দেশের তরে সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে হবে

একটি গণতান্ত্রিক দেশের চতুর্থ স্তম্ভ হলো সেই দেশের স্বাধীন গণমাধ্যম। স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্রের ধারায় পরিচালিত একটি দেশ কখনও তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। সাধারণত একটি গণতান্ত্রিক দেশের সব কর্মকা-ের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে সেই দেশের মিডিয়া বা গণমাধ্যমগুলোতে। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থাও পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এই গণতান্ত্রিক দেশে হাজারও আধুনিক মিডিয়া বা গণমাধ্যম থাকলেও তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে সংবাদপত্রের অবস্থান। সংবাদপত্রকে বলা হয় জ্ঞানের সম্ভার। হাজারো জ্ঞানের যুগপৎ সমাধান ঘটে একটি সংবাদপত্রে। সংবাদপত্রের প্রত্যেকটি পাতার প্রত্যেকটি লাইন যেন অনিয়মের বিরুদ্ধে এক একটি স্লোগান। যার ফলে অনেক আগে থেকেই পুরো পৃথিবীর মতো এদেশের নাগরিকদের কাছেও সংবাদপত্র একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ? বর্তমানের এই কঠিন সময়েও এ সংবাদপত্র সামান্যতম পিছু হটেনি। সবাই যখন বাঁচার তাগিদে ঘরবন্দি হয়েছিল তখন পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজারো সাংবাদিক, এজেন্ট, হকার নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের তরে খবর সংগ্রহ করে তা আমাদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এই মানুষগুলো দেশটাকে নিজের পরিবার তুল্য করে লড়াইয়ে সামনের দিকে হেঁটেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। সামগ্রিক অর্থনীতি এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন থেমে যাওয়ার প্রভাবে করোনাকালে সংবাদপত্রের পাঠক এবং পত্রিকার প্রচার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। যার ফলে বিজ্ঞাপনের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। এদিকে কিছুদিন পরপরই করোনার কাছে পরাজিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে এক একজন সাংবাদিক। যে পত্রিকায় প্রতিদিন হাজারো অসহায় মানুষের দুঃখ হতাশার গল্প ছাপানো হয় আজ সেই পত্রিকাই আছে নিদারুণ সংকটে। এমন পরিস্থিতি সংবাদপত্রগুলো বাঁচার তাগিদে পৃষ্ঠার সংখ্যা কিছুটা হ্রাস করে সময়ের সঙ্গে লড়তে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক পত্রিকা সেই লড়াইয়ে হেরে যায় এবং এখনও প্রতিনিয়ত হেরেই যাচ্ছে। আঞ্চলিক বা জেলাভিত্তিক অনেক পত্রিকা একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি বলাই যায়, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ নানা সমস্যার কবলে আজ সংবাদপত্র শিল্প কঠিন এক বির্পযয়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সরকার থেকে পাঠক সবাইকে এক হওয়া। কারণ আমাদের এ গণতান্ত্রিক দেশের চতুর্থ স্তম্ভই হলো এই সংবাদপত্র। এই স্তম্ভের সামান্য ক্ষতি হলে অন্যান্য স্তম্ভগুলো পুরো দেশের ভার বহন করতে সক্ষম হবে না। ফলে পুরো দেশই সব পর্যায়ে পেছনে পড়ে যাবে। তাই উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজন সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। ইতোমধ্যে সরকার সংবাদপত্রকে বাঁচাতে ইহাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু করোনাকালে অন্যান্য শিল্প প্রণোদনার আওতায় এলেও সংবাদপত্রে তার কোন ছোঁয়া লাগেনি। এই ছোঁয়া না লাগার দরুন করোনার এই মহা দুর্যোগে দেশের সব সংবাদপত্র অর্থনৈতিকভাবে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাচ্ছে। তাই প্রশাসনের উচিত দেশকে বাঁচাতে সংবাদপত্র শিল্পকে অতি দ্রুতই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা। শুধু প্রশাসন নয়, এই শিল্পকে বাঁচাতে সাধারণ পাঠক, সাংবাদিকসহ সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে চলতে হবে। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে করোনার এমন পরিস্থিতিতেও সংবাদপত্র দেশের তরে শক্ত হাতে লড়তে পারবে আর করোনা উত্তর দেশে সংবাদপত্র মাথা উঁচু করে দেশ বির্নিমাণেও সরকারকে যোগ্য সহযোগিতা করতে পারবে।

আফসারুল আলম মামুন

আকুয়া, ময়মনসিংহ

আরও খবর

শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭

দেশের তরে সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে হবে

একটি গণতান্ত্রিক দেশের চতুর্থ স্তম্ভ হলো সেই দেশের স্বাধীন গণমাধ্যম। স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্রের ধারায় পরিচালিত একটি দেশ কখনও তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। সাধারণত একটি গণতান্ত্রিক দেশের সব কর্মকা-ের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে সেই দেশের মিডিয়া বা গণমাধ্যমগুলোতে। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থাও পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এই গণতান্ত্রিক দেশে হাজারও আধুনিক মিডিয়া বা গণমাধ্যম থাকলেও তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে সংবাদপত্রের অবস্থান। সংবাদপত্রকে বলা হয় জ্ঞানের সম্ভার। হাজারো জ্ঞানের যুগপৎ সমাধান ঘটে একটি সংবাদপত্রে। সংবাদপত্রের প্রত্যেকটি পাতার প্রত্যেকটি লাইন যেন অনিয়মের বিরুদ্ধে এক একটি স্লোগান। যার ফলে অনেক আগে থেকেই পুরো পৃথিবীর মতো এদেশের নাগরিকদের কাছেও সংবাদপত্র একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ? বর্তমানের এই কঠিন সময়েও এ সংবাদপত্র সামান্যতম পিছু হটেনি। সবাই যখন বাঁচার তাগিদে ঘরবন্দি হয়েছিল তখন পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজারো সাংবাদিক, এজেন্ট, হকার নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের তরে খবর সংগ্রহ করে তা আমাদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এই মানুষগুলো দেশটাকে নিজের পরিবার তুল্য করে লড়াইয়ে সামনের দিকে হেঁটেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। সামগ্রিক অর্থনীতি এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন থেমে যাওয়ার প্রভাবে করোনাকালে সংবাদপত্রের পাঠক এবং পত্রিকার প্রচার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। যার ফলে বিজ্ঞাপনের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। এদিকে কিছুদিন পরপরই করোনার কাছে পরাজিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে এক একজন সাংবাদিক। যে পত্রিকায় প্রতিদিন হাজারো অসহায় মানুষের দুঃখ হতাশার গল্প ছাপানো হয় আজ সেই পত্রিকাই আছে নিদারুণ সংকটে। এমন পরিস্থিতি সংবাদপত্রগুলো বাঁচার তাগিদে পৃষ্ঠার সংখ্যা কিছুটা হ্রাস করে সময়ের সঙ্গে লড়তে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক পত্রিকা সেই লড়াইয়ে হেরে যায় এবং এখনও প্রতিনিয়ত হেরেই যাচ্ছে। আঞ্চলিক বা জেলাভিত্তিক অনেক পত্রিকা একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি বলাই যায়, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ নানা সমস্যার কবলে আজ সংবাদপত্র শিল্প কঠিন এক বির্পযয়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সরকার থেকে পাঠক সবাইকে এক হওয়া। কারণ আমাদের এ গণতান্ত্রিক দেশের চতুর্থ স্তম্ভই হলো এই সংবাদপত্র। এই স্তম্ভের সামান্য ক্ষতি হলে অন্যান্য স্তম্ভগুলো পুরো দেশের ভার বহন করতে সক্ষম হবে না। ফলে পুরো দেশই সব পর্যায়ে পেছনে পড়ে যাবে। তাই উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজন সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। ইতোমধ্যে সরকার সংবাদপত্রকে বাঁচাতে ইহাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু করোনাকালে অন্যান্য শিল্প প্রণোদনার আওতায় এলেও সংবাদপত্রে তার কোন ছোঁয়া লাগেনি। এই ছোঁয়া না লাগার দরুন করোনার এই মহা দুর্যোগে দেশের সব সংবাদপত্র অর্থনৈতিকভাবে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাচ্ছে। তাই প্রশাসনের উচিত দেশকে বাঁচাতে সংবাদপত্র শিল্পকে অতি দ্রুতই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা। শুধু প্রশাসন নয়, এই শিল্পকে বাঁচাতে সাধারণ পাঠক, সাংবাদিকসহ সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে চলতে হবে। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে করোনার এমন পরিস্থিতিতেও সংবাদপত্র দেশের তরে শক্ত হাতে লড়তে পারবে আর করোনা উত্তর দেশে সংবাদপত্র মাথা উঁচু করে দেশ বির্নিমাণেও সরকারকে যোগ্য সহযোগিতা করতে পারবে।

আফসারুল আলম মামুন

আকুয়া, ময়মনসিংহ