ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার অর্থ প্রদানে গড়িমসি কেন

কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কায় পুঁজি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন দেশের ছোট উদ্যোক্তারা। অস্তিত্ব রক্ষায় ঋণের চাহিদাও সবচেয়ে বেশি ছিল তাদের। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে ছোট উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছেন। বলা যায় প্রধানত বড় উদ্যোক্তারাই পেয়েছেন প্রণোদনার অর্থ।

করোনাভাইরাস সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করার কথা ব্যাংকগুলোর। এ সময়ের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ৭৬ শতাংশ অর্থ পেয়েছেন বড় উদ্যোক্তারা। যেখানে সিএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা পেয়েছেন বরাদ্দকৃত প্যাকেজের মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থ। অর্থাৎ বড় উদ্যোক্তাদের চার ভাগের একভাগ। আর কৃষক ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর প্যাকেজের ১০ শতাংশ অর্থও এখনও বিতরণই করা হয়নি।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার অর্থ প্রদানে বিলম্বের খবরটি হতাশাজনক। এটা মনে রাখা উচিত যে, জাতীয় অর্থনীতিতে বড় শিল্পগ্রুপগুলোর যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা টিকে না থাকলে বড়দেরও টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

প্রণোদনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিলম্বে প্রশ্নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্থ পেতে ব্যাংকারদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষিসহ ছোট ঋণ বিতরণের নীতিমালায় বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। করোনার মধ্যেই দেশে বন্যা নেমে এসেছে। এসব কারণে এসএমই, কৃষিসহ অন্য খাতের ছোট ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়নি। তবে বাস্তবতা হলো, গোটা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম এখন অনলাইনভিত্তিক। কাজেই উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার প্রাপ্য অর্থ তাদের বা তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দিতে কোনরকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে যে ব্যাংকারদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে সেটা স্পষ্ট। যেভাবেই হোক, এ অসঙ্গতি দূর করতে হবে। যেসব ক্ষুদ্র শিল্প এখন মরে যাচ্ছে, তাদের দরকার বেঁচে থাকা। প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের বাঁচাতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, ছোট ঋণে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বেশি হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো সব সময় মুনাফা খোঁজে। এজন্য ছোটদের জন্য গঠিত হওয়া ব্যাংকগুলোও এখন বড় ঋণের দিকে ঝুঁকছে। তাই এসব ব্যাংক যেন মুনাফার দিকে না ছুটে অর্থনীতির স্বার্থে ছোট ও মাঝারিদেরও ঋণ দেয় সেজন্য তাদের চাপে রাখতে হবে। প্রণোদনার বিনিময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি বা শর্ত ঠিকমতো প্রতিপালিত হচ্ছে কি-না, সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে। যেসব খাতে প্রণোদনা কাজে আসছে, সেখানে আরও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যেসব খাতে প্রণোদনা চোরাবালিতে হারিয়ে যায়, ভোক্তা বা গ্রাহকের কাজে আসে না-সেখানে অজনপ্রিয় হলেও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার অর্থ প্রদানে গড়িমসি কেন

কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কায় পুঁজি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন দেশের ছোট উদ্যোক্তারা। অস্তিত্ব রক্ষায় ঋণের চাহিদাও সবচেয়ে বেশি ছিল তাদের। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে ছোট উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছেন। বলা যায় প্রধানত বড় উদ্যোক্তারাই পেয়েছেন প্রণোদনার অর্থ।

করোনাভাইরাস সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করার কথা ব্যাংকগুলোর। এ সময়ের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ৭৬ শতাংশ অর্থ পেয়েছেন বড় উদ্যোক্তারা। যেখানে সিএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা পেয়েছেন বরাদ্দকৃত প্যাকেজের মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থ। অর্থাৎ বড় উদ্যোক্তাদের চার ভাগের একভাগ। আর কৃষক ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর প্যাকেজের ১০ শতাংশ অর্থও এখনও বিতরণই করা হয়নি।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার অর্থ প্রদানে বিলম্বের খবরটি হতাশাজনক। এটা মনে রাখা উচিত যে, জাতীয় অর্থনীতিতে বড় শিল্পগ্রুপগুলোর যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা টিকে না থাকলে বড়দেরও টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

প্রণোদনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিলম্বে প্রশ্নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্থ পেতে ব্যাংকারদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষিসহ ছোট ঋণ বিতরণের নীতিমালায় বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। করোনার মধ্যেই দেশে বন্যা নেমে এসেছে। এসব কারণে এসএমই, কৃষিসহ অন্য খাতের ছোট ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়নি। তবে বাস্তবতা হলো, গোটা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম এখন অনলাইনভিত্তিক। কাজেই উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার প্রাপ্য অর্থ তাদের বা তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দিতে কোনরকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে যে ব্যাংকারদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে সেটা স্পষ্ট। যেভাবেই হোক, এ অসঙ্গতি দূর করতে হবে। যেসব ক্ষুদ্র শিল্প এখন মরে যাচ্ছে, তাদের দরকার বেঁচে থাকা। প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের বাঁচাতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, ছোট ঋণে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বেশি হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো সব সময় মুনাফা খোঁজে। এজন্য ছোটদের জন্য গঠিত হওয়া ব্যাংকগুলোও এখন বড় ঋণের দিকে ঝুঁকছে। তাই এসব ব্যাংক যেন মুনাফার দিকে না ছুটে অর্থনীতির স্বার্থে ছোট ও মাঝারিদেরও ঋণ দেয় সেজন্য তাদের চাপে রাখতে হবে। প্রণোদনার বিনিময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি বা শর্ত ঠিকমতো প্রতিপালিত হচ্ছে কি-না, সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে। যেসব খাতে প্রণোদনা কাজে আসছে, সেখানে আরও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যেসব খাতে প্রণোদনা চোরাবালিতে হারিয়ে যায়, ভোক্তা বা গ্রাহকের কাজে আসে না-সেখানে অজনপ্রিয় হলেও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।