বালু উত্তোলনে সোমেশ্বরী মরুভূমি! বিলুপ্তির পথে মহাশোল

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভারত থেকে আসা মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীতেই একমাত্র মহাশোল মাছের আবাস ভূমি। মহাশোল মাছটিকে অনেকেই মহাশের, মাশোল, টর, চন্দনা প্রভৃতি নামে ডেকে থাকে। বর্তমানে সোমেশ্বরী নদীর বুক থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীটি এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাই এই নদী থেকে সুস্বাদু মহাশোল মাছ ও নানিদ মাছ বিলুপ্তি হয়ে পড়েছে। জাা যায়, মহাশোলের দুটি প্রজাতি। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Tortor, Torputitora. আমাদের দেশে দুই প্রজাতির মহাশোলই পাওয়া যায়। মহাশোল সাধারণত ৫২ সেন্টিমিটার লম্বা ও নয় কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। দেহ লম্বা, মুখ অধোমুখী, মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের বর্ণ ওপরের দিকটা বাদামী সবুজ, পেটের দিকটা রূপালী এবং পিঠের পাখনা লালচে বর্ণের হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে প্রবীণ মৎস চাষি ইন্দ্র মোহনসহ অন্যান্যরা সংবাদকে জানান, দুর্গাপুরে সোমেশ^রী নদীর মহাশোল মাছের উৎস মুখগুলো বন্ধ রয়েছে। শুকনো মৌসুমে কংশ ও সোমেশ^রী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জায়গা নষ্ট হওয়ার ফলে মহাশোল মাছ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বর্তমানে কোন কোন সময় পাওয়া গেলেও তা তিন থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সোমেশ্বরী ও কংস নদী ছাড়াও আশপাশের হাওড়, বিল-ঝিল বা অন্য কোন মিঠা পানির নদ-নদীতেও হঠাৎ দেখা পাওয়া যায় মহাশোল মাছের।

চকলেঙ্গুরা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, পুকুরে মহাশোলের চাষ সফল না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, পুকুরে মাছটির বৃদ্ধি খুবই ধীর গতিতে। পোনা ছেড়ে দেখেছি, দুই থেকে দেড় বছরে মাত্র দেড় কেজি ওজন হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় জেলেরা বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে মহাশোল চাষে আগ্রহ নেই। দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুন্ডু সংবাদ কে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মাছ মহাশোল। অত্র অঞ্চলের নদীগুলোতে এর বংশ বিস্তারের স্থল। নানা সমস্যার কারণেই নদীগুলোতে এখন আর বংশ বিস্তার করতে পারছে না মহাশোল মাছ। তবে মহাশোল মাছের বংশ বিস্তারে নতুন নতুন উদ্ভাবনে ময়মনসিংহে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

বালু উত্তোলনে সোমেশ্বরী মরুভূমি! বিলুপ্তির পথে মহাশোল

মোহন মিয়া, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)

image

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভারত থেকে আসা মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীতেই একমাত্র মহাশোল মাছের আবাস ভূমি। মহাশোল মাছটিকে অনেকেই মহাশের, মাশোল, টর, চন্দনা প্রভৃতি নামে ডেকে থাকে। বর্তমানে সোমেশ্বরী নদীর বুক থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীটি এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাই এই নদী থেকে সুস্বাদু মহাশোল মাছ ও নানিদ মাছ বিলুপ্তি হয়ে পড়েছে। জাা যায়, মহাশোলের দুটি প্রজাতি। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Tortor, Torputitora. আমাদের দেশে দুই প্রজাতির মহাশোলই পাওয়া যায়। মহাশোল সাধারণত ৫২ সেন্টিমিটার লম্বা ও নয় কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। দেহ লম্বা, মুখ অধোমুখী, মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের বর্ণ ওপরের দিকটা বাদামী সবুজ, পেটের দিকটা রূপালী এবং পিঠের পাখনা লালচে বর্ণের হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে প্রবীণ মৎস চাষি ইন্দ্র মোহনসহ অন্যান্যরা সংবাদকে জানান, দুর্গাপুরে সোমেশ^রী নদীর মহাশোল মাছের উৎস মুখগুলো বন্ধ রয়েছে। শুকনো মৌসুমে কংশ ও সোমেশ^রী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জায়গা নষ্ট হওয়ার ফলে মহাশোল মাছ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বর্তমানে কোন কোন সময় পাওয়া গেলেও তা তিন থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সোমেশ্বরী ও কংস নদী ছাড়াও আশপাশের হাওড়, বিল-ঝিল বা অন্য কোন মিঠা পানির নদ-নদীতেও হঠাৎ দেখা পাওয়া যায় মহাশোল মাছের।

চকলেঙ্গুরা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, পুকুরে মহাশোলের চাষ সফল না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, পুকুরে মাছটির বৃদ্ধি খুবই ধীর গতিতে। পোনা ছেড়ে দেখেছি, দুই থেকে দেড় বছরে মাত্র দেড় কেজি ওজন হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় জেলেরা বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে মহাশোল চাষে আগ্রহ নেই। দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুন্ডু সংবাদ কে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মাছ মহাশোল। অত্র অঞ্চলের নদীগুলোতে এর বংশ বিস্তারের স্থল। নানা সমস্যার কারণেই নদীগুলোতে এখন আর বংশ বিস্তার করতে পারছে না মহাশোল মাছ। তবে মহাশোল মাছের বংশ বিস্তারে নতুন নতুন উদ্ভাবনে ময়মনসিংহে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।