিনজন পালিয়ে যায়।

পরিদর্শক ছগীর বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে অধিকতর তদন্তের জন্য এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন তিনি বরিশাল নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, বিগত তদন্তে অনেক অসঙ্গতি দেখে ওই দুর্বল জায়গায়গুলোতে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। খুনিরা রিয়াজের ৪টি মোবাইল সেট নিয়ে গিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া ওই তিন যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২টি সেট। মূলত ওই মোবাইল সেট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তিন যুবককে চিহ্নিত করে তাদের পিছু লেগেছিলেন পরিদর্শক ছগির। তিনি বলেন, মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী তিনি কাউনিয়া থানার কর্মকর্তা হয়েও কোতোয়ালি থানার মামলার তদন্ত করছেন। যা পুলিশ বিভাগে সহসা ঘটে না।

মামলার এমন পরিস্থিতিতে লিজার স্বীকারোক্তির ভিত্তি কি জানতে চাইলে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক বশির আহমেদ বলেন, স্বীকারোক্তি লিজা দিয়েছে এবং আদালত গ্রহণ করেছে। এখন তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। লিজাকে নির্যাতন ও অর্থ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নিহত রিয়াজের ভাই মামলার বাদী রিপন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর ১৪ বছরে সন্তান হয়নি লিজার। কারাগারে সন্তান প্রসব রহস্যজনক। ওই সন্তান তার ভাই রিয়াজের নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি তিন যুবকের স্বীকারোক্তি মিথ্যা দাবি করেন বলেন, লিজাই আসল খুনি।

বিএমপি কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান রিয়াজ হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে বলেন, যেহেতু মামলাটির তদন্তে দুই ধরনের স্বীকারোক্তি উঠে এসেছে তাই সত্য উদ্ঘাটনের জন্য একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে পাওয়া এ পর্যন্ত সব তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যেহেতু মামলাটি এখনও তদন্তাধীন তাই দু’ধরনের তথ্য পাওয়া নিয়ে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছেনা। তবে তদন্ত শেষ হলে কোন কর্মকর্তা তদন্তে গাফিলতি বা অনিয়ম করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর
ডিএমসিএইচ, টিএসসি ও পাবলিক লাইব্রেরি দ্রুত আধুনিকায়নের নির্দেশ
আ’লীগের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দক্ষিণাঞ্চলে অনেক জনপদ ও সম্পদ গিলে খাচ্ছে নদী
বঙ্গবন্ধু কর্নার বই জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদন একমাসের মধ্যে জমার নির্দেশ
টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ডিজাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা
সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ আর দখলদারদের দখলে
চান্দিনায় হাসপাতালে রোগীর মেয়েকে যৌন নির্যাতন
জেনারেল হাসপাতালে আগুন : রোগীদের দ্রুত স্থানান্তর
রাজস্ব আদায়ে ৮৩৪টি হোল্ডিংসে অভিযান
চার পুলিশ কর্মকর্তা বদলি
সবজির অগ্নিমূল্য দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষ
শ্যালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাজা কমল

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

বরিশালে রিয়াজ হত্যা

মামলায় দুই ধরনের স্বীকারোক্তি : তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

বরিশালে আলোচিত এক হত্যা মামলায় দুই তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে পৃথক পৃথক স্বীকারোক্তি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার আসামি ও নিহতের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০) অভিযোগ করেছেন তাকে নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামী হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ঘটনার দেড় বছর পর গ্রেফতার হওয়া তিন চোর স্বীকার করেছে, তারা চুরি করতে গিয়ে খুন করেন গৃহকর্তা দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে (৪৫)। পুলিশের এমন পরস্পর বিরোধী তদন্তের বিষয়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার বলেন, মামলাটির তদন্তে পুলিশ চরম গাফিলতি রয়েছে। ফলে স্ত্রী ঘাতক না হয়েও স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) এখন ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন বলে মত দেন এই আইনজীবী। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দুটি স্বীকারোক্তির কোনটি সঠিক এবং অপরটির ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীকে নির্যাতন করে বাধ্য করা হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বিএনপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। যে কারণে লিজার জবানবন্দির পর ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করা হলেও দ্বিতীয়বার তিন চোরের দেয়া স্বীকারোক্তি নিয়ে তারা নিশ্চুপ।

লিজা বলেন, তাকে গ্রেফতারের পর সারারাত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক বশির আহমেদ। তার মা ও দুই ভাইবোনকে থানায় আটকে রেখে তাদেরও মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে তিনি পুলিশের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি দুই গ্রহণে আদালতেও আইনি প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলে লিজার অভিযোগ। লিজা বলেন, তিনি কারাগারে থাকাকালীন জবানবন্দি প্রত্যাহারে আবেদন করলেও আদালত গ্রহণ করেনি। এরপরে লকডাউনে আদালত বন্ধ ছিল। এখন আবার আবেদন করবেন।

দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে গত বছর ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের বসতঘরে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। তখন অন্তঃসত্ত্বা লিজা ছিল ঘরের অন্য কক্ষে। লিজা জানান, স্বামীকে হত্যার সময় তিনি ১৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। কারাগারে মেয়ে সন্তান প্রসব করেছেন। লিজার গর্ভে সন্তান আছে তা জানতো না দেবর রিপন। লিজার অভিযোগ সে কারণেই রিপন ভাইয়ের সম্পত্তি গ্রাসের জন্য পরিকল্পনা করে এই মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছেন। দলিল লেখক ছাড়াও জমি কেনাবেচা এবং সুদের ব্যবসা করায় রিয়াজ আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল ছিলেন।

রিয়াজ নিহত হওয়ার পর ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. বশির আহমেদ সন্দেজনক আসামি হিসাবে স্ত্রী লিজাকে গ্রেফতার করে। গতবছর ২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনিসুজ্জামান লিজার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে লিজা বলেছেন, রিয়াজের সহকর্মী মাসুমের (পলাতক) সঙ্গে তার পরকীয়া ছিল। ঘটনার দিন রাতে মাসুম এক সহযোগী নিয়ে লিজার সহযোগিতায় রিয়াজের ঘরে ঢুকে পালিয়ে থাকে। তাদের আনা ঘুমের ওষুধ লিজা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে স্বামীকে খেতে দেয়। এতে রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ঘরের সিঁদ কেটে রাখা হয়।

এরপরে একই থানার উপ পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুন মামলাটির তদন্তের দয়িত্ব পেলেও নতুন কোন অগ্রগতি হয়নি। মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছগীর হোসেন গত ১৪ আগস্ট বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে একটি চুরি মামলায় জলিল সিকদার (২৮) নামক এক যুবককে গ্রেফতার করেন। তার স্বীকারোক্তিনুযায়ী ২৭ আগস্ট ঢাকা থেকে রায়হান চৌকিদার (২০) এবং ২৮ আগস্ট বরিশাল থেকে শাকিল হাওলাদার (২০) নামক আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করেন তিনি। রায়হান ও শাকিল নিহত রিয়াজের প্রতিবেশী।

পরিদর্শক ছগীর জানান, ওই তিন চোর রিয়াজকে হত্যার কথা স্বীকার করে গত ২৮ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে পরিদর্শক ছগীর জানান, তিন চোর নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য প্রায়শই চুরি ছিনতাই করে। প্রতিবেশী সচ্ছল রিয়াজের ঘরে চুরির জন্য একাধিকবার হানা দিলেও রিয়াজ জেগে থাকায় সম্ভব হয়নি। ঘটনার দিন রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী তারা দা দিয়ে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকলে রিয়াজ জেগে ওঠে। রিয়াজ তাদের চিনে ফেলায় কিছু বোঝার আগেই হাতে থাকা দা দিয়ে জলিল রিয়াজের গলায় একাধিক কোপ এবং শাকিল পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। তিন যুবকের দাবি, রিয়াজ বিছানায় একা ছিল, স্ত্রী লিজা ছিল অন্য ঘরে। তিনি ওই কক্ষে আসার আগেই তিনজন পালিয়ে যায়।

পরিদর্শক ছগীর বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে অধিকতর তদন্তের জন্য এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন তিনি বরিশাল নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, বিগত তদন্তে অনেক অসঙ্গতি দেখে ওই দুর্বল জায়গায়গুলোতে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। খুনিরা রিয়াজের ৪টি মোবাইল সেট নিয়ে গিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া ওই তিন যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২টি সেট। মূলত ওই মোবাইল সেট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তিন যুবককে চিহ্নিত করে তাদের পিছু লেগেছিলেন পরিদর্শক ছগির। তিনি বলেন, মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী তিনি কাউনিয়া থানার কর্মকর্তা হয়েও কোতোয়ালি থানার মামলার তদন্ত করছেন। যা পুলিশ বিভাগে সহসা ঘটে না।

মামলার এমন পরিস্থিতিতে লিজার স্বীকারোক্তির ভিত্তি কি জানতে চাইলে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক বশির আহমেদ বলেন, স্বীকারোক্তি লিজা দিয়েছে এবং আদালত গ্রহণ করেছে। এখন তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। লিজাকে নির্যাতন ও অর্থ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নিহত রিয়াজের ভাই মামলার বাদী রিপন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর ১৪ বছরে সন্তান হয়নি লিজার। কারাগারে সন্তান প্রসব রহস্যজনক। ওই সন্তান তার ভাই রিয়াজের নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি তিন যুবকের স্বীকারোক্তি মিথ্যা দাবি করেন বলেন, লিজাই আসল খুনি।

বিএমপি কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান রিয়াজ হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে বলেন, যেহেতু মামলাটির তদন্তে দুই ধরনের স্বীকারোক্তি উঠে এসেছে তাই সত্য উদ্ঘাটনের জন্য একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে পাওয়া এ পর্যন্ত সব তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যেহেতু মামলাটি এখনও তদন্তাধীন তাই দু’ধরনের তথ্য পাওয়া নিয়ে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছেনা। তবে তদন্ত শেষ হলে কোন কর্মকর্তা তদন্তে গাফিলতি বা অনিয়ম করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।