খেলাপি ঋণ আদায়ে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

গত অর্থবছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রোববার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এই তথ্য জানান। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মোট এক লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ হয়েছে জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সুফল না মিললে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে তার প্রায় এক-চতুর্থাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণের প্রশ্নে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থানও ভালো নয়। বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা কমেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমেছে। সরকারের দেয়া সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ ব্যাংক ঋণ নবায়ন করেছে। খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে সামান্যই। ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে এক বছরের গেস প্রিরিয়ডসহ ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে সরকার। বাস্তবে কতজন এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন সেটা জানা যায় না। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। ঋণ অবলোপন করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। খেলাপি হয়ে পড়া অনেক গ্রাহক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ কারণে বিপুল অঙ্কের ঋণকে আইনগত কারণে এখন খেলাপি বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয় বাস্তবে তার তিনগুণ বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো কোন কাজের কথা নয়। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে। জরুরি হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় করা। কিন্তু ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বরং সময়ে সময়ে খেলাপিদের নানান অন্যায় সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর বিপরীতে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী ঋণ নিয়ে ইচ্ছে করেই ফেরত দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নীতিনির্র্ধারণী পর্যায়ে এই গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে খেলাপি ঋণ আদায় হোক। চিহ্নিত বড় বড় ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণের টাকা আদায় করতে হবে। ঋণখেলাপিদের সব ধরনের অন্যায় সুবিধা বন্ধ করতে হবে। তারা যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। এখন জরুরি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া।

বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৯ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

খেলাপি ঋণ আদায়ে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

গত অর্থবছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রোববার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এই তথ্য জানান। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মোট এক লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ হয়েছে জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সুফল না মিললে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে তার প্রায় এক-চতুর্থাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণের প্রশ্নে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থানও ভালো নয়। বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা কমেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমেছে। সরকারের দেয়া সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ ব্যাংক ঋণ নবায়ন করেছে। খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে সামান্যই। ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে এক বছরের গেস প্রিরিয়ডসহ ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে সরকার। বাস্তবে কতজন এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন সেটা জানা যায় না। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। ঋণ অবলোপন করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। খেলাপি হয়ে পড়া অনেক গ্রাহক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ কারণে বিপুল অঙ্কের ঋণকে আইনগত কারণে এখন খেলাপি বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয় বাস্তবে তার তিনগুণ বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো কোন কাজের কথা নয়। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে। জরুরি হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় করা। কিন্তু ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বরং সময়ে সময়ে খেলাপিদের নানান অন্যায় সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর বিপরীতে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী ঋণ নিয়ে ইচ্ছে করেই ফেরত দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নীতিনির্র্ধারণী পর্যায়ে এই গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে খেলাপি ঋণ আদায় হোক। চিহ্নিত বড় বড় ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণের টাকা আদায় করতে হবে। ঋণখেলাপিদের সব ধরনের অন্যায় সুবিধা বন্ধ করতে হবে। তারা যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। এখন জরুরি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া।