বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নতি না হওয়ায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ গ্রাহককে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এখনও এ অঞ্চলের শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্যসহ আবাসিক গ্রাহকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি-ওজোপাডিকো।
অথচ উন্নত সেবা নিশ্চিত করাসহ চুরি ও দুর্নীতি বন্ধের অঙ্গীকার নিয়েই ২০০৫ সালে পিডিবির অধিভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ‘ওজোপাডিকো’ যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু থাকথিত সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুৎ চুরি বাহুলাংশে কমিয়ে আনা গেলেও মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিক ও মনযোগী করতে পারেনি ওজোপাডিকো। এমনকি কোম্পানিটির শীর্ষস্থানীয় কোন কোন কর্মকর্তাও নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঢাকায় অবস্থান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা কখনোই গ্রাহকদের অভিযোগ দূরের কথা, তাদের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছার বিষয়েও কোন খোঁজ খবর রাখার সময় পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আকাশে ঘন মেঘ দেখা দিলে বা ১৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইলেই বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ করে দেয়া হয়।
নগরীর রূপাতলী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে ৪টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে বরিশাল মহানগরীর প্রায় ২৫টি ১১/.০৪ ফিডারের লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে দুটি বিতরণ বিভাগ। কিন্তু ৩০ বছরের পুরনো ১১ কেভি ও .০৪ কেভি সরবারহ ও বিতরণ লাইনের আনুষাঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ ৩৩ কেভি লাইনগুলো এখন যথেষ্ট নাজুক। উপরন্তু অনেক গ্রাহকই অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশি লোডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় ট্রান্সফর্মার ও লাইনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ফিডারের এইচটি ও এলটি লাইনসহ ট্রান্সফর্মারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও সরবারহ ও বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর মেডিকেল ফিডারসহ একাধিক ফিডার ওভার লেডেড হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলা সদরের। সর্বত্রই নাজুক বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের দুর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ব্যাবসা-বাণিজ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনও।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারি অর্থায়নে পশ্চিমজোনের ২১টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওজোপাডিকো। তবে কোন প্রকল্পের কাজই সময়মত শেষ হচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা হয়ত পুনর্বাসনের সময় হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সম্ভব দ্রুততম সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকোর বরিশাল সার্কেলের ডিজিএমের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি জানান, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোম্পানি সবসময়ই সজাগ রয়েছে। আগামী শীতে সব ফিডারগুলো পরিপূর্ণভাবে রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ সদরের সব ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন ভূগর্ভস্থ ক্যাবলে স্থানান্তরের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সমস্যা কিছুটা কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল
বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নতি না হওয়ায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ গ্রাহককে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এখনও এ অঞ্চলের শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্যসহ আবাসিক গ্রাহকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি-ওজোপাডিকো।
অথচ উন্নত সেবা নিশ্চিত করাসহ চুরি ও দুর্নীতি বন্ধের অঙ্গীকার নিয়েই ২০০৫ সালে পিডিবির অধিভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ‘ওজোপাডিকো’ যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু থাকথিত সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুৎ চুরি বাহুলাংশে কমিয়ে আনা গেলেও মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিক ও মনযোগী করতে পারেনি ওজোপাডিকো। এমনকি কোম্পানিটির শীর্ষস্থানীয় কোন কোন কর্মকর্তাও নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঢাকায় অবস্থান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা কখনোই গ্রাহকদের অভিযোগ দূরের কথা, তাদের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছার বিষয়েও কোন খোঁজ খবর রাখার সময় পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আকাশে ঘন মেঘ দেখা দিলে বা ১৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইলেই বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ করে দেয়া হয়।
নগরীর রূপাতলী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে ৪টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে বরিশাল মহানগরীর প্রায় ২৫টি ১১/.০৪ ফিডারের লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে দুটি বিতরণ বিভাগ। কিন্তু ৩০ বছরের পুরনো ১১ কেভি ও .০৪ কেভি সরবারহ ও বিতরণ লাইনের আনুষাঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ ৩৩ কেভি লাইনগুলো এখন যথেষ্ট নাজুক। উপরন্তু অনেক গ্রাহকই অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশি লোডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় ট্রান্সফর্মার ও লাইনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ফিডারের এইচটি ও এলটি লাইনসহ ট্রান্সফর্মারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও সরবারহ ও বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর মেডিকেল ফিডারসহ একাধিক ফিডার ওভার লেডেড হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলা সদরের। সর্বত্রই নাজুক বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের দুর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ব্যাবসা-বাণিজ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনও।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারি অর্থায়নে পশ্চিমজোনের ২১টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওজোপাডিকো। তবে কোন প্রকল্পের কাজই সময়মত শেষ হচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা হয়ত পুনর্বাসনের সময় হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সম্ভব দ্রুততম সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকোর বরিশাল সার্কেলের ডিজিএমের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি জানান, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোম্পানি সবসময়ই সজাগ রয়েছে। আগামী শীতে সব ফিডারগুলো পরিপূর্ণভাবে রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ সদরের সব ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন ভূগর্ভস্থ ক্যাবলে স্থানান্তরের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সমস্যা কিছুটা কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।