ঋণের টাকায় ঋণ শোধ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

সম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার মতো অনিয়ম হচ্ছে। ঋণগ্রহীতাদের একটি অংশ এভাবে ঋণের অপব্যবহার করছে। এতে করে খেলাপি ঋণের নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে থেকেই কঠোর বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ করোনাকালে নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার প্রবণতা টের পেয়ে ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন কোন ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার অর্থ হলো, উদ্যোক্তা ঋণের যথাযথ ব্যবহার করছেন না। বিষয়টা ঋণ-শৃঙ্খলার পরিপন্থি। ওই ঋণ কোথাও বিনিয়োগ করার কথা এবং সেখান থেকে আসা মুনাফার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করার কথা। এর ব্যত্যয় হওয়া মানেই ঋণটি নতুন করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ল।

আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায় ব্যাংকারের। ঋণ দেয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করা হচ্ছে না। আর এ কারণেই অনিয়ম হচ্ছে। এবং এও সহজেই অনুমেয় যে, ঋণ জালিয়াতির পেছনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। সর্ষের ভেতরের এ ভুত তাড়াতে না পারলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ফিরবে না।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এখন যে ঋণ দিচ্ছে, তার প্রায় সবই বিতরণ করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সরকারের প্রণোদনার আওতায়। প্রণোদনাসহ সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা ঋণের সুদহারের অর্ধেক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার বেশি হারেও ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে সরকার। এর মানে, গ্রাহক প্রচলিত সুদের অনেক কম হারে এখন ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে কেউ হয়তো কম সুদে চলতি মূলধন ঋণ নিয়ে বেশি সুদের পুরাতন ঋণ সমন্বয় করছেন। এতে করে সরকার কর্মসংস্থান ধরে রাখার যে উদ্দেশ্যে সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে, তা ব্যাহত হচ্ছে।

একটি ঋণের অর্থ দিয়ে কোনভাবেই অপর কোন ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না। এ বিষয়ে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তা মেনে চলতে হবে। এরপরও যেসব ব্যাংক যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করে গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেয়া হয়েছে বা হবে, সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। প্রণোদনার আওতায় চলতি মূলধন ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করলেন কিনা, সেটা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পরিবীক্ষণ করা উচিত।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

ঋণের টাকায় ঋণ শোধ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

সম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার মতো অনিয়ম হচ্ছে। ঋণগ্রহীতাদের একটি অংশ এভাবে ঋণের অপব্যবহার করছে। এতে করে খেলাপি ঋণের নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে থেকেই কঠোর বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ করোনাকালে নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার প্রবণতা টের পেয়ে ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন কোন ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার অর্থ হলো, উদ্যোক্তা ঋণের যথাযথ ব্যবহার করছেন না। বিষয়টা ঋণ-শৃঙ্খলার পরিপন্থি। ওই ঋণ কোথাও বিনিয়োগ করার কথা এবং সেখান থেকে আসা মুনাফার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করার কথা। এর ব্যত্যয় হওয়া মানেই ঋণটি নতুন করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ল।

আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায় ব্যাংকারের। ঋণ দেয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করা হচ্ছে না। আর এ কারণেই অনিয়ম হচ্ছে। এবং এও সহজেই অনুমেয় যে, ঋণ জালিয়াতির পেছনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। সর্ষের ভেতরের এ ভুত তাড়াতে না পারলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ফিরবে না।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এখন যে ঋণ দিচ্ছে, তার প্রায় সবই বিতরণ করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সরকারের প্রণোদনার আওতায়। প্রণোদনাসহ সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা ঋণের সুদহারের অর্ধেক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার বেশি হারেও ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে সরকার। এর মানে, গ্রাহক প্রচলিত সুদের অনেক কম হারে এখন ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে কেউ হয়তো কম সুদে চলতি মূলধন ঋণ নিয়ে বেশি সুদের পুরাতন ঋণ সমন্বয় করছেন। এতে করে সরকার কর্মসংস্থান ধরে রাখার যে উদ্দেশ্যে সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে, তা ব্যাহত হচ্ছে।

একটি ঋণের অর্থ দিয়ে কোনভাবেই অপর কোন ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না। এ বিষয়ে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তা মেনে চলতে হবে। এরপরও যেসব ব্যাংক যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করে গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেয়া হয়েছে বা হবে, সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। প্রণোদনার আওতায় চলতি মূলধন ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করলেন কিনা, সেটা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পরিবীক্ষণ করা উচিত।