করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৩৫ শনাক্ত ১৯৫০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাসে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ জনের মধ্যে। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৫ এবং নারী ১০ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ৩৪ জন এবং বাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়লো চার হাজার ৪৪৭ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৯৫০ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো তিন লাখ ২৩ হাজার ৫৬৫ জনে। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৬১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ১৭ হাজার ৮৫২ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৯২টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে ১২ হাজার ৩১৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১২ হাজার ৮৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৮ জনে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চলিশোর্ধ্ব দুইজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব পাঁচজন এবং ষাটোর্ধ্ব ২৫ জন ছিলেন। ঢাকা বিভাগের ছিলেন ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন, খুলনা বিভাগের ছয়জন, বরিশাল বিভাগের একজন, সিলেট বিভাগের একজন, রংপুর বিভাগের দুইজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ছিলেন একজন। এই পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৪৭৯ জন (৭৮ দশমিক ২৩ শতাংশ) এবং নারী ৯৬৮ জন (২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ)।

শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার : গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৬৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ অগাস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২৫ আগস্ট সেই সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৪৪ হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৮ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম স্থানে। তার মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশ রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসিনতার কারণে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। দেশে করোনা শনাক্তের প্রথমেই টেস্টের ব্যবস্থা করতে পারত। এখন ৯২টি ল্যাবে পরীক্ষা করছেন, এটা আগে করলেন না কেন? তিন মাস সময় পেলেন, ৬৪ জেলায় ৬৪টি ল্যাব বসালেন না কেন? দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার মেশিন ছিল, এগুলো কাজে লাগালেন না কেন? এখন করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই করোনা দেশে কখন নিয়ন্ত্রণে আসবে তাও জানা নেই কারও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা গত জুনের মাঝামাঝি সংক্রমণ কমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির সঙ্গে ওই পূর্বাভাস মিলছে না। প্রতিদিনই মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন কমবেশি হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, সঠিক সময়ে যথাযথভাবে সেগুলো গ্রহণ করা যায়নি। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে করে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক সময়ে পরিস্থিতি অনুধাবন করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন আমরা সবাই মিলে এর মাশুল দিচ্ছি। চীনে সংক্রমণের পর যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ তা গ্রহণ করেনি।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৩৫ শনাক্ত ১৯৫০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাসে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ জনের মধ্যে। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৫ এবং নারী ১০ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ৩৪ জন এবং বাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়লো চার হাজার ৪৪৭ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৯৫০ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো তিন লাখ ২৩ হাজার ৫৬৫ জনে। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৬১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ১৭ হাজার ৮৫২ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৯২টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে ১২ হাজার ৩১৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১২ হাজার ৮৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৮ জনে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চলিশোর্ধ্ব দুইজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব পাঁচজন এবং ষাটোর্ধ্ব ২৫ জন ছিলেন। ঢাকা বিভাগের ছিলেন ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন, খুলনা বিভাগের ছয়জন, বরিশাল বিভাগের একজন, সিলেট বিভাগের একজন, রংপুর বিভাগের দুইজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ছিলেন একজন। এই পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৪৭৯ জন (৭৮ দশমিক ২৩ শতাংশ) এবং নারী ৯৬৮ জন (২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ)।

শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার : গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৬৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ অগাস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২৫ আগস্ট সেই সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৪৪ হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৮ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম স্থানে। তার মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশ রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসিনতার কারণে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। দেশে করোনা শনাক্তের প্রথমেই টেস্টের ব্যবস্থা করতে পারত। এখন ৯২টি ল্যাবে পরীক্ষা করছেন, এটা আগে করলেন না কেন? তিন মাস সময় পেলেন, ৬৪ জেলায় ৬৪টি ল্যাব বসালেন না কেন? দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার মেশিন ছিল, এগুলো কাজে লাগালেন না কেন? এখন করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই করোনা দেশে কখন নিয়ন্ত্রণে আসবে তাও জানা নেই কারও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা গত জুনের মাঝামাঝি সংক্রমণ কমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির সঙ্গে ওই পূর্বাভাস মিলছে না। প্রতিদিনই মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন কমবেশি হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, সঠিক সময়ে যথাযথভাবে সেগুলো গ্রহণ করা যায়নি। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে করে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক সময়ে পরিস্থিতি অনুধাবন করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন আমরা সবাই মিলে এর মাশুল দিচ্ছি। চীনে সংক্রমণের পর যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ তা গ্রহণ করেনি।