চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি

এক সময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে চাকরি নেন কক্সবাজারের উখিয়া হলিদিয়া পালংয়ের বাসিন্দা সুজন বড়ুয়া। এরপর একের পর এক রহস্যজনক পদোন্নতি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। সম্প্রতি সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক-স্বাস্থ্য ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপারিচালক) ডা. অসীম কুমার নাথকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান সদস্য সচিব এবং ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিমকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর এই তদন্ত কমিটি গঠনের পর এর অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ফেনী, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ৯ দফতরে।

গঠিত এই তদন্ত কমিটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য’র চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ‘জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার’ বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মচারী বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ পাঠিয়েছে। এসব মীমাংসিত বিষয় দাবি করে সুজন বড়ুয়া প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি। ‘সুজনের বিরুদ্ধে উঠা ‘জাল-জালিয়াতি, দুই চাকরি, রহস্যজনক পদোন্নতি ও যৌন কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ উঠে আসার ঘটনায় আপনার দফতর থেকে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, তার বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট কোন বাদী নেই।

জানা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানের স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে একই সংস্থায় দুই চাকরি নেয়ার অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। ২০০৪ সালে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে চাকরি নেন ‘সুজন বড়ুয়া’। সেসময় তার স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলিদিয়া উইনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রাম। ওই গ্রামের বিমল বড়ুয়ার পুত্র তিনি। এই পদে প্রায় ৮ বছর চাকরি করার পর-ওই চাকরি থাকা অবস্থায় ২০১২ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন সুজন। এই চাকরিতে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বালুখালী উত্তর ঘুনধুম বড়ুয়া পাড়া। কারণ জেলা পরিষদের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ব্যতীত বাইরের প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগই ছিল না।

বান্দরবানে জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হওয়ার পর উপজাতি এক নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হয় সুজনের বিরুদ্ধে। ওই সময় জেলার সিভিল সার্জন, থানচি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। যৌন নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। উঠে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজন বড়ুয়া বলেন, সবকিছুই ষড়যন্ত্র। কর্মদক্ষতায় অল্প সময়ে পদোন্নতি পেয়েছি। দুই ঠিকানা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বে কক্সবাজারের উখিয়ার বাসিন্দা ছিলাম। পরে নাইক্ষ্যংছড়িতে জমি কিনে স্থানীয় বাসিন্দা হয়েছি। সুজনের দাবী, বান্দরবানের অতীত সিভিল সার্জন নিজে তদন্ত করে নিজেই সুজনকে নিষ্পাপ সদন দিয়েছেন।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

দুই স্থায়ী ঠিকানায় স্বাস্থ্যের দুই চাকরি

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রাম ব্যুরো

এক সময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে চাকরি নেন কক্সবাজারের উখিয়া হলিদিয়া পালংয়ের বাসিন্দা সুজন বড়ুয়া। এরপর একের পর এক রহস্যজনক পদোন্নতি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। সম্প্রতি সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক-স্বাস্থ্য ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপারিচালক) ডা. অসীম কুমার নাথকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান সদস্য সচিব এবং ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিমকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর এই তদন্ত কমিটি গঠনের পর এর অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ফেনী, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ৯ দফতরে।

গঠিত এই তদন্ত কমিটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য’র চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ‘জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার’ বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মচারী বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ পাঠিয়েছে। এসব মীমাংসিত বিষয় দাবি করে সুজন বড়ুয়া প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি। ‘সুজনের বিরুদ্ধে উঠা ‘জাল-জালিয়াতি, দুই চাকরি, রহস্যজনক পদোন্নতি ও যৌন কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ উঠে আসার ঘটনায় আপনার দফতর থেকে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, তার বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট কোন বাদী নেই।

জানা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানের স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে একই সংস্থায় দুই চাকরি নেয়ার অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। ২০০৪ সালে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে চাকরি নেন ‘সুজন বড়ুয়া’। সেসময় তার স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলিদিয়া উইনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রাম। ওই গ্রামের বিমল বড়ুয়ার পুত্র তিনি। এই পদে প্রায় ৮ বছর চাকরি করার পর-ওই চাকরি থাকা অবস্থায় ২০১২ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন সুজন। এই চাকরিতে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বালুখালী উত্তর ঘুনধুম বড়ুয়া পাড়া। কারণ জেলা পরিষদের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ব্যতীত বাইরের প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগই ছিল না।

বান্দরবানে জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হওয়ার পর উপজাতি এক নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হয় সুজনের বিরুদ্ধে। ওই সময় জেলার সিভিল সার্জন, থানচি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। যৌন নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। উঠে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজন বড়ুয়া বলেন, সবকিছুই ষড়যন্ত্র। কর্মদক্ষতায় অল্প সময়ে পদোন্নতি পেয়েছি। দুই ঠিকানা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বে কক্সবাজারের উখিয়ার বাসিন্দা ছিলাম। পরে নাইক্ষ্যংছড়িতে জমি কিনে স্থানীয় বাসিন্দা হয়েছি। সুজনের দাবী, বান্দরবানের অতীত সিভিল সার্জন নিজে তদন্ত করে নিজেই সুজনকে নিষ্পাপ সদন দিয়েছেন।