সংসদে প্রধানমন্ত্রী

মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে, অবশ্যই কারণ বের হবে

অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে, মসজিদে যে বিস্ফোরণটা ঘটল, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা যেখানে গেছেন, নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং এই ঘটনাটা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, সেটার ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। আমি মনে করি, অবশ্যই কারণ বের হবে।’

প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের মসজিদে এসি বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গতকাল জাতীয় সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে এই ধরনের একটা বিস্ফোরণ হলো। যেখানে ওইটুকু একটা জায়গায় ছয়টা এসি লাগানো, আবার শোনা যাচ্ছে ওখানে গ্যাসের লাইনের উপরেই নাকি এই মসজিদটা নির্মাণ। সাধারণত যেখানে গ্যাসের পাইপলাইন থাকে সেখানে কিন্তু কোন নির্মাণ কাজ হয় না। আমি জানি না, এটার পারমিসন দিয়েছে কিনা। কারণ এই ধরনের পারমিসন তো দিতে পারে না, দেয়া উচিত না। কারণ এটা সব সময়ই খুব... মানে একটা আশঙ্কাজনক (অবস্থায়) থাকে। তো সেটাই এখন তদন্ত করে দেখা হবে।’

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে (এয়ার কন্ডিশনার) একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই দুর্ঘটনায় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল, এরমধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছেন।

এ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে ‘লিকেজ থেকে’ গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ফায়ার ব্রিগেডের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদের নিচতলায় দেড় টনের ছয়টি এসি ছিল। সবগুলো একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব তারা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছেন।

মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে আলোচনায় আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশেই মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছেমতো, মানে এয়ারকন্ডিশনার লাগাচ্ছেন, বা যেখানে সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আদৌ একটা স্থাপনা করবার মতো কিনা, বা যথযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বা সেভাবে নকশাগুলো করা হয়েছে কিনা- সে বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটতে পারে। কাজেই এই ধরনের একটা ঘটে গেছে এইটা সত্যিই খুব দুঃখজনক এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত আমি কামনা করি।’

মসজিদে এখন সবাই দান করে-মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল তো সবার পয়সাও আছে। এয়ারকন্ডিশনার দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহটা বা বিদ্যুৎ লাইন কতটা নিতে পারবে সেই ক্যাপাসিটি ছিল কিনা, সার্কিট ব্রেকার ছিল কিনা বা এইসব বিষয়গুলো কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি নিহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।

মসজিদে বিস্ফোরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডা. সামন্ত লালের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কেও তিনি নিয়মিত খোঁজ রাখছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকজন এ পর্যন্ত মারা গেছেন এবং বাকি যারা তাদের বেশিরভাগের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ, তারপরও চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসার আমরা ব্যবস্থা করেছি। এখন আল্লাহ যদি এদের জীবনটা দিয়ে যান।’

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে, অবশ্যই কারণ বের হবে

অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে

image

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে, মসজিদে যে বিস্ফোরণটা ঘটল, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা যেখানে গেছেন, নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং এই ঘটনাটা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, সেটার ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। আমি মনে করি, অবশ্যই কারণ বের হবে।’

প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের মসজিদে এসি বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গতকাল জাতীয় সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে এই ধরনের একটা বিস্ফোরণ হলো। যেখানে ওইটুকু একটা জায়গায় ছয়টা এসি লাগানো, আবার শোনা যাচ্ছে ওখানে গ্যাসের লাইনের উপরেই নাকি এই মসজিদটা নির্মাণ। সাধারণত যেখানে গ্যাসের পাইপলাইন থাকে সেখানে কিন্তু কোন নির্মাণ কাজ হয় না। আমি জানি না, এটার পারমিসন দিয়েছে কিনা। কারণ এই ধরনের পারমিসন তো দিতে পারে না, দেয়া উচিত না। কারণ এটা সব সময়ই খুব... মানে একটা আশঙ্কাজনক (অবস্থায়) থাকে। তো সেটাই এখন তদন্ত করে দেখা হবে।’

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে (এয়ার কন্ডিশনার) একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই দুর্ঘটনায় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল, এরমধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছেন।

এ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে ‘লিকেজ থেকে’ গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ফায়ার ব্রিগেডের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদের নিচতলায় দেড় টনের ছয়টি এসি ছিল। সবগুলো একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব তারা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছেন।

মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে আলোচনায় আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশেই মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছেমতো, মানে এয়ারকন্ডিশনার লাগাচ্ছেন, বা যেখানে সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আদৌ একটা স্থাপনা করবার মতো কিনা, বা যথযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বা সেভাবে নকশাগুলো করা হয়েছে কিনা- সে বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটতে পারে। কাজেই এই ধরনের একটা ঘটে গেছে এইটা সত্যিই খুব দুঃখজনক এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত আমি কামনা করি।’

মসজিদে এখন সবাই দান করে-মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল তো সবার পয়সাও আছে। এয়ারকন্ডিশনার দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহটা বা বিদ্যুৎ লাইন কতটা নিতে পারবে সেই ক্যাপাসিটি ছিল কিনা, সার্কিট ব্রেকার ছিল কিনা বা এইসব বিষয়গুলো কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি নিহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।

মসজিদে বিস্ফোরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডা. সামন্ত লালের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কেও তিনি নিয়মিত খোঁজ রাখছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকজন এ পর্যন্ত মারা গেছেন এবং বাকি যারা তাদের বেশিরভাগের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ, তারপরও চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসার আমরা ব্যবস্থা করেছি। এখন আল্লাহ যদি এদের জীবনটা দিয়ে যান।’