জালের মতো বিছিয়ে আছে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ

কোম্পানির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের

‘ঘুষ না পাওয়ায় লিকেজ মেরামত করেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদের অবহেলার কারণেই নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে’- স্থানীয়দের এমন অভিযোগ এবং ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা কতটুকু সত্যি, তা তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসবে। তবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও যে ‘দুধে ধোয়া তুলসী পাতা’ নয়, এর প্রমাণ সর্বত্রই দৃশ্যমান। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলায় জালের মতো বিছিয়ে আছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, যা সবার চোখের সামনে। আবার তিতাসের ‘মিটার রিডার’ থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকরি ছেড়ে টাকার জোরে জনপ্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার ঘটনাও সবাই জানে।

গ্যাস পাইপ লাইনে (বিতরণ লাইনে) লিকেজের কারণে দুর্ঘটনা নতুন নয়। ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত তিতাস গ্যাস কোম্পানির ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপ লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। রয়েছে ২০ থেকে ৪০ বছরের পুরাতন বিতরণ লাইন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আগাম বার্তা পাওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা চরম শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। যদিও তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্যাস লিকেজের বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। স্থানীয় কোন ঠিকাদার হয়ত বলেছে এলাকাবাসী যা অফিস পর্যন্ত পৌঁছায়নি। দুর্ঘটনার পর তারা এসব জানতে পেরেছেন। তবে শুধু তিতাস নয় সরকারি অনেক খাতের সেবাই সাধারণ মানুষের কাছে ‘সোনার হরিণ’, যা দ্রুত না পাওয়ার ভুড়িভুড়ি উদাহরণ রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় দৃশ্যমান অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন বছরের পর বছর ধরে বহাল আছে। অবৈধ এসব বিতরণ লাইন টানা হয়েছে কোথাও ব্রিজের উপর দিয়ে, কোথাও সড়কের পাশ দিয়ে। বিতরণ নকশা বিহর্ভূত এলাকায় বাড়ি বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শত শত রাইজার। তিতাস গ্যাস কোম্পানি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সবার চোখের সামনে চলছে এসব অবৈধ লাইন। স্থানীয় একটি সূত্র মতে, নারয়াণগঞ্জ সদর ও বন্দর এলাকায় ব্যাপকভাবে অবৈধ লাইন টানা হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে, তিতাসের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়ের ছত্রছায়ায়। ওই আত্মীয় বাড়ি বন্দর। তাকে তৎকালীন স্থানীয় কর্মকর্তারা সমীহ করে চলতেন। সূত্র বলছে, পরবর্তীতে তিতাসের এক সিবিএ নেতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ আরও বৃদ্ধি পায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার এবং রূপগঞ্জে জালের মতো বিছিয়ে আছে অবৈধ সংযোগ। সর্বত্র এসব অবৈধ সংযোগ থেকে এককালীন টাকা পেয়েছে তিতাস গ্যাসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার কোথাও কোথাও এককালীন টাকা নেয়ার পরও মাসোহারা নিচ্ছে একটি চক্র, যার ভাগ তিতাস গ্যাসের কর্মীরাও পাচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের চাপে কোথাও লাইন কাটা হলেও স্থানীয় কর্তপক্ষকে ম্যানেজ করে কিছুদিন পরই আবার অবৈধ সংযোগ নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সমর্থকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে এই গ্যাস চুরির মহাযজ্ঞ। রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ চাইলে এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন কিছু নয়। এক্ষেত্রে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। যেহেতু কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের একটি চক্রের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগের বিস্তার ঘটাছে, তাই দ্রুত তদন্ত করে প্রথমে নিজ কোম্পানির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি এসব অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছেদের পর ওই স্থানে নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে গ্যাস চোর চক্র পুনঃসংযোগ না নিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র ধরে বলছেন, তিতাসের আওতাধীন এলাকায় সাড়ে তিন লাখের বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এসব সংযোগ চলছে। যা রাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষতি। সে হিসেবে তিতাসের সিস্টেম লসের পরিমাণ কম হওয়ার বিষয়টিও বিশ্লেষকদের নজরে এসেছে। তারা বলছেন, পুরো তিতাসেই চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। জরুরিভিত্তিতে কোম্পানিটির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরমর্শ দিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদেরও নজরদারির আওতায় আনার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা।

তিতাসের জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন সম্পর্কে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান সংবাদকে বলেন, ঝুঁকি নিরসনে এবং টেকসই উন্নয়নে বিতরণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে পুরনো পাইপ লাইনের বদলে নতুন করে পাইপ স্থাপন করতে এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। ১৪৩টি ব্লকে ভাগ করে ৪শ’ কিলোমিটার নতুন পাইপ স্থাপন করা হবে। ঘনবসতি এলাকায় সর্বনিম্ন দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হবে। তিনি বলেন, আমরা তিতাসের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমকে আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে নিয়ে আসব। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে তিতাসের আওতাধীন যে কোন স্থানে গ্যাস লাইনে লিকেজ হলে সঙ্গে সঙ্গে সে তথ্য আমাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে চলে আসবে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি একেবারেই কমে আসবে। আর একটা সুবিধা হবে, কোথাও বিতরণ লাইন ফুটো করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করা হলে, সে বিষয়টিও নজরে আসবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ফলে গ্যাস চুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদকে জ্বালানি সচিব বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দরে অবৈধ সংযোগ বেশি। পুলিশ, স্থানীয় প্রশসানকে নিয়ে সম্প্রতি সমন্বিত অভিযান অভিযান পরিচালনা করে আমরা বন্দরে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করেছি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা আসে। তবে কোন বাধায় আর কাজ হবে না। সব অবৈধ লাইন উচ্ছেদ হবে। কোথাও কোন অবৈধ সংযোগ থাকবে না।

গত ২৩ আগস্ট গজারিয়ায় ব্রিজের উপর দিয়ে দৃশম্যান অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছবিসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী মো. আল-মামুন ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, তাকে তথ্য জানানো হলে, দ্রুত সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। গতকাল রাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও বড় ভাটেরচর বিজ্রের উপরের সেই অবৈধ লাইন এবং হোসেন্দি, নাজিরচর এবং ফুলদি গ্রাম পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অবৈধ লাইন চলছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে জড়িতদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে। তিতাসের ৫০ শতাংশ লোক বের করে দিতে হলে তাও করা হবে। তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতে জনগণের পাশপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সজাগ থাকতে হবে।

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

জালের মতো বিছিয়ে আছে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ

কোম্পানির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের

‘ঘুষ না পাওয়ায় লিকেজ মেরামত করেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদের অবহেলার কারণেই নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে’- স্থানীয়দের এমন অভিযোগ এবং ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা কতটুকু সত্যি, তা তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসবে। তবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও যে ‘দুধে ধোয়া তুলসী পাতা’ নয়, এর প্রমাণ সর্বত্রই দৃশ্যমান। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলায় জালের মতো বিছিয়ে আছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, যা সবার চোখের সামনে। আবার তিতাসের ‘মিটার রিডার’ থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকরি ছেড়ে টাকার জোরে জনপ্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার ঘটনাও সবাই জানে।

গ্যাস পাইপ লাইনে (বিতরণ লাইনে) লিকেজের কারণে দুর্ঘটনা নতুন নয়। ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত তিতাস গ্যাস কোম্পানির ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপ লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। রয়েছে ২০ থেকে ৪০ বছরের পুরাতন বিতরণ লাইন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আগাম বার্তা পাওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা চরম শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। যদিও তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্যাস লিকেজের বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। স্থানীয় কোন ঠিকাদার হয়ত বলেছে এলাকাবাসী যা অফিস পর্যন্ত পৌঁছায়নি। দুর্ঘটনার পর তারা এসব জানতে পেরেছেন। তবে শুধু তিতাস নয় সরকারি অনেক খাতের সেবাই সাধারণ মানুষের কাছে ‘সোনার হরিণ’, যা দ্রুত না পাওয়ার ভুড়িভুড়ি উদাহরণ রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় দৃশ্যমান অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন বছরের পর বছর ধরে বহাল আছে। অবৈধ এসব বিতরণ লাইন টানা হয়েছে কোথাও ব্রিজের উপর দিয়ে, কোথাও সড়কের পাশ দিয়ে। বিতরণ নকশা বিহর্ভূত এলাকায় বাড়ি বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শত শত রাইজার। তিতাস গ্যাস কোম্পানি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সবার চোখের সামনে চলছে এসব অবৈধ লাইন। স্থানীয় একটি সূত্র মতে, নারয়াণগঞ্জ সদর ও বন্দর এলাকায় ব্যাপকভাবে অবৈধ লাইন টানা হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে, তিতাসের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়ের ছত্রছায়ায়। ওই আত্মীয় বাড়ি বন্দর। তাকে তৎকালীন স্থানীয় কর্মকর্তারা সমীহ করে চলতেন। সূত্র বলছে, পরবর্তীতে তিতাসের এক সিবিএ নেতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ আরও বৃদ্ধি পায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার এবং রূপগঞ্জে জালের মতো বিছিয়ে আছে অবৈধ সংযোগ। সর্বত্র এসব অবৈধ সংযোগ থেকে এককালীন টাকা পেয়েছে তিতাস গ্যাসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার কোথাও কোথাও এককালীন টাকা নেয়ার পরও মাসোহারা নিচ্ছে একটি চক্র, যার ভাগ তিতাস গ্যাসের কর্মীরাও পাচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের চাপে কোথাও লাইন কাটা হলেও স্থানীয় কর্তপক্ষকে ম্যানেজ করে কিছুদিন পরই আবার অবৈধ সংযোগ নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সমর্থকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে এই গ্যাস চুরির মহাযজ্ঞ। রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ চাইলে এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন কিছু নয়। এক্ষেত্রে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। যেহেতু কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের একটি চক্রের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগের বিস্তার ঘটাছে, তাই দ্রুত তদন্ত করে প্রথমে নিজ কোম্পানির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি এসব অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছেদের পর ওই স্থানে নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে গ্যাস চোর চক্র পুনঃসংযোগ না নিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র ধরে বলছেন, তিতাসের আওতাধীন এলাকায় সাড়ে তিন লাখের বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এসব সংযোগ চলছে। যা রাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষতি। সে হিসেবে তিতাসের সিস্টেম লসের পরিমাণ কম হওয়ার বিষয়টিও বিশ্লেষকদের নজরে এসেছে। তারা বলছেন, পুরো তিতাসেই চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। জরুরিভিত্তিতে কোম্পানিটির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরমর্শ দিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদেরও নজরদারির আওতায় আনার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা।

তিতাসের জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন সম্পর্কে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান সংবাদকে বলেন, ঝুঁকি নিরসনে এবং টেকসই উন্নয়নে বিতরণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে পুরনো পাইপ লাইনের বদলে নতুন করে পাইপ স্থাপন করতে এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। ১৪৩টি ব্লকে ভাগ করে ৪শ’ কিলোমিটার নতুন পাইপ স্থাপন করা হবে। ঘনবসতি এলাকায় সর্বনিম্ন দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হবে। তিনি বলেন, আমরা তিতাসের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমকে আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে নিয়ে আসব। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে তিতাসের আওতাধীন যে কোন স্থানে গ্যাস লাইনে লিকেজ হলে সঙ্গে সঙ্গে সে তথ্য আমাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে চলে আসবে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি একেবারেই কমে আসবে। আর একটা সুবিধা হবে, কোথাও বিতরণ লাইন ফুটো করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করা হলে, সে বিষয়টিও নজরে আসবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ফলে গ্যাস চুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদকে জ্বালানি সচিব বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দরে অবৈধ সংযোগ বেশি। পুলিশ, স্থানীয় প্রশসানকে নিয়ে সম্প্রতি সমন্বিত অভিযান অভিযান পরিচালনা করে আমরা বন্দরে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করেছি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা আসে। তবে কোন বাধায় আর কাজ হবে না। সব অবৈধ লাইন উচ্ছেদ হবে। কোথাও কোন অবৈধ সংযোগ থাকবে না।

গত ২৩ আগস্ট গজারিয়ায় ব্রিজের উপর দিয়ে দৃশম্যান অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছবিসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী মো. আল-মামুন ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, তাকে তথ্য জানানো হলে, দ্রুত সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। গতকাল রাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও বড় ভাটেরচর বিজ্রের উপরের সেই অবৈধ লাইন এবং হোসেন্দি, নাজিরচর এবং ফুলদি গ্রাম পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অবৈধ লাইন চলছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে জড়িতদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে। তিতাসের ৫০ শতাংশ লোক বের করে দিতে হলে তাও করা হবে। তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতে জনগণের পাশপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সজাগ থাকতে হবে।