বাল্যবিবাহ ও তরুণ প্রজন্ম

বিবাহ মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও পবিত্র বন্ধন। তবে বাল্যবিবাহ দেশ ও জাতির জন্য একটি অভিশাপ। বাল্যবিবাহ বর্তমানে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি মারাত্মক ভাইরাস ও আতঙ্কের নাম হয়ে পড়েছে।প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় যাপিত জীবনে আধুনিকতা ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমেনি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ঘরবন্দী সময়টাতে বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুতই বাড়ছে বাল্যবিবাহ, যা গ্রাম গণ্ডি পেরিয়ে সারাদেশে ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে এ সমস্যা। বাল্যবিবাহ শুধু দরিদ্র অল্পশিক্ষিত পরিবারেই ঘটছে তা নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও ঘটছে অহরহ । বাবা-মায়ের অসচেতনতামূলক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা এই বাল্যবিবাহে ধ্বংস হয় একটি মন, একটি পরিবার, একটি সমাজ, সর্বোপরি একটি রাষ্ট্র। আর বর্তমান পৃথিবী হারাচ্ছে আগামীর পৃথিবীকে, এবং দেশ হারাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ গড়ার হাতিয়ারগুলো। এক কথায় বলা যায় বাল্যবিবাহে পুড়ছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

একটি দেশের উন্নতি করতে হলে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানোর বিকল্প নেই। তাই, আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়তে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতেই হবে। এইজন্যে রাষ্ট্র ও জনতার ঐক্যবদ্ধতার দরকার। আমরা জানি, বাল্যকাল বা পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পূর্বে যে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাল্যবিবাহ মানেই অন্ধকারে আবদ্ধ হলো যেন তাদের জীবন। বাল্যবিবাহের শিকার ছেলে-মেয়ের শিক্ষা স্বাস্থ্য বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা তাকে সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ইউনিসেফের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগেই হয়ে যায়। বাল্যবিবাহের বিভিন্ন কারণ লক্ষ্য করা যায়, তার প্রধান কারণ দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা, সামাজিক চাপ, নিরাপত্তার অভাব, যৌন নির্যাতন, যৌতুকপ্রথা, ইভটিজিং অশিক্ষা, অসচেতনতা ইত্যাদি। আজকের শিশু ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পতিত হচ্ছে । বাল্যবিবাহ পরিমাণ না কমালে, নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি, প্রসবকালীন খিঁচুনি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদসহ নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকবে। বাল্যবিবাহ নির্মূল করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণগুলো চিহ্নিত করে এবং বাবা-মায়ের সদিচ্ছাই পারে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে। শুধু তাই নয়, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মাঝে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া, গণমাধ্যমের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ বন্ধে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাল্যবিবাহ রোধে যুবকদের নেতৃত্বে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, প্রশাসন প্রচার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং গ্রামে বাল্যবিবাহের শাস্তি কী হতে পারে তা যদি প্রচার করতো, তাহলে অনেক বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হতো। বাবা-মায়ের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে কাজীরা যদি টাকার কাছে হার না মেনে শপথ নিতো তাহলে বাল্যবিবাহ নির্মূল করা সম্ভব হতো। সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে হয়তো অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতো শত শত প্রাণ। শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়তে হতো না- বাল্যবিবাহের কশাঘাতে ভোগা তরুণ প্রজন্ম।

হাছিবুল বাসার মানিক

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

বাল্যবিবাহ ও তরুণ প্রজন্ম

বিবাহ মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও পবিত্র বন্ধন। তবে বাল্যবিবাহ দেশ ও জাতির জন্য একটি অভিশাপ। বাল্যবিবাহ বর্তমানে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি মারাত্মক ভাইরাস ও আতঙ্কের নাম হয়ে পড়েছে।প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় যাপিত জীবনে আধুনিকতা ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমেনি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ঘরবন্দী সময়টাতে বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুতই বাড়ছে বাল্যবিবাহ, যা গ্রাম গণ্ডি পেরিয়ে সারাদেশে ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে এ সমস্যা। বাল্যবিবাহ শুধু দরিদ্র অল্পশিক্ষিত পরিবারেই ঘটছে তা নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও ঘটছে অহরহ । বাবা-মায়ের অসচেতনতামূলক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা এই বাল্যবিবাহে ধ্বংস হয় একটি মন, একটি পরিবার, একটি সমাজ, সর্বোপরি একটি রাষ্ট্র। আর বর্তমান পৃথিবী হারাচ্ছে আগামীর পৃথিবীকে, এবং দেশ হারাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ গড়ার হাতিয়ারগুলো। এক কথায় বলা যায় বাল্যবিবাহে পুড়ছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

একটি দেশের উন্নতি করতে হলে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানোর বিকল্প নেই। তাই, আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়তে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতেই হবে। এইজন্যে রাষ্ট্র ও জনতার ঐক্যবদ্ধতার দরকার। আমরা জানি, বাল্যকাল বা পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পূর্বে যে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাল্যবিবাহ মানেই অন্ধকারে আবদ্ধ হলো যেন তাদের জীবন। বাল্যবিবাহের শিকার ছেলে-মেয়ের শিক্ষা স্বাস্থ্য বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা তাকে সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ইউনিসেফের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগেই হয়ে যায়। বাল্যবিবাহের বিভিন্ন কারণ লক্ষ্য করা যায়, তার প্রধান কারণ দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা, সামাজিক চাপ, নিরাপত্তার অভাব, যৌন নির্যাতন, যৌতুকপ্রথা, ইভটিজিং অশিক্ষা, অসচেতনতা ইত্যাদি। আজকের শিশু ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পতিত হচ্ছে । বাল্যবিবাহ পরিমাণ না কমালে, নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি, প্রসবকালীন খিঁচুনি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদসহ নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকবে। বাল্যবিবাহ নির্মূল করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণগুলো চিহ্নিত করে এবং বাবা-মায়ের সদিচ্ছাই পারে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে। শুধু তাই নয়, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মাঝে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া, গণমাধ্যমের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ বন্ধে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাল্যবিবাহ রোধে যুবকদের নেতৃত্বে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, প্রশাসন প্রচার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং গ্রামে বাল্যবিবাহের শাস্তি কী হতে পারে তা যদি প্রচার করতো, তাহলে অনেক বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হতো। বাবা-মায়ের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে কাজীরা যদি টাকার কাছে হার না মেনে শপথ নিতো তাহলে বাল্যবিবাহ নির্মূল করা সম্ভব হতো। সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে হয়তো অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতো শত শত প্রাণ। শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়তে হতো না- বাল্যবিবাহের কশাঘাতে ভোগা তরুণ প্রজন্ম।

হাছিবুল বাসার মানিক

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।