ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক

টিপু সুলতানের ঋণ জালিয়াতি মামলার চার্জশিট শীঘ্রই

দুর্যোগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৫০ হাজার মে. টন গম সরবরাহের চুক্তি দেখিয়ে ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানের আত্মসাৎ করা ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ফেরত পাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। জাল নথিপত্রে প্রতারক টিপু সুলতানের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই আবেদনের একদিন পরও বিডিবিএল প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ঋণ মঞ্জুর হয়। আবেদনের একদিনের মধ্যে আবেদনকারীকে ঋণ দেয়ার নজির খুব কম ব্যাংকে রয়েছে। অথচ বিডিবিএল সেই কাজটিই করেছে ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতানের ক্ষেত্রে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১ বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে শীঘ্রই মামলাটি চার্জশিট দিতে যাচ্ছে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এতে টিপু সুলতান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হচ্ছে।

জাল নথিপত্রে বিডিবিএল ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক বর্তমানে উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে পল্টন থানায় ২০১৯ সালের ১২ জুন ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার এসপিও দীনেশ চন্দ্র সাহা, এজিএম দেওয়ান মোহাম্মদ ইসহাক এবং জেনারেল ম্যানেজার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ রহমান কাদরীকে এ মামলায় আসামি করা হয় ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, পুরানা পল্টনের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির ডি ১৪০০, ১৬৬-১৬৭ ঠিকানার আল রাজি কমপ্লেকে অবস্থতি ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতান বিডিবিএল প্রিন্সিপাল শাখায় ঢাকা ট্রেডিং হাউসের নামে একটি হিসাব খোলেন। এরপর ঢাকা ট্রেডিং হাউসের মালিখ মো. টিপু সুলতান বিডিবিএল-এর প্রিন্সিপাল শাখায় নতুনভাবে এলসি লিমিট এবং এলটিআর ঋণ মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন। তিনি একটি এমওইউ এর কপি বিডিবিএল এর প্রিন্সিপাল শাখায় নিয়ে আসেন যেখানে দেখানো হয় যে, স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার মে. টন গম করে তা খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফুডস-এর দফতরে সরবরাহ করা হবে। মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউস এর স্বত্বাধিকারী মো. টিপু সুলতান এর সঙ্গে ডিরেক্টর জেনারেল অব ফুডস-এর সঙ্গে একটি এমওইউ সম্পাদিত হয়েছে। কিন্তু এসব নথিপত্রের সবকিছুই ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। ভুয়া কাজগপত্র দিয়ে টিপু সুলতান ২০১২ সালে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে যা জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানির অডিটে ধরা পড়ে। মামলার তদন্তে এসব তথের সত্যতা মিলেছে।

বিডিবিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে সংবাদকে জানান, টিপু সুলতান একজন শীর্ষ পর্যায়ের জালিয়াত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১২০ কোটি টাকায় ৫০ হাজার মে. টন খাদ্য সরবরাহের কাজ টেন্ডারে পেয়েছে মর্মে নথিপত্রের অনুকূলে বিডিবিএল ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। শুধু বিডিবিএল ব্যাংক থেকেই নয়, অন্যান্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছে। এভাবে সে কয়েকশ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। বিডিবিডিএলের তৎকালীন দায়িত্বশীলরা এ বিষয়গুলো ঠিকমতো যাচাই-বাছাই না করেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ পরিশোধ না করে টিপু সুলতান আত্মগোপনে চলে যায়। তবে ঋণের অনুকূলে টিপু সুলতানের কিছু সম্পদ যা বিডিবিএলের কাছে বন্ধক রয়েছে সেগুলো নিলামে তুলে বিডিবিএলের পাওনা ঋণ আদায়ের চেষ্টা চলছে। দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ট্রেড এর মালিক টিপু সুলতান টিআর পরিবহনেরও মালিক। এ পরিবহন ঢাকা থেকে খুলনা ও বগুড়া রুটে চলাচল করে। টিপু সুলতান জনতা ব্যাংক থেকেও ১৫০ কোটি টাকা ঋন নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। ওই ঘটনায়ও দুদক একটি মামলা করেছিল। মামলায় টিপু সুলতান গ্রেফতার হয়ে জেলেও ছিল। টিপু সুলতান দেশের মধ্যে শীর্ষ এক ঋণ জালিয়াত। এমন জালিয়াত চক্র সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। এরা সরকারের বিভিন্ন মহলে সম্পর্ক তৈরি করে এসবকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি করে থাকে।

দুদক মামলার তদন্তে খুঁজে পায় বিডিবিএল এর নোটিং এর ৩২তম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ ২০১২ সালের ৬ জুন পত্রের মাধ্যমে এলসিতে উল্লেখিত মালামাল বুঝিয়া পাওয়ার প্রেক্ষিতে ডকুমেন্ট ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। পূর্বের দিন এলসি স্থাপন করার পরের দিনই ১৫ হাজার মে. টন গম বুঝে পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। এসপিএস করর্পোরেশন নামীয় যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালামাল প্রেরণ দেখানো হয়েছে, বাস্তবিক অর্থে এটি একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। যে ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেটির রেজি. নম্বরও ভুয়া এবং যে প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাক ভাড়া নেয়া হয়েছে, সরজমিনে ওই জায়গায় ওই নামে কোন প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে জাল কাগজ দিয়ে পরস্পর যোগসাজসে বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা পরিশোধের সম্ভাবনা শূন্য। বিডিবিএল সূত্রে জানা যায় যে, ঢাকা ট্রেডিং হাউজের হিসাব খোলার সময় আপ টু ডেট ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়নি। কেওয়াইসিতে টিন নম্বর সংযোজন করা হয়নি। কেওয়াসি’র পরিচয়দানকারী তথ্য সঠিক ছিল না। কেওয়াইসি’র গ্রাহক টিপু সুলতান এর পিতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপু সুলতান এর পিতার নাম এক নয়। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা ট্রেডিং হাউজের এলটিআর একাউন্টটি (নং : ৮৪১০০০০০৮৪) খোলেন এবং পরদিন ৯ এপ্রিল ৩০ কোটি টাকার বিপরীতে ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদিত হয় এ। এরমধ্যে ২২ কোটি ৫ লাখ টাকা ডিসবার্জ হয়। ২৫ কোটি টাকার ঋণটি খুবই দ্রুতই অনুমোদিত হয়, যেখানে গ্রাহকের পরিশোধ প্রক্রিয়া, দক্ষতা এবং সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি।

সূত্র জানায়, তদন্তে জানা গেছে টিপু সুলতান ২০১২ সালের ৭ জুন বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় দাখিল করা আবেদনে বলেছে, সরকারের সঙ্গে ১শ২০ কোটি টাকায় ৫০ হাজার মে. টন গম সবরাহের জন্য চুক্তি হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে টেন্ডার আহ্বান করলে সে টেন্ডারে অংশ নেয়। এসব নথিপত্রও সে ব্যাংকে দাখিল করেছে। আসলে পুরো নথিপত্র ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। যা ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি জে কিবরিয়া অডিট কোম্পানির অডিতে বেরিয়ে আষে। খাদ্য অধিদফতরের সবরাহ, বণ্টন ও বিতরণ বিভাগের পরিচালক মো. বদরুল হাসাসের স্বাক্ষরিত (ইউও নোট নং ৩ তারিখ ৫ জানুয়ারী ২০১৫) এর কপি মর্মে জানা গেছে মো. বদরুল হাসানের সঙ্গে টিপু সুলতানের কোন চুক্তি হয়নি। যে এমওইউ এর ভিত্তিতে ঋণটি দেয়া হয়, তা পরবর্তীতে জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে । অর্থাৎ জাল রেকর্ডপত্রাদি খাটি হিসেবে ব্যবহার করে, ঋণটি সুকৌশলে অনুমোদন করে নেয়া হয়েছে। ১৫ হাজার মে. টন পণ্য একদিনে একটি ট্রাকে পরিবহন দেখানো হয়েছে, যা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এলটিআরের বিপরীতে কোন টাকা পরিশোধ হয় নি এবং ঋণটি বর্তমানে শ্রেণীকৃত অবস্থায় আছে যার বিপরীতে মরগেজ একেবারেই অপ্রতুল এবং এটা পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

image

নারায়ণগঞ্জ : গতকাল মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় নগর মহাশ্মশানে রন্ধনশালা অন্নপুণ্যা ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী -সংবাদ

আরও খবর
দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গৃহস্থালির সেবামূলক শ্রমকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
ব্যথা সারানোর কার্যকর যন্ত্র উদ্ভাবন করল ঢাবি গবেষকরা
ঢাবি অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি
রাঙ্গামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় গ্রাহকদের দুর্ভোগ
শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা পলাশ ভাগিনাসহ গ্রেফতার
রংপুর ছাত্রলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে জীবন বিপন্ন স্কুলশিক্ষিকার
বালিশ কাণ্ডের ঠিকাদার শাহাদাতের জামিন বাতিলের আবেদন
এক দশকে তিস্তা নদী গিলে খেল দেড়শ’ গ্রাম
নবজাতকের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল বাবা-মাসহ ৬ জনের

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক

টিপু সুলতানের ঋণ জালিয়াতি মামলার চার্জশিট শীঘ্রই

সাইফ বাবলু

image

নারায়ণগঞ্জ : গতকাল মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় নগর মহাশ্মশানে রন্ধনশালা অন্নপুণ্যা ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী -সংবাদ

দুর্যোগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৫০ হাজার মে. টন গম সরবরাহের চুক্তি দেখিয়ে ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানের আত্মসাৎ করা ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ফেরত পাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। জাল নথিপত্রে প্রতারক টিপু সুলতানের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই আবেদনের একদিন পরও বিডিবিএল প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ঋণ মঞ্জুর হয়। আবেদনের একদিনের মধ্যে আবেদনকারীকে ঋণ দেয়ার নজির খুব কম ব্যাংকে রয়েছে। অথচ বিডিবিএল সেই কাজটিই করেছে ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতানের ক্ষেত্রে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১ বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে শীঘ্রই মামলাটি চার্জশিট দিতে যাচ্ছে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এতে টিপু সুলতান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হচ্ছে।

জাল নথিপত্রে বিডিবিএল ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক বর্তমানে উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে পল্টন থানায় ২০১৯ সালের ১২ জুন ঢাকা ট্রেড হাউজের মালিক টিপু সুলতানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার এসপিও দীনেশ চন্দ্র সাহা, এজিএম দেওয়ান মোহাম্মদ ইসহাক এবং জেনারেল ম্যানেজার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ রহমান কাদরীকে এ মামলায় আসামি করা হয় ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, পুরানা পল্টনের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির ডি ১৪০০, ১৬৬-১৬৭ ঠিকানার আল রাজি কমপ্লেকে অবস্থতি ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতান বিডিবিএল প্রিন্সিপাল শাখায় ঢাকা ট্রেডিং হাউসের নামে একটি হিসাব খোলেন। এরপর ঢাকা ট্রেডিং হাউসের মালিখ মো. টিপু সুলতান বিডিবিএল-এর প্রিন্সিপাল শাখায় নতুনভাবে এলসি লিমিট এবং এলটিআর ঋণ মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন। তিনি একটি এমওইউ এর কপি বিডিবিএল এর প্রিন্সিপাল শাখায় নিয়ে আসেন যেখানে দেখানো হয় যে, স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার মে. টন গম করে তা খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফুডস-এর দফতরে সরবরাহ করা হবে। মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউস এর স্বত্বাধিকারী মো. টিপু সুলতান এর সঙ্গে ডিরেক্টর জেনারেল অব ফুডস-এর সঙ্গে একটি এমওইউ সম্পাদিত হয়েছে। কিন্তু এসব নথিপত্রের সবকিছুই ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। ভুয়া কাজগপত্র দিয়ে টিপু সুলতান ২০১২ সালে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে যা জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানির অডিটে ধরা পড়ে। মামলার তদন্তে এসব তথের সত্যতা মিলেছে।

বিডিবিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে সংবাদকে জানান, টিপু সুলতান একজন শীর্ষ পর্যায়ের জালিয়াত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১২০ কোটি টাকায় ৫০ হাজার মে. টন খাদ্য সরবরাহের কাজ টেন্ডারে পেয়েছে মর্মে নথিপত্রের অনুকূলে বিডিবিএল ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। শুধু বিডিবিএল ব্যাংক থেকেই নয়, অন্যান্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছে। এভাবে সে কয়েকশ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। বিডিবিডিএলের তৎকালীন দায়িত্বশীলরা এ বিষয়গুলো ঠিকমতো যাচাই-বাছাই না করেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ পরিশোধ না করে টিপু সুলতান আত্মগোপনে চলে যায়। তবে ঋণের অনুকূলে টিপু সুলতানের কিছু সম্পদ যা বিডিবিএলের কাছে বন্ধক রয়েছে সেগুলো নিলামে তুলে বিডিবিএলের পাওনা ঋণ আদায়ের চেষ্টা চলছে। দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ট্রেড এর মালিক টিপু সুলতান টিআর পরিবহনেরও মালিক। এ পরিবহন ঢাকা থেকে খুলনা ও বগুড়া রুটে চলাচল করে। টিপু সুলতান জনতা ব্যাংক থেকেও ১৫০ কোটি টাকা ঋন নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। ওই ঘটনায়ও দুদক একটি মামলা করেছিল। মামলায় টিপু সুলতান গ্রেফতার হয়ে জেলেও ছিল। টিপু সুলতান দেশের মধ্যে শীর্ষ এক ঋণ জালিয়াত। এমন জালিয়াত চক্র সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। এরা সরকারের বিভিন্ন মহলে সম্পর্ক তৈরি করে এসবকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি করে থাকে।

দুদক মামলার তদন্তে খুঁজে পায় বিডিবিএল এর নোটিং এর ৩২তম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ ২০১২ সালের ৬ জুন পত্রের মাধ্যমে এলসিতে উল্লেখিত মালামাল বুঝিয়া পাওয়ার প্রেক্ষিতে ডকুমেন্ট ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। পূর্বের দিন এলসি স্থাপন করার পরের দিনই ১৫ হাজার মে. টন গম বুঝে পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। এসপিএস করর্পোরেশন নামীয় যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালামাল প্রেরণ দেখানো হয়েছে, বাস্তবিক অর্থে এটি একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। যে ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেটির রেজি. নম্বরও ভুয়া এবং যে প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাক ভাড়া নেয়া হয়েছে, সরজমিনে ওই জায়গায় ওই নামে কোন প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে জাল কাগজ দিয়ে পরস্পর যোগসাজসে বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা পরিশোধের সম্ভাবনা শূন্য। বিডিবিএল সূত্রে জানা যায় যে, ঢাকা ট্রেডিং হাউজের হিসাব খোলার সময় আপ টু ডেট ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়নি। কেওয়াইসিতে টিন নম্বর সংযোজন করা হয়নি। কেওয়াসি’র পরিচয়দানকারী তথ্য সঠিক ছিল না। কেওয়াইসি’র গ্রাহক টিপু সুলতান এর পিতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপু সুলতান এর পিতার নাম এক নয়। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা ট্রেডিং হাউজের এলটিআর একাউন্টটি (নং : ৮৪১০০০০০৮৪) খোলেন এবং পরদিন ৯ এপ্রিল ৩০ কোটি টাকার বিপরীতে ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদিত হয় এ। এরমধ্যে ২২ কোটি ৫ লাখ টাকা ডিসবার্জ হয়। ২৫ কোটি টাকার ঋণটি খুবই দ্রুতই অনুমোদিত হয়, যেখানে গ্রাহকের পরিশোধ প্রক্রিয়া, দক্ষতা এবং সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি।

সূত্র জানায়, তদন্তে জানা গেছে টিপু সুলতান ২০১২ সালের ৭ জুন বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় দাখিল করা আবেদনে বলেছে, সরকারের সঙ্গে ১শ২০ কোটি টাকায় ৫০ হাজার মে. টন গম সবরাহের জন্য চুক্তি হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে টেন্ডার আহ্বান করলে সে টেন্ডারে অংশ নেয়। এসব নথিপত্রও সে ব্যাংকে দাখিল করেছে। আসলে পুরো নথিপত্র ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। যা ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি জে কিবরিয়া অডিট কোম্পানির অডিতে বেরিয়ে আষে। খাদ্য অধিদফতরের সবরাহ, বণ্টন ও বিতরণ বিভাগের পরিচালক মো. বদরুল হাসাসের স্বাক্ষরিত (ইউও নোট নং ৩ তারিখ ৫ জানুয়ারী ২০১৫) এর কপি মর্মে জানা গেছে মো. বদরুল হাসানের সঙ্গে টিপু সুলতানের কোন চুক্তি হয়নি। যে এমওইউ এর ভিত্তিতে ঋণটি দেয়া হয়, তা পরবর্তীতে জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে । অর্থাৎ জাল রেকর্ডপত্রাদি খাটি হিসেবে ব্যবহার করে, ঋণটি সুকৌশলে অনুমোদন করে নেয়া হয়েছে। ১৫ হাজার মে. টন পণ্য একদিনে একটি ট্রাকে পরিবহন দেখানো হয়েছে, যা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এলটিআরের বিপরীতে কোন টাকা পরিশোধ হয় নি এবং ঋণটি বর্তমানে শ্রেণীকৃত অবস্থায় আছে যার বিপরীতে মরগেজ একেবারেই অপ্রতুল এবং এটা পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।