তিতাস-ডিপিডিসি-মসজিদ কমিটি কার দায় কত?

পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদ। প্রায় ত্রিশ বছর আগে তিন শতাংশ জমির ওপর চারদিকে টিন শেড দিয়ে মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে টিনের ঘর ভেঙে চারপাশে অতিরিক্ত আরও তিন শতাংশ জায়গা নিয়ে তিনতলা ভবন (চারতলা ভিত্তিপ্রস্তর) নির্মাণ করা হয়। সামনে বর্ধিতাংশের নিচ দিয়েই গিয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইন। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতেন। মাত্র তিন বছর আগে মসজিদটিতে দেড় টনের ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র স্থাপন করা হয়। দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি এসিই ছিল মসজিদের নিচতলায়। মসজিদে পৃথক দুটি বিদ্যুতের লাইন থাকলেও মিটার ছিল একটি। একটি সুইচ থেকেই লাইন পরিবর্তন করা হতো। গত শনি ও রোববার মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের অন্তত পনের জনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

মসজিদ কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মো. আল-আমিন বলেন, বিভিন্নজন এই মসজিদের জন্য জমি দান করেছেন। পরে মসজিদ ওয়াকফ এর নামে করা হয়। মসজিদে হাজীগঞ্জ ও ফতুল্লার দুটি বিদ্যুতের লাইন আছে। তবে মিটার রয়েছে একটাই। ঘটনার দিন একটির লাইন চলে গেলে অন্যটির সুইচ দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।

মসজিদের মেঝের নিচে গ্যাসের লাইন রয়েছে। এমনটাই জানে স্থানীয় এলাকাবাসী। লাইনে লিকেজ রয়েছে এবং লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়েছে এই বিষয়টি নজরে এসেছিল কয়েক মাস আগেই। তবে সম্প্রতি বিষয়টি আরও প্রত্যক্ষ হয় যখন মসজিদের ভেতর বৃষ্টির পানি জমা হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫-২০ দিন আগে টানা বৃষ্টিপাতে পশ্চিম তল্লা এলাকার রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। পানি ঢুকে পড়ে মসজিদের ভেতরেও। পরে মসজিদের মেঝে থেকে বুদ বুদ বের হতে থাকে। এটি যে গ্যাসের লাইনের লিকেজের কারণেই তা বুঝতে দেরি হয় না মসজিদ পরিচালনা কমিটির। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান (বিস্ফোরণে দগ্ধ) লিকেজের কথা জানান তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে। তবে বিষয়টি আমলে নেয়নি তিতাস।

মাওলানা মো. আল-আমিন বলেন, গ্যাস লাইন অনেক আগে থেকেই ছিল। টিনের মসজিদ থাকাবস্থায় গ্যাস লাইনের রাইজারগুলো মসজিদের সামনে ছিল। সামনের দিকে বাড়িয়ে পাকা করার সময় লাইনগুলো মসজিদের নিচে চলে যায়। এটা এলাকা এবং মসজিদ কমিটির সবাইই জানত। মসজিদ বর্ধিত করা হয় আগের কমিটি থাকাবস্থায়। এ ব্যাপারে উদাসীন ছিল তিতাস কর্তৃপক্ষও।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফতুল্লা ইউপির সাবেক সদস্য আবদুল গফুর বলেন, তৎক্ষণাৎ লিকেজের বিষয়টি তিতাসকে জানান সেক্রেটারি সাহেব। তিতাস ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় লিকেজ মেরামত করা হয়নি। গ্যাস লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ কেন করা হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি আবদুল গফুর।

গ্যাস লাইনের লিকেজের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিতাস গ্যাস কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মসজিদের নিচ থেকে গ্যাস বের হচ্ছে এমন কোন তথ্য আমাদের দেয়া হয় নাই। রাস্তার উপর দিয়ে আমাদের লাইন আছে। মসজিদের মেঝের নিচে কোন লাইন আছে কিনা তা মাটি খুঁড়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের আগে কিছু বলতে পারছি না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম তল্লা এলাকায় প্রচুর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু শনিবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি নিজে সাংবাদিকদের মসজিদের পাশেই একটি বাড়ির লাইন দেখিয়ে বলেন, এইরকম অবৈধ গ্যাস সংযোগ এই এলাকায় রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কী পরিমান অবৈধ সংযোগ সেখানে রয়েছে তা চেক না করে বলা যাবে না। তবে শীঘ্রই এসব গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

গত শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ভেতর ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং লিকেজ থেকে জমা হওয়া গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে ধারণা করেই তদন্ত চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির। দ-বিধির ৩০৪(ক) ধারায় রেকর্ড করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ভয়াবহ বিস্ফোরণ অবহেলার কারণে ঘটেছে। যার কারণে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আসামি অজ্ঞাত করা হয়েছে। যাদের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে, তদন্তের রিপোর্টে যারা দোষী হবে তারাই এ মামলার আসামি হবে। তাদেরকে এ মামলায় আইনের আওতায় আনা হবে।

এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব উপপরিচালক নূর হাসানের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। গত শনিবার মসজিদে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও রোববার থেকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক নূর হাসান বলেন, আমরা লোকজনের সাথে কথা বলছি। বিভিন্নজনের জবানবন্দি নিচ্ছি। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিষয়টিও দেখছি। মসজিদের নিচে কোন জায়গা দিয়ে পাইপ গিয়েছে সেটাও খুড়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষ হলে একটি ডিসিশনে আসতে পারবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস ছিল এবং বিদ্যুতের স্পার্ক অবশ্যই হয়েছে। দুই মিলেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

এই বিস্ফোরণের দায় তিতাস এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ডিপিডিসির পঞ্চবটি অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন। পাশাপাশি এসির বিস্ফোরণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না বলেও জানান তিনি। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক লাইনে স্পার্ক করা কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার। তাতে এত বড় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে না। সেখানে বুদ বুদ পানিই প্রমাণ করছিল সেখানে গ্যাস লাইনের লিকেজের কথা। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদ পরিদর্শন করে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সবধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

এই মসজিদে দুটি বৈদ্যুতিক লাইন ছিল নিশ্চিত করে রুহুল আমিন বলেন, রমজানের তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সবগুলো মসজিদেই কিন্তু দুটি লাইন থাকে। এই মসজিদেও লাইন তেমনটা ছিল। তবে একটি মসজিদে দু’টি মিটার দেয়ার সুযোগ নেই বলে একটাই মিটার মসজিদে।

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিস্ফোরণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের সম্পর্কে শুধু আলোচনা হবে, পরীক্ষা হবে; এই সমস্ত আজগুবি কথা না বলে এটার ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে একটা বিচার হওয়া উচিত।’

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের বিষয়টি আগেই জানিয়েছেন। তার কথার সূত্র ধরেই বলছি, তদন্তে যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

বিস্ফোরণ ঘটনায়

তিতাস-ডিপিডিসি-মসজিদ কমিটি কার দায় কত?

পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের 

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদ। প্রায় ত্রিশ বছর আগে তিন শতাংশ জমির ওপর চারদিকে টিন শেড দিয়ে মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে টিনের ঘর ভেঙে চারপাশে অতিরিক্ত আরও তিন শতাংশ জায়গা নিয়ে তিনতলা ভবন (চারতলা ভিত্তিপ্রস্তর) নির্মাণ করা হয়। সামনে বর্ধিতাংশের নিচ দিয়েই গিয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইন। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতেন। মাত্র তিন বছর আগে মসজিদটিতে দেড় টনের ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র স্থাপন করা হয়। দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি এসিই ছিল মসজিদের নিচতলায়। মসজিদে পৃথক দুটি বিদ্যুতের লাইন থাকলেও মিটার ছিল একটি। একটি সুইচ থেকেই লাইন পরিবর্তন করা হতো। গত শনি ও রোববার মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের অন্তত পনের জনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

মসজিদ কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মো. আল-আমিন বলেন, বিভিন্নজন এই মসজিদের জন্য জমি দান করেছেন। পরে মসজিদ ওয়াকফ এর নামে করা হয়। মসজিদে হাজীগঞ্জ ও ফতুল্লার দুটি বিদ্যুতের লাইন আছে। তবে মিটার রয়েছে একটাই। ঘটনার দিন একটির লাইন চলে গেলে অন্যটির সুইচ দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।

মসজিদের মেঝের নিচে গ্যাসের লাইন রয়েছে। এমনটাই জানে স্থানীয় এলাকাবাসী। লাইনে লিকেজ রয়েছে এবং লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়েছে এই বিষয়টি নজরে এসেছিল কয়েক মাস আগেই। তবে সম্প্রতি বিষয়টি আরও প্রত্যক্ষ হয় যখন মসজিদের ভেতর বৃষ্টির পানি জমা হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫-২০ দিন আগে টানা বৃষ্টিপাতে পশ্চিম তল্লা এলাকার রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। পানি ঢুকে পড়ে মসজিদের ভেতরেও। পরে মসজিদের মেঝে থেকে বুদ বুদ বের হতে থাকে। এটি যে গ্যাসের লাইনের লিকেজের কারণেই তা বুঝতে দেরি হয় না মসজিদ পরিচালনা কমিটির। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান (বিস্ফোরণে দগ্ধ) লিকেজের কথা জানান তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে। তবে বিষয়টি আমলে নেয়নি তিতাস।

মাওলানা মো. আল-আমিন বলেন, গ্যাস লাইন অনেক আগে থেকেই ছিল। টিনের মসজিদ থাকাবস্থায় গ্যাস লাইনের রাইজারগুলো মসজিদের সামনে ছিল। সামনের দিকে বাড়িয়ে পাকা করার সময় লাইনগুলো মসজিদের নিচে চলে যায়। এটা এলাকা এবং মসজিদ কমিটির সবাইই জানত। মসজিদ বর্ধিত করা হয় আগের কমিটি থাকাবস্থায়। এ ব্যাপারে উদাসীন ছিল তিতাস কর্তৃপক্ষও।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফতুল্লা ইউপির সাবেক সদস্য আবদুল গফুর বলেন, তৎক্ষণাৎ লিকেজের বিষয়টি তিতাসকে জানান সেক্রেটারি সাহেব। তিতাস ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় লিকেজ মেরামত করা হয়নি। গ্যাস লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ কেন করা হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি আবদুল গফুর।

গ্যাস লাইনের লিকেজের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিতাস গ্যাস কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মসজিদের নিচ থেকে গ্যাস বের হচ্ছে এমন কোন তথ্য আমাদের দেয়া হয় নাই। রাস্তার উপর দিয়ে আমাদের লাইন আছে। মসজিদের মেঝের নিচে কোন লাইন আছে কিনা তা মাটি খুঁড়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের আগে কিছু বলতে পারছি না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম তল্লা এলাকায় প্রচুর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু শনিবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি নিজে সাংবাদিকদের মসজিদের পাশেই একটি বাড়ির লাইন দেখিয়ে বলেন, এইরকম অবৈধ গ্যাস সংযোগ এই এলাকায় রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কী পরিমান অবৈধ সংযোগ সেখানে রয়েছে তা চেক না করে বলা যাবে না। তবে শীঘ্রই এসব গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

গত শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ভেতর ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং লিকেজ থেকে জমা হওয়া গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে ধারণা করেই তদন্ত চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির। দ-বিধির ৩০৪(ক) ধারায় রেকর্ড করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ভয়াবহ বিস্ফোরণ অবহেলার কারণে ঘটেছে। যার কারণে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আসামি অজ্ঞাত করা হয়েছে। যাদের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে, তদন্তের রিপোর্টে যারা দোষী হবে তারাই এ মামলার আসামি হবে। তাদেরকে এ মামলায় আইনের আওতায় আনা হবে।

এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব উপপরিচালক নূর হাসানের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। গত শনিবার মসজিদে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও রোববার থেকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক নূর হাসান বলেন, আমরা লোকজনের সাথে কথা বলছি। বিভিন্নজনের জবানবন্দি নিচ্ছি। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিষয়টিও দেখছি। মসজিদের নিচে কোন জায়গা দিয়ে পাইপ গিয়েছে সেটাও খুড়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষ হলে একটি ডিসিশনে আসতে পারবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস ছিল এবং বিদ্যুতের স্পার্ক অবশ্যই হয়েছে। দুই মিলেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

এই বিস্ফোরণের দায় তিতাস এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ডিপিডিসির পঞ্চবটি অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন। পাশাপাশি এসির বিস্ফোরণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না বলেও জানান তিনি। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক লাইনে স্পার্ক করা কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার। তাতে এত বড় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে না। সেখানে বুদ বুদ পানিই প্রমাণ করছিল সেখানে গ্যাস লাইনের লিকেজের কথা। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদ পরিদর্শন করে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সবধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

এই মসজিদে দুটি বৈদ্যুতিক লাইন ছিল নিশ্চিত করে রুহুল আমিন বলেন, রমজানের তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সবগুলো মসজিদেই কিন্তু দুটি লাইন থাকে। এই মসজিদেও লাইন তেমনটা ছিল। তবে একটি মসজিদে দু’টি মিটার দেয়ার সুযোগ নেই বলে একটাই মিটার মসজিদে।

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিস্ফোরণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের সম্পর্কে শুধু আলোচনা হবে, পরীক্ষা হবে; এই সমস্ত আজগুবি কথা না বলে এটার ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে একটা বিচার হওয়া উচিত।’

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের বিষয়টি আগেই জানিয়েছেন। তার কথার সূত্র ধরেই বলছি, তদন্তে যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।