নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ডা. জাফরুল্লাহর

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানি ‘সরকারের ব্যর্থতা’ মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল দুপুরে মসজিদটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুলভ্রান্তিকে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি। এখানে এতো প্রাণহানি সরকারের ব্যর্থতা। সরকার এটা ঘটায়নি কিন্তু দগ্ধদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারা তাদের ব্যর্থতা। তারা প্রত্যেক সময় অর্ধেক কাজ করে বিলীন হয়ে যান। তারা যদি সচেতন থাকত তাহলে অর্ধেক লোকও মারা যেত না। অর্ধেক লোক শান্তি পেত যদি এখানেই (নারায়ণগঞ্জে) চিকিৎসা করা যেত।

নারায়ণগঞ্জের কোন হাসপাতালে দগ্ধ রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকাতে দুঃখ প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এটাই একমাত্র ঘটনা। এখানে আসার আগে আমি বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে আমি আমার কান্না থামিয়ে রেখেছি। একটা দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে তাদের যে চিকিৎসাটা দেয়া উচিত ছিল সেটা হয় নাই। এত বড় একটা জেলা শহর, এত বড় একটা হাসপাতাল। এখানে উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে মরফিন ইনজেকশন দেয়া। তাহলে ব্যাথাটা থাকত না। দুর্ভাগ্য যে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। অথচ ওষুধের দাম খুব বেশি না। একটা ইনজেকশনের দাম ৩৫ টাকা মাত্র। সরকার চাইলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমতে পারত।

‘এখান থেকে ঢাকাতে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময়। এই যে কষ্টটা, আগুনে পোড়ার এই ব্যাথাটা আপনার উপলব্ধি করতে পারবেন না। আমাদের সরকার একটু সতর্ক হলে একটু ব্যবস্থা নিলে ২৪ জনের জায়গায় অর্ধেক লোক কম মারা যেত।’ মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্যের এই প্রতিষ্ঠাতা।

দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের দাবি জানান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে স্বাস্থ্য বিভাগেরও একটা ব্যর্থতা আছে। এখানে তারা প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে একটা বার্ন ইউনিট দেয়া। এটা কিন্তু খুব সোজা কাজ। এর খরচও বেশি না। দু’দিনেই যেকোন ডাক্তারকে খুব ভালোভাবে ট্রেনিং দেয়া যায়। আগামী এক মাসের মধ্যে ৬৪ জেলায় কম করে দু’জন ডাক্তারকে দুই থেকে তিন দিনের ট্রেনিং দিয়ে সেটা খুব সহজে করা যায়। প্রয়োজনে আমিও সরকারকে সহযোগিতা করব।

বিস্ফোরণে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের সম্পর্কে শুধু আলোচনা হবে, পরীক্ষা হবে এই সমস্ত আজগুবি কথা না বলে এটার ৭ দিনের মধ্যে একটা বিচার হওয়া উচিত।’

গত শুক্রবার সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনেক প্রাণহানি হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ আরও ১৩ জন জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ডা. জাফরুল্লাহর

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানি ‘সরকারের ব্যর্থতা’ মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল দুপুরে মসজিদটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুলভ্রান্তিকে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি। এখানে এতো প্রাণহানি সরকারের ব্যর্থতা। সরকার এটা ঘটায়নি কিন্তু দগ্ধদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারা তাদের ব্যর্থতা। তারা প্রত্যেক সময় অর্ধেক কাজ করে বিলীন হয়ে যান। তারা যদি সচেতন থাকত তাহলে অর্ধেক লোকও মারা যেত না। অর্ধেক লোক শান্তি পেত যদি এখানেই (নারায়ণগঞ্জে) চিকিৎসা করা যেত।

নারায়ণগঞ্জের কোন হাসপাতালে দগ্ধ রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকাতে দুঃখ প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এটাই একমাত্র ঘটনা। এখানে আসার আগে আমি বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে আমি আমার কান্না থামিয়ে রেখেছি। একটা দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে তাদের যে চিকিৎসাটা দেয়া উচিত ছিল সেটা হয় নাই। এত বড় একটা জেলা শহর, এত বড় একটা হাসপাতাল। এখানে উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে মরফিন ইনজেকশন দেয়া। তাহলে ব্যাথাটা থাকত না। দুর্ভাগ্য যে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। অথচ ওষুধের দাম খুব বেশি না। একটা ইনজেকশনের দাম ৩৫ টাকা মাত্র। সরকার চাইলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমতে পারত।

‘এখান থেকে ঢাকাতে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময়। এই যে কষ্টটা, আগুনে পোড়ার এই ব্যাথাটা আপনার উপলব্ধি করতে পারবেন না। আমাদের সরকার একটু সতর্ক হলে একটু ব্যবস্থা নিলে ২৪ জনের জায়গায় অর্ধেক লোক কম মারা যেত।’ মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্যের এই প্রতিষ্ঠাতা।

দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের দাবি জানান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে স্বাস্থ্য বিভাগেরও একটা ব্যর্থতা আছে। এখানে তারা প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে একটা বার্ন ইউনিট দেয়া। এটা কিন্তু খুব সোজা কাজ। এর খরচও বেশি না। দু’দিনেই যেকোন ডাক্তারকে খুব ভালোভাবে ট্রেনিং দেয়া যায়। আগামী এক মাসের মধ্যে ৬৪ জেলায় কম করে দু’জন ডাক্তারকে দুই থেকে তিন দিনের ট্রেনিং দিয়ে সেটা খুব সহজে করা যায়। প্রয়োজনে আমিও সরকারকে সহযোগিতা করব।

বিস্ফোরণে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের সম্পর্কে শুধু আলোচনা হবে, পরীক্ষা হবে এই সমস্ত আজগুবি কথা না বলে এটার ৭ দিনের মধ্যে একটা বিচার হওয়া উচিত।’

গত শুক্রবার সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনেক প্রাণহানি হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ আরও ১৩ জন জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।