মার্কিন গবেষণায় উঠে এসেছে

কোভিড-১৯ মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করছে

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। কোনো কোনো রোগীর আবার প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে, স্মৃতিভ্রংশ বা ঘুমের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা নতুন এক গবেষণায় দাবি করেছেন। ভাইরাসটি সরাসরি মস্তিষ্কে হানা দেয়ার ফলেই এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কোভিড-১৯ রোগীরা। মস্তিষ্কের কোষে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মরণঘাতী এ ভাইরাস। এএফপি।

জিকা ভাইরাসও মস্তিষ্কের কোষে সংক্রমণ ছড়ায়। তবে কোভিডের মতো ভয়ংকরভাবে নয়। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেইন বা নভেল করোনাভাইরাস মস্তিষ্কের কোষকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। যে কারণে মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কোভিড-১৯ কিছু রোগী। নতুন গবেষণা বলছে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের দাবি, মস্তিষ্কের কোষে খুব তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারছে সার্স-কভ-২ ভাইরাস। সংখ্যায় বেড়ে কোষকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলছে এ ভাইরাস। ফলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারছে না। ধীরে ধীরে এসব কোষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন বিজ্ঞানীদের ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষক দল এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এস অ্যান্ড্রু জোসেফসন বলেছেন, কোভিডের সংক্রমণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে কোষ দ্রুত নষ্ট করে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধাতে কোভিডের জুড়ি নেই। ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের মস্তিষ্কে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়ে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়ছে কোভিড-১৯। করোনায় মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষ নিয়ে পরীক্ষাও করা হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই, স্নায়ু কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে করোনা। প্রতিলিপি তৈরি করছে একটানা। মস্তিষ্কের কোষে এসিই-২ রিসেপটর বা গ্রহণকারী প্রোটিনের পরিমাণ কম। এ প্রোটিনকে আশ্রয় করেই মানুষের দেহকোষে ঢুকছে করোনাভাইরাস।

গবেষকদের দাবি, মস্তিষ্কে করোনার রিসেপটর প্রোটিন কম থাকলেও ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষে এ প্রোটিনের দেখা মিলেছে। মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষ পরীক্ষা করেও অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, কোষে পর্যাপ্ত রিসেপটর প্রোটিন রয়েছে, যা ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

‘আলঝেইমার্স ডিজিস’ সায়েন্স জার্নালে এক গবেষণার প্রতিবেদন সামনে এনেছিলেন নিউরোলজিস্টরা। কোভিড-১৯ সংক্রমণে কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে বা হতে পারে, তার সম্ভাব্য কিছু কারণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। নিউরোলজিস্টরা সেখানে জানান, ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষকে নষ্ট করে দিচ্ছে করোনাভাইরাস। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া বাধা পাচ্ছে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে ‘ব্রেইন ড্যামেজ’ বা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার নতুন উপসর্গগুলোর মধ্যে মানসিক অবসাদ, ভুল বকা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদিরও উল্লেখ করেছেন নিউরোলজিস্টরা। গবেষণায় দেখা গেছে, এর কারণ হতে পারে সাইটোকাইন প্রোটিনের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষরণ এবং রক্ত চলাচল বাধা পাওয়া। মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হলে বা রক্ত জমাট বাঁধলে তীব্র প্রদাহ থেকে স্মৃতিবিনাশের ঝুঁকি বাড়ছে। ১৮-৮৫ বছর বয়সী কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেকেই সাইকোসিস বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি ‘অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড এনসেফ্যালোমায়েলিটিস’ রোগে আক্রান্ত হতেও দেখা যাচ্ছে। এটি মস্তিষ্কের এক জটিল রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে তীব্র প্রদাহ হয়। গন্ধ ও স্বাদ চলে যাওয়াও মস্তিষ্কের রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

শরীরের স্নায়ুকোষ মস্তিষ্কে বার্তা পৌঁছে দেয়। গন্ধের যে অনুভূতি, সেটি এ কোষবাহিত হয়েই মস্তিষ্কে পৌঁছায়। কোভিড-১৯ এ সিস্টেমকে নষ্ট করে দেয়। ফলে গন্ধ নিতে পারার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারাতে থাকে রোগীদের। এ রোগের নাম ‘অ্যানোসমিয়া।’ স্বাদ নেয়ার ক্ষমতা চলে যাওয়ায় স্বাদহীনতা রোগ অ্যাগিউসিয়া হয় একই কারণে।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

মার্কিন গবেষণায় উঠে এসেছে

কোভিড-১৯ মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করছে

image

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। কোনো কোনো রোগীর আবার প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে, স্মৃতিভ্রংশ বা ঘুমের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা নতুন এক গবেষণায় দাবি করেছেন। ভাইরাসটি সরাসরি মস্তিষ্কে হানা দেয়ার ফলেই এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কোভিড-১৯ রোগীরা। মস্তিষ্কের কোষে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মরণঘাতী এ ভাইরাস। এএফপি।

জিকা ভাইরাসও মস্তিষ্কের কোষে সংক্রমণ ছড়ায়। তবে কোভিডের মতো ভয়ংকরভাবে নয়। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেইন বা নভেল করোনাভাইরাস মস্তিষ্কের কোষকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। যে কারণে মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কোভিড-১৯ কিছু রোগী। নতুন গবেষণা বলছে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের দাবি, মস্তিষ্কের কোষে খুব তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারছে সার্স-কভ-২ ভাইরাস। সংখ্যায় বেড়ে কোষকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলছে এ ভাইরাস। ফলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারছে না। ধীরে ধীরে এসব কোষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন বিজ্ঞানীদের ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষক দল এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এস অ্যান্ড্রু জোসেফসন বলেছেন, কোভিডের সংক্রমণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে কোষ দ্রুত নষ্ট করে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধাতে কোভিডের জুড়ি নেই। ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের মস্তিষ্কে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়ে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়ছে কোভিড-১৯। করোনায় মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষ নিয়ে পরীক্ষাও করা হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই, স্নায়ু কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে করোনা। প্রতিলিপি তৈরি করছে একটানা। মস্তিষ্কের কোষে এসিই-২ রিসেপটর বা গ্রহণকারী প্রোটিনের পরিমাণ কম। এ প্রোটিনকে আশ্রয় করেই মানুষের দেহকোষে ঢুকছে করোনাভাইরাস।

গবেষকদের দাবি, মস্তিষ্কে করোনার রিসেপটর প্রোটিন কম থাকলেও ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষে এ প্রোটিনের দেখা মিলেছে। মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষ পরীক্ষা করেও অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, কোষে পর্যাপ্ত রিসেপটর প্রোটিন রয়েছে, যা ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

‘আলঝেইমার্স ডিজিস’ সায়েন্স জার্নালে এক গবেষণার প্রতিবেদন সামনে এনেছিলেন নিউরোলজিস্টরা। কোভিড-১৯ সংক্রমণে কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে বা হতে পারে, তার সম্ভাব্য কিছু কারণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। নিউরোলজিস্টরা সেখানে জানান, ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষকে নষ্ট করে দিচ্ছে করোনাভাইরাস। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া বাধা পাচ্ছে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে ‘ব্রেইন ড্যামেজ’ বা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার নতুন উপসর্গগুলোর মধ্যে মানসিক অবসাদ, ভুল বকা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদিরও উল্লেখ করেছেন নিউরোলজিস্টরা। গবেষণায় দেখা গেছে, এর কারণ হতে পারে সাইটোকাইন প্রোটিনের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষরণ এবং রক্ত চলাচল বাধা পাওয়া। মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হলে বা রক্ত জমাট বাঁধলে তীব্র প্রদাহ থেকে স্মৃতিবিনাশের ঝুঁকি বাড়ছে। ১৮-৮৫ বছর বয়সী কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেকেই সাইকোসিস বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি ‘অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড এনসেফ্যালোমায়েলিটিস’ রোগে আক্রান্ত হতেও দেখা যাচ্ছে। এটি মস্তিষ্কের এক জটিল রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে তীব্র প্রদাহ হয়। গন্ধ ও স্বাদ চলে যাওয়াও মস্তিষ্কের রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

শরীরের স্নায়ুকোষ মস্তিষ্কে বার্তা পৌঁছে দেয়। গন্ধের যে অনুভূতি, সেটি এ কোষবাহিত হয়েই মস্তিষ্কে পৌঁছায়। কোভিড-১৯ এ সিস্টেমকে নষ্ট করে দেয়। ফলে গন্ধ নিতে পারার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারাতে থাকে রোগীদের। এ রোগের নাম ‘অ্যানোসমিয়া।’ স্বাদ নেয়ার ক্ষমতা চলে যাওয়ায় স্বাদহীনতা রোগ অ্যাগিউসিয়া হয় একই কারণে।