সিডও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই

নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। জাতিসংঘ সিডও সনদ গ্রহণ করে ১৯৭৯ সালে। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে কয়েকটি ধারা সংরক্ষিত রেখে সেই সনদে স্বাক্ষর করে। পরে কিছু ধারার ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হলেও সনদের ২ এবং ১৬-১(গ) ধারা থেকে এখনও সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্লিখিত দুটি ধারার সংরক্ষণ প্রত্যাহার ও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে সিডও দিবসে।

সিডও সনদের ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছেÑ যেসব আইন, রীতি, প্রথা নারীর প্রতি বৈষম্য তৈরি করে তা বাতিলের জন্য সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধারাকে নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠার মূল মন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু সরকারগুলো নারী-পুরুষের সমতা বিধানের লক্ষ্যে মূল কাজ করতে এখনও প্রস্তুত নয় বলে মনে হচ্ছে। দেশে বৈষম্যমূলক আইন, বিধি, প্রথা বিলোপে সরকারের বাধা কোথায়Ñ সেটা একটা প্রশ্ন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সম্পদে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ জরুরি এ কাজটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এর আগে সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মূলত উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে তুষ্ট করার জন্যই সিডও সনদের উল্লিখিত দুটি ধারা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক, বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা সংক্রান্ত ১৬-১(গ) ধারা নিয়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আপত্তি রয়েছে। সরকার ধর্মান্ধদের আপত্তি মেনে কাজ করছে বলে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়।

ধর্মীয় গোষ্ঠীদের তুষ্ট করার নীতি নিয়ে চললে নারী-পুরুষের সমতা কোনদিনই নিশ্চিত করা যাবে না। ধর্মান্ধরা বরাবরই সমাজকে টেনে ধরে অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে চায়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশে নারীর অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে না। অতীতে উগ্রবাদীদের বাধা উপেক্ষা করে দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময় নারীর কল্যাণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাদের পদক্ষেপের ফলে সতীদাহের মতো কুপ্রথার অবসান হয়েছে। বিধবা বিবাহের প্রচলন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা বর্তমান নেতাদের কাছ থেকে এমন দূরদর্শী পদক্ষেপ আশা করি। সিডও সনদের উল্লিখিত দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার ও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হলে নারীর অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। আমরা আশা করব, সরকার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।

শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭

সিডও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই

নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। জাতিসংঘ সিডও সনদ গ্রহণ করে ১৯৭৯ সালে। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে কয়েকটি ধারা সংরক্ষিত রেখে সেই সনদে স্বাক্ষর করে। পরে কিছু ধারার ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হলেও সনদের ২ এবং ১৬-১(গ) ধারা থেকে এখনও সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্লিখিত দুটি ধারার সংরক্ষণ প্রত্যাহার ও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে সিডও দিবসে।

সিডও সনদের ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছেÑ যেসব আইন, রীতি, প্রথা নারীর প্রতি বৈষম্য তৈরি করে তা বাতিলের জন্য সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধারাকে নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠার মূল মন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু সরকারগুলো নারী-পুরুষের সমতা বিধানের লক্ষ্যে মূল কাজ করতে এখনও প্রস্তুত নয় বলে মনে হচ্ছে। দেশে বৈষম্যমূলক আইন, বিধি, প্রথা বিলোপে সরকারের বাধা কোথায়Ñ সেটা একটা প্রশ্ন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সম্পদে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ জরুরি এ কাজটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এর আগে সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মূলত উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে তুষ্ট করার জন্যই সিডও সনদের উল্লিখিত দুটি ধারা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক, বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা সংক্রান্ত ১৬-১(গ) ধারা নিয়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আপত্তি রয়েছে। সরকার ধর্মান্ধদের আপত্তি মেনে কাজ করছে বলে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়।

ধর্মীয় গোষ্ঠীদের তুষ্ট করার নীতি নিয়ে চললে নারী-পুরুষের সমতা কোনদিনই নিশ্চিত করা যাবে না। ধর্মান্ধরা বরাবরই সমাজকে টেনে ধরে অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে চায়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশে নারীর অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে না। অতীতে উগ্রবাদীদের বাধা উপেক্ষা করে দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময় নারীর কল্যাণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাদের পদক্ষেপের ফলে সতীদাহের মতো কুপ্রথার অবসান হয়েছে। বিধবা বিবাহের প্রচলন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা বর্তমান নেতাদের কাছ থেকে এমন দূরদর্শী পদক্ষেপ আশা করি। সিডও সনদের উল্লিখিত দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার ও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হলে নারীর অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। আমরা আশা করব, সরকার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।