জঙ্গিদের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা ছিল

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এই অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয় 

জঙ্গিরা নতুন করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে একদিকে নতুন সদস্য সংগ্রহ, অন্যদিকে বেশ কিছু ধর্মীয় স্থান ও প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি হামলা করার গোপন পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জঙ্গি অবস্থানে অভিযান চালিয়ে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতারের ফলে জঙ্গিদের অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযান পরিচালনা এবং অভিযানে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা জানতে সক্ষম হয়। তবে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে তারা প্রকাশ করতে চান না।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বিদেশিদের উপর জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার এবং বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করার পর দেশের জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে মনে করা হয় যে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের অনেক সদস্য পুলিশের অভিযানে নিহত এবং আস্তানা ধ্বংস হয়ে গেলেও জঙ্গিরা আত্মগোপনে চলে যায়। এক বছরের মাথায় তারা আবার সংগঠিত হতে শুরু করে। এ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা ভারতের একটি হোটেলে জড়ো হয়ে বৈঠক করে। সেখানে অবস্থান করে তারা বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ, বিতরণ, বিস্ফোরক সংগ্রহ, বোমা তৈরির পদ্ধতি ও হামলার কৌশল নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে। এরপর বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা জানান দিতে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি আবার সংগঠিত হয়। এ সময়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে তারা বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ব্যাপক পরিকল্পনা করে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি করে জঙ্গিরা শেষ হয়ে যায়নি এমন বার্তা দেয়া। সে অনুযায়ী তারা গোপন বৈঠক করে ভিন্ন ধর্মের লোক এবং বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশিদের উপর হামলার ছক তৈরি করে। কক্সবাজার সি বিচে প্রচুর বিদেশি বেড়াতে আসেন। জঙ্গিরা বিদেশে অস্তিত্ব জানান দিতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের উপর হামলা করার পরিকল্পনা করে তখন।

বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ভালো যোগাযোগ আছে। ফলে তাদের উপর হামলা হলে সে খবর এবং জঙ্গিদের অস্তিত্ব থাকার কথা সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের উপর হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গিরা।

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে প্রতিবছর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সে উৎসবের সময় সেখানে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়। সেখানে হামলা করে বহু লোককে হতাহত করা হলে সে খবরও আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে। এ জন্য জঙ্গিরা ধামরাইয়ে রথযাত্রা উৎসবে হামলার পরিকল্পনা হাতে নেয়।

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা হলে তার খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। এমন চিন্তা থেকে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা হাতে নেয়। হামলার আগে তারা আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় রাজধানীর পান্থপথে ওলিও হোটেল। কিন্তু ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে হামলার আগেই সে হোটেলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট। রাত ৩টার দিকে ওলিও হোটেলে তল্লাশি করার সময় ৪র্থ তলার ৩০১ নম্বর রুমে জঙ্গিদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ভোর সোয়া ৪টার দিকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। বরং তারা রুমের ভিতর বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে রুমে থাকা অজ্ঞাত জঙ্গিরা বিস্ফোরকসহ রুমের বাহিরে বের হয়ে উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হুমকি দেয়। এরপরই পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটের সময় হোটেলকে লক্ষ্য করে ৭টি টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তে হোটেলের রুমের ভেতর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৩০১ নম্বর রুমের বারান্দা, রেলিং ধসে পড়ে। এরপর পুলিশ গুলি করতে করতে হোটেলে ঢোকে। হোটেলে একটি অবিস্ফোরিত বোমা ও এক যুবকের মৃতদেহ পড়ে আছে দেখতে পায় । হোটেল রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম। সেখান থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার গোপন পরিকল্পনার কথা জানায়। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তাদের ব্যাংক হিসাব দেখে বিদেশ গমানাগমনের তথ্য উদ্ঘাটন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়। আর ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে আসামিদের মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ করেন। ওই ফোনের প্রেরিত আলামত ও মোবাইল ফোনের অডিও, ভিডিও পিকচার ফাইল পরীক্ষা করে কথোপকথনের তথ্য বের করেন। জঙ্গিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সহযোগীদের কল করেছেন। এভাবে এক জঙ্গি থেকে অন্য জঙ্গিরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও গাইডলাইন পেয়েছে। জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) একটি উগ্র গ্রুপ যা নব্য জেএমবি নামে পরিচিত।

সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুন্যালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার খান বলেন, এ আদালতে জঙ্গিবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলাসহ আলোচিত বিভিন্ন মামলার বিচার কার্য চলছে। এরমধ্যে পান্থপথের হোটেল অলিও ইন্টারন্যাশনালের বোমা হামলার মামলা আছে। মামলাগুলো যাতে দ্রুত বিচার কার্য শেষ করা যায় তার জন্য আদালত কাজ করছেন। জঙ্গিবাদের গুরুত্বপূর্ণ সব মামলা এ আদালতে বিচারাধীন আছে তিনি মুঠোফোনে জানান।

শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭

দেশে নতুন করে সংগঠিত হয়ে

জঙ্গিদের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা ছিল

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এই অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয় 

বাকী বিল্লাহ ও মাহবুবুল হক

জঙ্গিরা নতুন করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে একদিকে নতুন সদস্য সংগ্রহ, অন্যদিকে বেশ কিছু ধর্মীয় স্থান ও প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি হামলা করার গোপন পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জঙ্গি অবস্থানে অভিযান চালিয়ে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতারের ফলে জঙ্গিদের অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযান পরিচালনা এবং অভিযানে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা জানতে সক্ষম হয়। তবে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে তারা প্রকাশ করতে চান না।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বিদেশিদের উপর জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার এবং বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করার পর দেশের জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে মনে করা হয় যে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের অনেক সদস্য পুলিশের অভিযানে নিহত এবং আস্তানা ধ্বংস হয়ে গেলেও জঙ্গিরা আত্মগোপনে চলে যায়। এক বছরের মাথায় তারা আবার সংগঠিত হতে শুরু করে। এ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা ভারতের একটি হোটেলে জড়ো হয়ে বৈঠক করে। সেখানে অবস্থান করে তারা বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ, বিতরণ, বিস্ফোরক সংগ্রহ, বোমা তৈরির পদ্ধতি ও হামলার কৌশল নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে। এরপর বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা জানান দিতে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি আবার সংগঠিত হয়। এ সময়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে তারা বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ব্যাপক পরিকল্পনা করে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি করে জঙ্গিরা শেষ হয়ে যায়নি এমন বার্তা দেয়া। সে অনুযায়ী তারা গোপন বৈঠক করে ভিন্ন ধর্মের লোক এবং বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশিদের উপর হামলার ছক তৈরি করে। কক্সবাজার সি বিচে প্রচুর বিদেশি বেড়াতে আসেন। জঙ্গিরা বিদেশে অস্তিত্ব জানান দিতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের উপর হামলা করার পরিকল্পনা করে তখন।

বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ভালো যোগাযোগ আছে। ফলে তাদের উপর হামলা হলে সে খবর এবং জঙ্গিদের অস্তিত্ব থাকার কথা সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের উপর হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গিরা।

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে প্রতিবছর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সে উৎসবের সময় সেখানে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়। সেখানে হামলা করে বহু লোককে হতাহত করা হলে সে খবরও আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে। এ জন্য জঙ্গিরা ধামরাইয়ে রথযাত্রা উৎসবে হামলার পরিকল্পনা হাতে নেয়।

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা হলে তার খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। এমন চিন্তা থেকে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা হাতে নেয়। হামলার আগে তারা আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় রাজধানীর পান্থপথে ওলিও হোটেল। কিন্তু ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে হামলার আগেই সে হোটেলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট। রাত ৩টার দিকে ওলিও হোটেলে তল্লাশি করার সময় ৪র্থ তলার ৩০১ নম্বর রুমে জঙ্গিদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ভোর সোয়া ৪টার দিকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। বরং তারা রুমের ভিতর বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে রুমে থাকা অজ্ঞাত জঙ্গিরা বিস্ফোরকসহ রুমের বাহিরে বের হয়ে উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হুমকি দেয়। এরপরই পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটের সময় হোটেলকে লক্ষ্য করে ৭টি টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তে হোটেলের রুমের ভেতর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৩০১ নম্বর রুমের বারান্দা, রেলিং ধসে পড়ে। এরপর পুলিশ গুলি করতে করতে হোটেলে ঢোকে। হোটেলে একটি অবিস্ফোরিত বোমা ও এক যুবকের মৃতদেহ পড়ে আছে দেখতে পায় । হোটেল রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম। সেখান থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার গোপন পরিকল্পনার কথা জানায়। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তাদের ব্যাংক হিসাব দেখে বিদেশ গমানাগমনের তথ্য উদ্ঘাটন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়। আর ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে আসামিদের মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ করেন। ওই ফোনের প্রেরিত আলামত ও মোবাইল ফোনের অডিও, ভিডিও পিকচার ফাইল পরীক্ষা করে কথোপকথনের তথ্য বের করেন। জঙ্গিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সহযোগীদের কল করেছেন। এভাবে এক জঙ্গি থেকে অন্য জঙ্গিরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও গাইডলাইন পেয়েছে। জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) একটি উগ্র গ্রুপ যা নব্য জেএমবি নামে পরিচিত।

সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুন্যালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার খান বলেন, এ আদালতে জঙ্গিবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলাসহ আলোচিত বিভিন্ন মামলার বিচার কার্য চলছে। এরমধ্যে পান্থপথের হোটেল অলিও ইন্টারন্যাশনালের বোমা হামলার মামলা আছে। মামলাগুলো যাতে দ্রুত বিচার কার্য শেষ করা যায় তার জন্য আদালত কাজ করছেন। জঙ্গিবাদের গুরুত্বপূর্ণ সব মামলা এ আদালতে বিচারাধীন আছে তিনি মুঠোফোনে জানান।