ডিজিটাল বাংলাদেশের গ্রামীণ চিত্র

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার ৮ বছরেও সংস্কার হয়নি জরাজীর্ণ সেতু

লোহার বিমের ওপর কংক্রিট ঢালাই করা সেতুর ওপর বড় গর্ত, রেলিং ভাঙা। সেতুর মাঝ খাসের ঢালাই ভেঙ্গে খালে পরে গেছে। পানির ভেতরে বসানো বিম ভেঙ্গে পড়ছে। সেতুর মাঝ অংশের বিম আগেই ভেঙ্গে হারিয়ে গেছে। স্থানীয়রা বড় বড় গাছের গুড়ি বসিয়ে, ওপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে সেতু দিয়ে কোনমতে চলাচল করছে। এদিকে আট বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে। এই সেতুটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপর নির্মিত। সেতুটির নাম রাঙ্গাবালী সেতু।

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার পাশাপাশি দুইটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগের এই সেতুটি এতটাই নরবড়ে হয়ে পড়েছে, যে কোন সময়ে ধসে পরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ও পাশ্ববর্তী ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন এই দুই ইউনিয়নের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গহিনখালী খালের ওপর লোহার বিম এবং ওপর কংক্রিট ঢালাই এই রাঙ্গাবালী সেতুটি নির্মাণ করে। এই সেতুর উত্তর পাড়ে রাঙ্গাবালীর বাহেরচর ও দক্ষিণ পাড়ে ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালী। এলজিইডি, উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৫ মিটার, চওড়া ২ মিটার। ১৯৯০ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। ২০১২ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লোকজন চলাচলেও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় গাছ খালে বসিয়ে, নিচে গাছের আড়াআড়ি বিমের মতো রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে তার ওপর কাঠের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি কোন রকমে চলাচল উপযোগী করে রাখা হয়েছে। লোকজন হাটা চলার সময়ে সেতু হেলতে-দুলতে থাকে।

গহিনখালী এলাকার গৃহবধূ আসমা বেগম বলেন, চিকিৎসা সেবা নিয়ে ওষুধপত্র কিনতে বাহেরচর বাজারে যাওয়ার জন্য এই সেতুটি পার হতে হচ্ছে তাকে। অনেকটা ভয় ও ঝুঁকি নিয়ে তারা এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। তবে যে কোন সময়ে সেতুটি ভেঙ্গে পরে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি। বাহেরচর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্বাস হাওলাদার জানান, সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট (বড় বাজার) বসে। খালের দক্ষিণ পাড়ের গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকার মানুষ তাদের এখান থেকেই হাটবাজার করে নিয়ে যেত। কিন্তু সেতুটি এটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে মানুষজন এখন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলে ভয় পাচ্ছেন। যে কারণে অপর পাদের মানুষজন এখন তাদের বাজারে কম আসছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরায় দুর্ভোগে পরবে শিক্ষার্থীরাও। রাঙ্গাবালীর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। কারণ করোনার প্রভাব কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। তখন ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকা থেকে শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে সেতু পেরিয়ে তার স্কুলে আসতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, এই সেতুটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরলে এলজিইডি আট বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে সংস্কারও করেনি কিংবা নতুন করে সেতু নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য বাব বার তাগিদ দেয়া হচ্ছে কিন্তু সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।

ছোট বাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ.বি.এম আবদুল মান্নান বলেন, আসলে দুই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, কৃষিকাজ এবং লেখাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ বাহেরচর বাজার এলাকার এই সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকজন চলাচল করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও সেতু নির্মিত হচ্ছে না। দুই এলাকার মানুষের স্বার্থে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি। এলজিইডি, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির বলেন, আসলেই সেতুটি এখন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সেতু নির্মাণের জন্য সমন্বয় কমিটির উপস্থপান করা হয়েছে। এলজিইডি, পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ছত্তার বলেন, রাঙ্গাবালী সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

ডিজিটাল বাংলাদেশের গ্রামীণ চিত্র

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার ৮ বছরেও সংস্কার হয়নি জরাজীর্ণ সেতু

স্বপন ব্যানার্জী, পটুয়াখালী

image

লোহার বিমের ওপর কংক্রিট ঢালাই করা সেতুর ওপর বড় গর্ত, রেলিং ভাঙা। সেতুর মাঝ খাসের ঢালাই ভেঙ্গে খালে পরে গেছে। পানির ভেতরে বসানো বিম ভেঙ্গে পড়ছে। সেতুর মাঝ অংশের বিম আগেই ভেঙ্গে হারিয়ে গেছে। স্থানীয়রা বড় বড় গাছের গুড়ি বসিয়ে, ওপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে সেতু দিয়ে কোনমতে চলাচল করছে। এদিকে আট বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে। এই সেতুটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপর নির্মিত। সেতুটির নাম রাঙ্গাবালী সেতু।

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার পাশাপাশি দুইটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগের এই সেতুটি এতটাই নরবড়ে হয়ে পড়েছে, যে কোন সময়ে ধসে পরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ও পাশ্ববর্তী ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন এই দুই ইউনিয়নের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গহিনখালী খালের ওপর লোহার বিম এবং ওপর কংক্রিট ঢালাই এই রাঙ্গাবালী সেতুটি নির্মাণ করে। এই সেতুর উত্তর পাড়ে রাঙ্গাবালীর বাহেরচর ও দক্ষিণ পাড়ে ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালী। এলজিইডি, উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৫ মিটার, চওড়া ২ মিটার। ১৯৯০ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। ২০১২ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লোকজন চলাচলেও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় গাছ খালে বসিয়ে, নিচে গাছের আড়াআড়ি বিমের মতো রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে তার ওপর কাঠের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি কোন রকমে চলাচল উপযোগী করে রাখা হয়েছে। লোকজন হাটা চলার সময়ে সেতু হেলতে-দুলতে থাকে।

গহিনখালী এলাকার গৃহবধূ আসমা বেগম বলেন, চিকিৎসা সেবা নিয়ে ওষুধপত্র কিনতে বাহেরচর বাজারে যাওয়ার জন্য এই সেতুটি পার হতে হচ্ছে তাকে। অনেকটা ভয় ও ঝুঁকি নিয়ে তারা এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। তবে যে কোন সময়ে সেতুটি ভেঙ্গে পরে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি। বাহেরচর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্বাস হাওলাদার জানান, সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট (বড় বাজার) বসে। খালের দক্ষিণ পাড়ের গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকার মানুষ তাদের এখান থেকেই হাটবাজার করে নিয়ে যেত। কিন্তু সেতুটি এটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে মানুষজন এখন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলে ভয় পাচ্ছেন। যে কারণে অপর পাদের মানুষজন এখন তাদের বাজারে কম আসছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরায় দুর্ভোগে পরবে শিক্ষার্থীরাও। রাঙ্গাবালীর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। কারণ করোনার প্রভাব কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। তখন ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকা থেকে শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে সেতু পেরিয়ে তার স্কুলে আসতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, এই সেতুটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরলে এলজিইডি আট বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে সংস্কারও করেনি কিংবা নতুন করে সেতু নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য বাব বার তাগিদ দেয়া হচ্ছে কিন্তু সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।

ছোট বাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ.বি.এম আবদুল মান্নান বলেন, আসলে দুই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, কৃষিকাজ এবং লেখাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ বাহেরচর বাজার এলাকার এই সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকজন চলাচল করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও সেতু নির্মিত হচ্ছে না। দুই এলাকার মানুষের স্বার্থে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি। এলজিইডি, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির বলেন, আসলেই সেতুটি এখন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সেতু নির্মাণের জন্য সমন্বয় কমিটির উপস্থপান করা হয়েছে। এলজিইডি, পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ছত্তার বলেন, রাঙ্গাবালী সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।