গ্যাস লিকেজ থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ

তিতাস ও জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন আজ

টানা তিন দিন খোড়াখুঁড়ির পর মসজিদের উত্তর পাশের গ্যাসলাইনে মোট ছয়টি ছিদ্র (লিকেজ) পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই ছিদ্রগুলো দিয়ে দিয়ে নির্গত গ্যাস মসজিদের ভেতরে জমা হয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। সর্বশেষ তদন্তে এমনটাই পাওয়া গেছে। আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে জেলা প্রশাসন ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৪২ জনের মধ্যে ২৮ জন মারা গেছেন। শুরুতে মসজিদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হলেও মসজিদের ভেতরে গ্যাসের বুদ বুদ দেখতে পাওয়ার পর গ্যাস বিস্ফোরণের বিষয়টি সামনে আসে। তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতর জমা হওয়া গ্যাসেই এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের। গ্যাসের বিষয়টিকে সামনে রেখেই গঠিত হয় চারটি তদন্ত কমিটি।

গত রোববার গ্যাসের লাইন ও লিকেজ খুঁজতে মসজিদের সামনের সড়কে মাটি খোড়াখুঁড়ি শুরু হয়। টানা তিন দিন পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কে খোড়াখুঁড়ি চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রধান ও সংযোগ লাইনগুলো উন্মুক্ত করা হয়। মসজিদের উত্তর পাশের সংযোগ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের মেঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করে গ্যাস পুনরায় সরবরাহ চালু করে পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষণে মসজিদের ভেতরের মেঝেতে গ্যাসের কোন বুদ বুদ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মসজিদের ভেতরে কোন স্থানে আর কোন বুদ বুদ দেখা যায়নি।

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎপন্ন আগুনের ফুলকি (স্পার্ক) এবং লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে জমা হওয়া গ্যাস এই দুই মিলে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি হয়েছে। মসজিদের পাশেই গ্যাস লাইনে লিকেজ খুঁজে পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের গঠিত দুই তদন্ত কমিটিরই সদস্য নারায়ণগগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন। জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘পুরো গ্যাসলাইন উন্মুক্ত করে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। এই লিকেজগুলো থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট স্পার্ক এবং জমা হওয়া গ্যাসেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।’ তিতাস ও জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দেয়া হবে বলেও জানান আবদুল্লাহ আল আরেফিন।

গতকাল বিকেলে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবদুল ওহাব তালুকদার বলেন, ‘মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ উদ্ঘাটনের জন্য অনুসন্ধান করে মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের গলিতে রাস্তার নিচে অনুসন্ধান করে গ্যাস পাইপলাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। পরে লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের ভেতরে পানি দিয়ে গ্যাসলাইনে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলে মসজিদের ভেতরে কোন লিকেজ পাওয়া যায়নি। তবে মাটি খুঁড়ে দেখা গেছে গ্যাস পাইপলাইনের ওপর দিয়ে মসজিদটির বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করায় পাইপে লিকেজ সৃষ্টি হয়। সেই লিকেজ থেকেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’

মসজিদে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে বরখাস্ত করা হয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা জোনের ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির। দ-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় রেকর্ড করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হতাহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। তদন্তে চিহ্নিত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।

আরও খবর
এসআই জাহিদসহ ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হবে প্রধানমন্ত্রী
দেশে করোনায় একদিনে আরও ৪১ জনের মৃত্যু
অনুমতি ছাড়া কোন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময় ২ দিন বেড়েছে
বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রতি পরিবারকে ৫ লাখ করে টাকা দেয়ার নির্দেশ
ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ, লেনদেন বন্ধ নয়
অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বিরতি
সিনহা হত্যা তদন্তকে প্রভাবিত করুক এটা চাই না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিভ্রান্তি
জাহিদের নির্যাতনে মৃত্যু হয় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনের
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৮ জন
নেত্রকোনায় ট্রলারডুবি : ১০ লাশ উদ্ধার, শিশুই বেশি
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্প মনোনীত

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

গ্যাস লিকেজ থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ

তিতাস ও জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন আজ

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

টানা তিন দিন খোড়াখুঁড়ির পর মসজিদের উত্তর পাশের গ্যাসলাইনে মোট ছয়টি ছিদ্র (লিকেজ) পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই ছিদ্রগুলো দিয়ে দিয়ে নির্গত গ্যাস মসজিদের ভেতরে জমা হয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। সর্বশেষ তদন্তে এমনটাই পাওয়া গেছে। আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে জেলা প্রশাসন ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৪২ জনের মধ্যে ২৮ জন মারা গেছেন। শুরুতে মসজিদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হলেও মসজিদের ভেতরে গ্যাসের বুদ বুদ দেখতে পাওয়ার পর গ্যাস বিস্ফোরণের বিষয়টি সামনে আসে। তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতর জমা হওয়া গ্যাসেই এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের। গ্যাসের বিষয়টিকে সামনে রেখেই গঠিত হয় চারটি তদন্ত কমিটি।

গত রোববার গ্যাসের লাইন ও লিকেজ খুঁজতে মসজিদের সামনের সড়কে মাটি খোড়াখুঁড়ি শুরু হয়। টানা তিন দিন পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কে খোড়াখুঁড়ি চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রধান ও সংযোগ লাইনগুলো উন্মুক্ত করা হয়। মসজিদের উত্তর পাশের সংযোগ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের মেঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করে গ্যাস পুনরায় সরবরাহ চালু করে পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষণে মসজিদের ভেতরের মেঝেতে গ্যাসের কোন বুদ বুদ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মসজিদের ভেতরে কোন স্থানে আর কোন বুদ বুদ দেখা যায়নি।

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎপন্ন আগুনের ফুলকি (স্পার্ক) এবং লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে জমা হওয়া গ্যাস এই দুই মিলে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি হয়েছে। মসজিদের পাশেই গ্যাস লাইনে লিকেজ খুঁজে পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের গঠিত দুই তদন্ত কমিটিরই সদস্য নারায়ণগগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন। জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘পুরো গ্যাসলাইন উন্মুক্ত করে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। এই লিকেজগুলো থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট স্পার্ক এবং জমা হওয়া গ্যাসেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।’ তিতাস ও জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দেয়া হবে বলেও জানান আবদুল্লাহ আল আরেফিন।

গতকাল বিকেলে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবদুল ওহাব তালুকদার বলেন, ‘মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ উদ্ঘাটনের জন্য অনুসন্ধান করে মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের গলিতে রাস্তার নিচে অনুসন্ধান করে গ্যাস পাইপলাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। পরে লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের ভেতরে পানি দিয়ে গ্যাসলাইনে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলে মসজিদের ভেতরে কোন লিকেজ পাওয়া যায়নি। তবে মাটি খুঁড়ে দেখা গেছে গ্যাস পাইপলাইনের ওপর দিয়ে মসজিদটির বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করায় পাইপে লিকেজ সৃষ্টি হয়। সেই লিকেজ থেকেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’

মসজিদে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে বরখাস্ত করা হয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা জোনের ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির। দ-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় রেকর্ড করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হতাহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। তদন্তে চিহ্নিত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।