চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা কেএস ফিরোজ

চলে গেলেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) ও নাটক, চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা কেএস ফিরোজ (খন্দকার শহীদ উদ্দিন ফিরোজ)। গতকাল ভোর ৬টা ২০ মিনিটে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। গেল ৭ জুলাই তিনি ৭৬ বছরে পা রেখেছিলেন। মৃত্যুকালে কেএস ফিরোজ স্ত্রী মাধবী ফিরোজ, তিন মেয়ে শিক্ষক নাদিয়া ফিরোজ, আমেরিকা প্রবাসী সাদিয়া ফিরোজ ও ব্যারিস্টার রাবিয়া ফিরোজসহ আরও বহু আত্মীস্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সংষ্কৃতি অঙ্গনে গতকাল সকালেই শোকের ছায়া নেমে আসে। কেএস ফিরোজের মেজ মেয়ে ব্যারিস্টার রাবিয়া ফিরোজ জানান, গতকাল বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে রাজধানীর বনানীতে সেনা কর্মকর্তাদের কবরস্থানে তার বাবাকে সেনাবাহিনী থেকে সম্মান প্রদর্শনের পর দাফন করা হয়। রাবিয়া ফিরোজ বলেন, ‘আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমার আব্বুকে বেহেস্ত নসিব করেন। আমাদের পুরো পরিবার যেন আব্বু চলে যাবার এই শোক যেন সইতে পারি আল্লাহ যেন সেই শক্তি আমাদের দেন।’ কেএস ফিরোজের এই হঠাৎ চলে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘যেহেতু আমি আর ফিরোজ ভাই দুটি ভিন্ন নাট্যদলে কাজ করতাম, তাই তার সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ হয়ে উঠেনি কিন্তু টিভি নাটকে এবং সিনেমায় তার সঙ্গে অভিনয় করেছি আমি। নিঃসন্দেহে তিনি অনেক ভালো একজন অভিনেতা ছিলেন। যদিও তার মধ্যে সব সময়ই বেশ ভাবগাম্ভীর্য বিদ্যমান থাকতো কিন্তু তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন, একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তার বিনয়, ভদ্রতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি ফিরোজ ভাইয়ের চলে যাওয়াতে, কারণ আমরা একজন সত্যিকারের অভিনেতা হারালাম, একজন ভালো মানুষ হারালাম, অভিনয় শিল্পী সংঘ হারালো একজন অভিভাবক যিনি নানান সময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবক হয়েই। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।’ কেএস ফিরোজের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরের মশাং গ্রামে হলেও তার জন্ম ঢাকায়। তার বাবা আলহাজ এজে এম সাইদুর রহমান তবে এলাকার মানুষ তাকে উজির মিয়া নামেই চিনতেন ও তার মা রাবেয়া খাতুন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। নাট্যদল থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অভিনয়ে তার পথচলা শুরু। এই দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’, ‘কিংলিয়ার’, ‘রাক্ষসী’ ইত্যাদি। ‘কিংলিয়ার’এ তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। এটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন কামালউদ্দিন নীলু। টিভি নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন দিলারা জামানের স্বামী শফিউজ্জামানের রচনায় ও জামান আলী খানের প্রযোজনায় ‘দীপ তবু জ¦লে’ নাটকে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ডলি ইব্রাহীম। ১৯৬৭ সালে কে এস ফিরোজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন পদে চাকরি নেন। ১৯৭৭ সালে তিনি মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ১ নভেম্বর মাধবীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তিনি প্রথম ‘লাওয়ারিশ’ সিনেমায় অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘শঙ্কনাদ’, ‘বাঁশি’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘বৃহন্নলা’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন।

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা কেএস ফিরোজ

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

চলে গেলেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) ও নাটক, চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা কেএস ফিরোজ (খন্দকার শহীদ উদ্দিন ফিরোজ)। গতকাল ভোর ৬টা ২০ মিনিটে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। গেল ৭ জুলাই তিনি ৭৬ বছরে পা রেখেছিলেন। মৃত্যুকালে কেএস ফিরোজ স্ত্রী মাধবী ফিরোজ, তিন মেয়ে শিক্ষক নাদিয়া ফিরোজ, আমেরিকা প্রবাসী সাদিয়া ফিরোজ ও ব্যারিস্টার রাবিয়া ফিরোজসহ আরও বহু আত্মীস্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সংষ্কৃতি অঙ্গনে গতকাল সকালেই শোকের ছায়া নেমে আসে। কেএস ফিরোজের মেজ মেয়ে ব্যারিস্টার রাবিয়া ফিরোজ জানান, গতকাল বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে রাজধানীর বনানীতে সেনা কর্মকর্তাদের কবরস্থানে তার বাবাকে সেনাবাহিনী থেকে সম্মান প্রদর্শনের পর দাফন করা হয়। রাবিয়া ফিরোজ বলেন, ‘আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমার আব্বুকে বেহেস্ত নসিব করেন। আমাদের পুরো পরিবার যেন আব্বু চলে যাবার এই শোক যেন সইতে পারি আল্লাহ যেন সেই শক্তি আমাদের দেন।’ কেএস ফিরোজের এই হঠাৎ চলে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘যেহেতু আমি আর ফিরোজ ভাই দুটি ভিন্ন নাট্যদলে কাজ করতাম, তাই তার সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ হয়ে উঠেনি কিন্তু টিভি নাটকে এবং সিনেমায় তার সঙ্গে অভিনয় করেছি আমি। নিঃসন্দেহে তিনি অনেক ভালো একজন অভিনেতা ছিলেন। যদিও তার মধ্যে সব সময়ই বেশ ভাবগাম্ভীর্য বিদ্যমান থাকতো কিন্তু তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন, একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তার বিনয়, ভদ্রতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি ফিরোজ ভাইয়ের চলে যাওয়াতে, কারণ আমরা একজন সত্যিকারের অভিনেতা হারালাম, একজন ভালো মানুষ হারালাম, অভিনয় শিল্পী সংঘ হারালো একজন অভিভাবক যিনি নানান সময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবক হয়েই। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।’ কেএস ফিরোজের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরের মশাং গ্রামে হলেও তার জন্ম ঢাকায়। তার বাবা আলহাজ এজে এম সাইদুর রহমান তবে এলাকার মানুষ তাকে উজির মিয়া নামেই চিনতেন ও তার মা রাবেয়া খাতুন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। নাট্যদল থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অভিনয়ে তার পথচলা শুরু। এই দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’, ‘কিংলিয়ার’, ‘রাক্ষসী’ ইত্যাদি। ‘কিংলিয়ার’এ তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। এটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন কামালউদ্দিন নীলু। টিভি নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন দিলারা জামানের স্বামী শফিউজ্জামানের রচনায় ও জামান আলী খানের প্রযোজনায় ‘দীপ তবু জ¦লে’ নাটকে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ডলি ইব্রাহীম। ১৯৬৭ সালে কে এস ফিরোজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন পদে চাকরি নেন। ১৯৭৭ সালে তিনি মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ১ নভেম্বর মাধবীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তিনি প্রথম ‘লাওয়ারিশ’ সিনেমায় অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘শঙ্কনাদ’, ‘বাঁশি’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘বৃহন্নলা’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন।