ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে শক্তি নেই

জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটলে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা। রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ইউএনও ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তার ডান হাত ও পা কোনভাবেই উঠানো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুা ভালো বলা হলেও এখনও তাকে শঙ্কামুক্ত বলছেন না চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটলে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন বলে আশা করছি গতকাল ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি একথা জানান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত ডিজি বলেন, তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। জ্ঞান ফিরেছে। আমাদের একটা স্কোরিং সিস্টেম আছে, যেটাতে তার স্কোর ১৫ এর কাছাকাছি। আর ১৫ হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষের নরমাল সিচুয়েশন। আশা করছি, জীবাণুর সংক্রমণ না হলে তিনি দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন।

ওয়াহিদাকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আপাতত রোগী স্টেবল। তার স্বজনরা চাইলে বিদেশ নিতে পারেন। তবে আমাদের দিক থেকে এই মুহূর্তে রোগী শিফট করা প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করছি না। নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ৭২ ঘণ্টা শেষ হলো আমাদের মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া তাকে যে ধরনের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটা জীবাণুমুক্ত ছিল কিনা তা তো আমরা জানি না। এই মুহূর্তে বিষয়টি বলা কঠিন, ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে বোঝা যাবে সেখানে ইনফেকশন হবে কিনা। যেহেতু তার শরীরে এখনও কোন ইনফেকশন নেই। তার মানে এই না যে আগামীতে হবে না।

এদিকে গতকাল ইউএনও ওয়াহিদা খানের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তার ডান হাত ও পা কোনভাবেই উঠানো যাচ্ছে না। উনি যখন প্রথম আসেন, তখন উনার ব্লাড প্রেসার ও পালস ঠিক ছিল না। আপনারা মনে করতে পারেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই কেন অপারেশন করা হয়নি। কারণ, রোগীকে একটা স্টেবল পজিশনে না নিয়ে অপারেশন করা যায় না। অপারেশনের পরে উনি এখন নিজের নাম বলতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন। বর্তমানে উনার অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তিনি বলেন, যেহেতু উনার মাথার অংশটা কাটা ছিল এবং ময়লা ছিল অনেক, যার ফলে ওই জায়গাটা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন আমাদের ভয় হলো ইনফেকশন। যদি ইনফেকশন না হয়, তবে উনার উন্নতিটা স্মুথ হবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, ওয়াহিদা খানমের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা স্থিতিশীল, উন্নতির দিকে। প্রথম যখন উনি এসে ছিলেন, তখন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তবে অপারেশনটা আমরা সাকসেসফুলি করতে পেরেছি। যখন উনি এসেছিলেন তখন এইটুকু অবস্থাও উনার ছিল না। উনার ডান সাইডটা এখনও অবশ আছে। ৭২ ঘণ্টা পরে আমরা চিন্তা করবো আইসিইউ থেকে স্টেপ ডাউন করবো কি করবো না।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে।

ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমান তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এদিকে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগের কয়েক নেতা রয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে চুরি করতে গিয়ে দুর্বত্তরা এ হামলা করেছে। তবে ঘটনা অন্য কিছু আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে শক্তি নেই

জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটলে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা। রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ইউএনও ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তার ডান হাত ও পা কোনভাবেই উঠানো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুা ভালো বলা হলেও এখনও তাকে শঙ্কামুক্ত বলছেন না চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটলে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন বলে আশা করছি গতকাল ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি একথা জানান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত ডিজি বলেন, তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। জ্ঞান ফিরেছে। আমাদের একটা স্কোরিং সিস্টেম আছে, যেটাতে তার স্কোর ১৫ এর কাছাকাছি। আর ১৫ হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষের নরমাল সিচুয়েশন। আশা করছি, জীবাণুর সংক্রমণ না হলে তিনি দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন।

ওয়াহিদাকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আপাতত রোগী স্টেবল। তার স্বজনরা চাইলে বিদেশ নিতে পারেন। তবে আমাদের দিক থেকে এই মুহূর্তে রোগী শিফট করা প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করছি না। নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ৭২ ঘণ্টা শেষ হলো আমাদের মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া তাকে যে ধরনের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটা জীবাণুমুক্ত ছিল কিনা তা তো আমরা জানি না। এই মুহূর্তে বিষয়টি বলা কঠিন, ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে বোঝা যাবে সেখানে ইনফেকশন হবে কিনা। যেহেতু তার শরীরে এখনও কোন ইনফেকশন নেই। তার মানে এই না যে আগামীতে হবে না।

এদিকে গতকাল ইউএনও ওয়াহিদা খানের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তার ডান হাত ও পা কোনভাবেই উঠানো যাচ্ছে না। উনি যখন প্রথম আসেন, তখন উনার ব্লাড প্রেসার ও পালস ঠিক ছিল না। আপনারা মনে করতে পারেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই কেন অপারেশন করা হয়নি। কারণ, রোগীকে একটা স্টেবল পজিশনে না নিয়ে অপারেশন করা যায় না। অপারেশনের পরে উনি এখন নিজের নাম বলতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন। বর্তমানে উনার অনুভূতি আছে, তবে শক্তি নেই। তিনি বলেন, যেহেতু উনার মাথার অংশটা কাটা ছিল এবং ময়লা ছিল অনেক, যার ফলে ওই জায়গাটা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন আমাদের ভয় হলো ইনফেকশন। যদি ইনফেকশন না হয়, তবে উনার উন্নতিটা স্মুথ হবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, ওয়াহিদা খানমের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা স্থিতিশীল, উন্নতির দিকে। প্রথম যখন উনি এসে ছিলেন, তখন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তবে অপারেশনটা আমরা সাকসেসফুলি করতে পেরেছি। যখন উনি এসেছিলেন তখন এইটুকু অবস্থাও উনার ছিল না। উনার ডান সাইডটা এখনও অবশ আছে। ৭২ ঘণ্টা পরে আমরা চিন্তা করবো আইসিইউ থেকে স্টেপ ডাউন করবো কি করবো না।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে।

ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমান তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এদিকে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগের কয়েক নেতা রয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে চুরি করতে গিয়ে দুর্বত্তরা এ হামলা করেছে। তবে ঘটনা অন্য কিছু আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।