কৃষি খাতে জোর দিতে হবে

কোভিড-১৯ ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হিসাবে বিরাট জায়গা করে নিয়েছে। কোভিড-১৯ এর আক্রমণ যেন থামছেই না। মৃত্যুর মিছিল যেন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে থেমে গিয়েছে অর্থনীতির চাকা। লকডাউন কয়েক মাস থাকার পর কিছুটা শিথিল করা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে আনতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। এমন অবস্থায় কৃষকদের দুর্ভোগের পরিমাণ যেন অসহনীয় মাত্রা যোগ করেছে বন্যা।

বাজারে শাকসবজি ক্রেতার চাহিদা কম দেখা দিয়েছে। পণ্যে বিক্রয় করতে না পেরে চাষিরা হয়েছেন দিশেহারা।থামছেনা যেখানে করোনার থাবা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বন্যা। ভেসে গিয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বাসস্থানের নেই ঠিকানা। পানির নিচে যেন ডুবে আছে তাদের জীবিকার চাকা। ফসলের বীজ বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ায় দেখা দিয়েছে চারার মূল্য বৃদ্ধি। বিপাকে পড়েছে কৃষক সমাজ।

মৎস্য চাষীদের যেন দুর্ভোগের সীমা অসীম। মৎস্য চাষের পুকুর ভেসে গিয়েছে বন্যার পানিতে। বাগেরহাট চিংড়ি চাষের জন্য বিখ্যাত। চিংড়ি চাষের পুকুরও ভেসে গিয়েছে। চিংড়ি অর্থনীতিতে বিরাট একটা জায়গা দখল করে রেখেছে বরাবরই। জামালপুর, সিরাজগঞ্জে লক্ষাধিক হেক্টর জমির মাছ চাষ ব্যাহত হয়েছে বন্যার কারণে।

করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে ২৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৭ হাজার ১৮ কোটি টাকার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে শুধু কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য। এ অর্থবছর সব খাতে মোট ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করেছে। কৃষি খাতে সার্বিক বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। উন্নয়ন খাতেও বাজেট বৃদ্ধি করা হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে খাদ্যসংকট সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি কখনো। জনসংখ্যার বেশির ভাগই জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। তবে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষকদের দেখা দিয়েছে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। এছাড়াও অনেক সময় দেখেছি ফসলের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। তবুও কিন্তু আমাদের দেশে কৃষিকাজ থেমে নেই। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে আসছে কৃষিকাজ।

সাম্প্রতিক বন্যায় ডুবে গিয়েছে তাদের ফসলাদি জমি। এমতাবস্থায় তাদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে, ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে আনতে হবে। সরকার কর্তৃক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে স্বল্প মুনাফায়। অনেক সময় দেখা গিয়েছে মুনাফার পরিমাণ বেশি থাকায় তাদের লভ্যাংশ থাকেই না বরং জমি-জমা বিক্রি করে সেসব ঋণ চুকাইতে হয়। কোভিড-১৯, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে কৃষক সমাজকে এগিয়ে রাখতে হবে। সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। দেশের বিরাট অংশের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা সচল থাকবে; পাশাপাশি দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা জড়িত আছেন, তাদের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে কৃষকদের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় জ্ঞাপন করবেন।

খায়রুজ্জামান খান

আরও খবর

শনিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৫ মহররম ১৪৪২, ১৯ ভাদ্র ১৪২৭

কৃষি খাতে জোর দিতে হবে

কোভিড-১৯ ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হিসাবে বিরাট জায়গা করে নিয়েছে। কোভিড-১৯ এর আক্রমণ যেন থামছেই না। মৃত্যুর মিছিল যেন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে থেমে গিয়েছে অর্থনীতির চাকা। লকডাউন কয়েক মাস থাকার পর কিছুটা শিথিল করা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে আনতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। এমন অবস্থায় কৃষকদের দুর্ভোগের পরিমাণ যেন অসহনীয় মাত্রা যোগ করেছে বন্যা।

বাজারে শাকসবজি ক্রেতার চাহিদা কম দেখা দিয়েছে। পণ্যে বিক্রয় করতে না পেরে চাষিরা হয়েছেন দিশেহারা।থামছেনা যেখানে করোনার থাবা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বন্যা। ভেসে গিয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বাসস্থানের নেই ঠিকানা। পানির নিচে যেন ডুবে আছে তাদের জীবিকার চাকা। ফসলের বীজ বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ায় দেখা দিয়েছে চারার মূল্য বৃদ্ধি। বিপাকে পড়েছে কৃষক সমাজ।

মৎস্য চাষীদের যেন দুর্ভোগের সীমা অসীম। মৎস্য চাষের পুকুর ভেসে গিয়েছে বন্যার পানিতে। বাগেরহাট চিংড়ি চাষের জন্য বিখ্যাত। চিংড়ি চাষের পুকুরও ভেসে গিয়েছে। চিংড়ি অর্থনীতিতে বিরাট একটা জায়গা দখল করে রেখেছে বরাবরই। জামালপুর, সিরাজগঞ্জে লক্ষাধিক হেক্টর জমির মাছ চাষ ব্যাহত হয়েছে বন্যার কারণে।

করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে ২৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৭ হাজার ১৮ কোটি টাকার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে শুধু কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য। এ অর্থবছর সব খাতে মোট ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করেছে। কৃষি খাতে সার্বিক বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। উন্নয়ন খাতেও বাজেট বৃদ্ধি করা হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে খাদ্যসংকট সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি কখনো। জনসংখ্যার বেশির ভাগই জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। তবে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষকদের দেখা দিয়েছে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। এছাড়াও অনেক সময় দেখেছি ফসলের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। তবুও কিন্তু আমাদের দেশে কৃষিকাজ থেমে নেই। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে আসছে কৃষিকাজ।

সাম্প্রতিক বন্যায় ডুবে গিয়েছে তাদের ফসলাদি জমি। এমতাবস্থায় তাদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে, ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে আনতে হবে। সরকার কর্তৃক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে স্বল্প মুনাফায়। অনেক সময় দেখা গিয়েছে মুনাফার পরিমাণ বেশি থাকায় তাদের লভ্যাংশ থাকেই না বরং জমি-জমা বিক্রি করে সেসব ঋণ চুকাইতে হয়। কোভিড-১৯, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে কৃষক সমাজকে এগিয়ে রাখতে হবে। সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। দেশের বিরাট অংশের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা সচল থাকবে; পাশাপাশি দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা জড়িত আছেন, তাদের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে কৃষকদের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় জ্ঞাপন করবেন।

খায়রুজ্জামান খান