করোনায় ২৪ ঘণ্টায়

মৃত্যু আরও ৩৬ শনাক্ত ১৮২৯ জন

মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশ। এই ভাইরাসটির ধরন বুঝা যাচ্ছে না। আক্রান্তে দীর্ঘ ছয় মাসেও প্রতিদিন মানুষই মারা যাচ্ছেন। প্রথম দিকে দিনে কমবেশি দশজন মারা গেলে সবাই আতঙ্কে ছিলেন। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক কমবেশি ৩০ জনের ওপরে হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৫৫২ জনে। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯২ জন।

গতকাল সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১ হাজার ৮৯২ জনকে নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জনে। আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ২৩৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সারাদেশে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৯৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৭টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত সোমবার মোট শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে দশোর্ধ্ব দুই, ত্রিশোর্ধ্ব দুই, চল্লিশোর্ধ্ব চার, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয় এবং ষাটোর্ধ্ব ২২ জন রয়েছেন। বিভাগ অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রামে ছয়, রাজশাহীতে দুই, খুলনায় আট, বরিশালে দুই, সিলেটে এক এবং রংপুর বিভাগে একজন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত (কোভিড-১৯) মহামারী বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার সাধারণ ছুটি, লকডাউন পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। দীর্ঘ ছয় মাসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক হতে আর কত দিন সময় লাগবে সেটাও এখন অনিশ্চিত। বরং এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রতিরোধের জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যার ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাড়ছে। আবার আমাদের পরীক্ষার সামর্থ্যও কমেছে। পূর্ণ উদ্যোমে পরীক্ষা করতে পারলে বোঝা যেতো পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ আগস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফদতর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। ১২ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগে। অর্থাৎ গতকাল ৮ সেপ্টেম্বরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৫৫২ জনে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিশ্বে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৩ জন পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৮০ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম স্থানে। তার মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশ রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।

image
আরও খবর
গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ
প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনা
রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ ছিল
পাওয়ার গ্রিডে আগুন, ময়মনসিংহ বিভাগ বিদ্যুৎহীন
১২ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রি
একাদশ শ্রেণীতে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ
‘চুরি করতে গিয়ে ইউএনও’র ওপর হামলা বিশ্বাসযোগ্য নয়’
তদন্ত প্রতিবেদন ৭৪ বারের মতো পেছালো
বরিশালে দুই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
মিলল আরও একটি লিকেজ
দেড়মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন, খুনি বাবা-দাদা ও সৎমাসহ ৪ জন গ্রেফতার
ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতন মামলা
মৃতের সংখ্যা ২৮, চিকিৎসাধীন ৮ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক

বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৯ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

করোনায় ২৪ ঘণ্টায়

মৃত্যু আরও ৩৬ শনাক্ত ১৮২৯ জন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশ। এই ভাইরাসটির ধরন বুঝা যাচ্ছে না। আক্রান্তে দীর্ঘ ছয় মাসেও প্রতিদিন মানুষই মারা যাচ্ছেন। প্রথম দিকে দিনে কমবেশি দশজন মারা গেলে সবাই আতঙ্কে ছিলেন। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক কমবেশি ৩০ জনের ওপরে হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৫৫২ জনে। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯২ জন।

গতকাল সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১ হাজার ৮৯২ জনকে নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জনে। আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ২৩৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সারাদেশে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৯৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৭টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত সোমবার মোট শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে দশোর্ধ্ব দুই, ত্রিশোর্ধ্ব দুই, চল্লিশোর্ধ্ব চার, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয় এবং ষাটোর্ধ্ব ২২ জন রয়েছেন। বিভাগ অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রামে ছয়, রাজশাহীতে দুই, খুলনায় আট, বরিশালে দুই, সিলেটে এক এবং রংপুর বিভাগে একজন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত (কোভিড-১৯) মহামারী বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার সাধারণ ছুটি, লকডাউন পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। দীর্ঘ ছয় মাসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক হতে আর কত দিন সময় লাগবে সেটাও এখন অনিশ্চিত। বরং এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রতিরোধের জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যার ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাড়ছে। আবার আমাদের পরীক্ষার সামর্থ্যও কমেছে। পূর্ণ উদ্যোমে পরীক্ষা করতে পারলে বোঝা যেতো পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ আগস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফদতর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। ১২ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগে। অর্থাৎ গতকাল ৮ সেপ্টেম্বরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৫৫২ জনে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিশ্বে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৩ জন পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৮০ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম স্থানে। তার মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশ রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।