এই বর্বর হামলার যথার্থ তদন্ত এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম দুর্বৃত্তদের ভয়াবহ হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে দুজন দুর্বৃত্ত তার সরকারি বাসভবনে ঢুকে ভারী হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ইউএনও ওয়াহিদা খানম মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে রক্ষা করতে এলে তার বাবাকেও মেরে আহত করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন দুজনই। হামলার পরদিন দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ, তবে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি হামলার প্রকৃত কারণ এবং আটককৃত দুজনই প্রকৃত হামলাকারী কি-না।

হামলার প্রকৃত কারণ এখন পর্যন্ত জানা না গেলেও ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই হামলা করা হয়েছিল বলে মনে করা যেতে পারে। এবং এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে যতটুকু বিবরণ পাওয়া গেছে তাতে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলার উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন করা এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা। তবে কাজটি অত্যন্ত দ্রুতই করতে হবে। আরেকটি বিষয়ের দিকে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেহেতু ঘটনাস্থল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে, সুতরাং আশঙ্কা রয়েছে অপরাধীরা পূর্বপরিকল্পনা এবং ব্যবস্থা মতো সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করতে পারে, যদি ইতোমধ্যে অতিক্রম না করে থাকে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বলে আমরা আশা করতে চাই।

এই হামলা এমন একজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর করা হয়েছে, যিনি উপজেলা স্তরে সর্বোচ্চ সরকারি নির্বাহী। উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রশাসনের বা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। সুতরাং এই হামলাকে অত্যন্ত গুরুতর একটি অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারি নীতিনির্ধারক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালকদেরও ভাবতে হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কোন পর্যায়ে গেলে কোন দুর্বৃত্ত হত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধির ওপর এমন মরণঘাতী হামলা করতে পারে। এইখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপরাধীদের বেপরোয়া মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণ মানুষ তো ভাবতেই পারেন একজন ইউএনওর ওপর যখন এমন মারাত্মক হামলা করার দুঃসাহস দুর্বৃত্তরা দেখাতে পারে, তখন সাধারণ মানুষের কী হবে! এ কথাও নিঃসন্দেহে বলা যায় এমন অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি, সমাজের দুর্বৃত্তায়ন, আইনশৃঙ্খলা পিরিস্থিতির ক্রমাবনতি, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়াভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের নিয়ন্ত্রহীন বৃদ্ধি, বিচার ও আইনের শাসনের অভাব, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিচার না করা, এ সবই বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে এরই পরিণতিতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা এবং মেজর (অব.) সিনহা হত্যা। বেপরোয়া মাদক ব্যবসা, লাগামহীন সন্ত্রাস, জবাবদিহিবিহীন-বিচারহীন মৃত্যু।

আমরা মনে করি ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা এবং মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনা দুটিকে রাষ্ট্রের প্রকৃত বাস্তবতার প্রতীকী ঘটনা হিসেবে বিচেনা করে রাষ্ট্রকে শুধু এই দুটি ঘটনার বিচার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিলেই অপরাধ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে উত্তরণ ঘটানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না। এ সম্পর্কিত উল্লিখিত কারণগুলোকেও দ্রুত এবং অতি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্রকে। না হলে, আমাদের আশঙ্কা এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

শনিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৫ মহররম ১৪৪২, ১৯ ভাদ্র ১৪২৭

এই বর্বর হামলার যথার্থ তদন্ত এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম দুর্বৃত্তদের ভয়াবহ হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে দুজন দুর্বৃত্ত তার সরকারি বাসভবনে ঢুকে ভারী হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ইউএনও ওয়াহিদা খানম মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে রক্ষা করতে এলে তার বাবাকেও মেরে আহত করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন দুজনই। হামলার পরদিন দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ, তবে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি হামলার প্রকৃত কারণ এবং আটককৃত দুজনই প্রকৃত হামলাকারী কি-না।

হামলার প্রকৃত কারণ এখন পর্যন্ত জানা না গেলেও ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই হামলা করা হয়েছিল বলে মনে করা যেতে পারে। এবং এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে যতটুকু বিবরণ পাওয়া গেছে তাতে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলার উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন করা এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা। তবে কাজটি অত্যন্ত দ্রুতই করতে হবে। আরেকটি বিষয়ের দিকে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেহেতু ঘটনাস্থল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে, সুতরাং আশঙ্কা রয়েছে অপরাধীরা পূর্বপরিকল্পনা এবং ব্যবস্থা মতো সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করতে পারে, যদি ইতোমধ্যে অতিক্রম না করে থাকে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বলে আমরা আশা করতে চাই।

এই হামলা এমন একজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর করা হয়েছে, যিনি উপজেলা স্তরে সর্বোচ্চ সরকারি নির্বাহী। উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রশাসনের বা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। সুতরাং এই হামলাকে অত্যন্ত গুরুতর একটি অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারি নীতিনির্ধারক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালকদেরও ভাবতে হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কোন পর্যায়ে গেলে কোন দুর্বৃত্ত হত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধির ওপর এমন মরণঘাতী হামলা করতে পারে। এইখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপরাধীদের বেপরোয়া মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণ মানুষ তো ভাবতেই পারেন একজন ইউএনওর ওপর যখন এমন মারাত্মক হামলা করার দুঃসাহস দুর্বৃত্তরা দেখাতে পারে, তখন সাধারণ মানুষের কী হবে! এ কথাও নিঃসন্দেহে বলা যায় এমন অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি, সমাজের দুর্বৃত্তায়ন, আইনশৃঙ্খলা পিরিস্থিতির ক্রমাবনতি, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়াভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের নিয়ন্ত্রহীন বৃদ্ধি, বিচার ও আইনের শাসনের অভাব, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিচার না করা, এ সবই বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে এরই পরিণতিতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা এবং মেজর (অব.) সিনহা হত্যা। বেপরোয়া মাদক ব্যবসা, লাগামহীন সন্ত্রাস, জবাবদিহিবিহীন-বিচারহীন মৃত্যু।

আমরা মনে করি ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা এবং মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনা দুটিকে রাষ্ট্রের প্রকৃত বাস্তবতার প্রতীকী ঘটনা হিসেবে বিচেনা করে রাষ্ট্রকে শুধু এই দুটি ঘটনার বিচার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিলেই অপরাধ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে উত্তরণ ঘটানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না। এ সম্পর্কিত উল্লিখিত কারণগুলোকেও দ্রুত এবং অতি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্রকে। না হলে, আমাদের আশঙ্কা এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।