চাঁপাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৩ প্রকল্প কবে আলোর মুখ দেখবে

প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নে ৩টি প্রকল্প এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৩টির মধ্যে স্থান নির্ধারণে আটকে আছে চাঁপাইনবাগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ ও শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। গত ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল ও ২০১৫ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় এসব প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন।

জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষে বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এলাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চলতি সালের গত ৩০ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ দারিয়াপুর এলাকার প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে আসেন এবং স্থানটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে প্রতিনিধি দলটি শেখ হাসিনা সেতু এলাকার একটি জায়গা পরিদর্শন করেন। সেতু যাবার রাস্তাটি প্রশস্ত না থাকায় পরিদর্শন দলটি আগ্রহ প্রকাশ করেনি বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন দারিয়াপুর এলাকার জায়গাটি অধিগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত এর সাড়া মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কিনা সে বিষয়ে জেলাবাসী সন্দিহান। এদিকে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, দারিয়াপুরের জায়গাটি অধিগ্রহণ করলে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরো গতিশীল হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি বেকার যুবকরা কাজ পেলে জেলার অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হবে।

জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালের ২৬ মে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসানের বরাবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করেন তৎকালীন এমপি আব্দুল ওদুদ। এরপর ২ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-২ বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের লক্ষে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এদিকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ২০১৯ সালের ৫ জুলাই সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দরসহ দেশের যেসব এলাকায় এখনও রেল চালু হয়নি সেসব এলাকায় অতি দ্রুত রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। সেক্ষত্রে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সোনামসজিদ স্থলবন্দরের রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। এজন্য পার্শ্ববতী দেশ ভারতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মালদা পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিদর্শক দলটি সোনামসজিদ স্থলবন্দর এসে সমীক্ষা চালান। এ প্রকল্পটিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারণে যেন ঢাকা পড়েছে।

অপরদিকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ জেলার অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে সুমিষ্ট আম দেশে ও বিদেশে বেশ সমাদৃত। যাতে করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানতে পারবে। মহানন্দা নদীর তীরবর্তী শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় চুনাখালি ও নিমগাছি মৌজায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৪৪ একর খাসজমির ওপর ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজ শুরু হলেও উচ্চ আদালতে মামলা হওয়ায় এর নির্মাণ কাজ আটকিয়ে গেঠে।

সুশীল সমাজ মনে করছেন এর সমাধান হলে এ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকতা বাড়বে। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসি জানান, প্রকল্পটি ৩টির বিষয়ে দপ্তরগুলোর প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আশ^াস প্রদান করেছেন। এছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণে সমীক্ষা চালিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ এবং পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণে যে জটিলতা রয়েছে তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সদা সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি জানান। ৪৪ একর জমির ওপর এ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।

বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৯ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

চাঁপাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৩ প্রকল্প কবে আলোর মুখ দেখবে

জেলা বার্তা পরিবেশক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নে ৩টি প্রকল্প এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৩টির মধ্যে স্থান নির্ধারণে আটকে আছে চাঁপাইনবাগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ ও শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। গত ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল ও ২০১৫ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় এসব প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন।

জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষে বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এলাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চলতি সালের গত ৩০ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ দারিয়াপুর এলাকার প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে আসেন এবং স্থানটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে প্রতিনিধি দলটি শেখ হাসিনা সেতু এলাকার একটি জায়গা পরিদর্শন করেন। সেতু যাবার রাস্তাটি প্রশস্ত না থাকায় পরিদর্শন দলটি আগ্রহ প্রকাশ করেনি বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন দারিয়াপুর এলাকার জায়গাটি অধিগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত এর সাড়া মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কিনা সে বিষয়ে জেলাবাসী সন্দিহান। এদিকে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, দারিয়াপুরের জায়গাটি অধিগ্রহণ করলে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরো গতিশীল হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি বেকার যুবকরা কাজ পেলে জেলার অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হবে।

জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালের ২৬ মে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসানের বরাবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করেন তৎকালীন এমপি আব্দুল ওদুদ। এরপর ২ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-২ বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের লক্ষে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এদিকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ২০১৯ সালের ৫ জুলাই সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দরসহ দেশের যেসব এলাকায় এখনও রেল চালু হয়নি সেসব এলাকায় অতি দ্রুত রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। সেক্ষত্রে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সোনামসজিদ স্থলবন্দরের রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। এজন্য পার্শ্ববতী দেশ ভারতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মালদা পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিদর্শক দলটি সোনামসজিদ স্থলবন্দর এসে সমীক্ষা চালান। এ প্রকল্পটিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারণে যেন ঢাকা পড়েছে।

অপরদিকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ জেলার অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে সুমিষ্ট আম দেশে ও বিদেশে বেশ সমাদৃত। যাতে করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানতে পারবে। মহানন্দা নদীর তীরবর্তী শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় চুনাখালি ও নিমগাছি মৌজায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৪৪ একর খাসজমির ওপর ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজ শুরু হলেও উচ্চ আদালতে মামলা হওয়ায় এর নির্মাণ কাজ আটকিয়ে গেঠে।

সুশীল সমাজ মনে করছেন এর সমাধান হলে এ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকতা বাড়বে। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসি জানান, প্রকল্পটি ৩টির বিষয়ে দপ্তরগুলোর প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আশ^াস প্রদান করেছেন। এছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণে সমীক্ষা চালিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ এবং পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণে যে জটিলতা রয়েছে তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সদা সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি জানান। ৪৪ একর জমির ওপর এ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।