মানবসৃষ্ট ধ্বংসযঞ্জে

চার দশকে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বণ্যপ্রাণীর প্রাণনাশ

মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গত চার দশকে পৃথিবীর মোট বন্যপ্রাণীর সংখ্যা প্রায় আটষট্টি শতাংশ (দুই-তৃতীয়াংশ) কমে গেছে। গত বুধবার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। লিভিং প্লানেটের আরও এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালের থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রায় ৪,৩৯২টি পাখি, মাছ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রাণনাশ হয়েছে মানুষের দ্বারা।

বিবিসি জানিয়েছে, বন্যপ্রাণীর ‘সর্বনাশা এ পতনের’ হার কমার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না এবং মানুষ যেহারে প্রকৃতি ধ্বংস করছে তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। ডব্লিউডব্লিউএফের প্রধান নির্বাহী তানিয়া স্টিল বলেছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস, বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং বনে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মতো কারণে বিশ্বে বন্যপ্রাণির সংখ্যা ‘হু হু করে কমছে’।

‘যাকে আমরা আমাদের বাড়ি বলছি, সেই পৃথিবীর সর্বনাশ করে চলেছি আমরা। নিজেদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পৃথিবীতে টিকে থাকার সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলছি। প্রকৃতি এখন মরিয়া হয়ে আমাদের বিপদসংকেত পাঠাচ্ছে, সময় ফুরিয়ে আসছে,’ বলেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কয়েক হাজার প্রজাতি এবং তাদের বাসস্থান নিয়ে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ডব্লিউডব্লিউএফ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

বন্যপ্রাণীর সংখ্যার এ ক্রমাবনতিকে মানুষের কর্মকা-ে পৃথিবীর যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বলছেন লন্ডনের জুওলজিকাল সোসাইটির (জেডএসএল) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক পরিচালক ড. অ্যান্ড্রু টেরি।

জেডএসএলই ডব্লিউডব্লিউএফের প্রতিবেদনে তথ্য সরবারহ করেছে। ‘যদি কোনকিছুই না বদলায়, তাহলে সন্দেহাতীতভাবে বন্যাপ্রাণীর সংখ্যা কমতে থাকবে, একসময় তা বন্যপ্রাণীগুলোকে বিলুপ্ত করে দেবে এবং আমরা যে বাস্তুসংস্থানের ওপর নির্ভর করছি তার অখ-তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে,’ বলেছেন টেরি। মানুষ এবং প্রকৃতি যে একে অপরের পরিপূরক, কোভিড-১৯ মহামারী তা ভালোমতোই মনে করিয়ে দিয়েছে বলেও ডব্লিউডব্লিউএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাসস্থান ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর ব্যবহার ও বেচাকেনাসহ এবারের মহামারীর আবির্ভাবের পেছনে যেসব কারণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, তার অনেকগুলো বন্যপ্রাণির সংকোচনের পেছনেও দায়ী বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনও যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় এবং উৎপাদন ও খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া বদলে ফেলা যায় তাহলে বিপন্ন বন্যপ্রাণির বাসস্থান ধ্বংস হওয়া বন্ধ এমনকি অনেকক্ষেত্রে পরিস্থিতি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়াও সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীদের বেশকিছু মডেলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

‘সেরকমটা করতে হলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন, শক্তি তৈরি, সমুদ্রের ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। তবে সবার আগে লাগবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ‘আছে যখন ভালোই’ বা ‘জরুরি কিছু নয়’ এরকমটা না দেখে পৃথিবীর ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে একক সর্বশ্রেষ্ট মিত্র হিসেবে দেখতে হবে,’ বলেছেন ব্রিটিশ টিভি উপস্থাপক ও প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো।

১৯৭০ সালের পর থেকে ৪৬ বছরে বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় লাতিন আমেরিকার ও ক্যারিবীয় অঞ্চলেই বন্যপ্রাণির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অঞ্চলটির সরীসৃপ, উভচর ও পাখি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউডব্লিউএফ।

‘এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক চিত্র এবং বন্যপ্রাণি সংকোচনের গতিমুখ ঘুরিয়ে দিতে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দেয়া হয়েছে,’ বলেছেন জেডএসএলের লুইজ ম্যাকরে।

image
আরও খবর
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস
ভাসানচর নয় স্বদেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান চাকরিচ্যুত
অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের ট্রানজিট বেছে নেয়া হয় বাংলাদেশ
বহির্বিভাগে সেবাপ্রাপ্তির অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনলাইনে
সাহেদের অস্ত্র মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
অচলাবস্থার ৮ দিন পর ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে আজ
শিশু-উদ্ধার : দুই অপহরণকারী গ্রেফতার
জঙ্গি সন্দেহে ৪ জন গ্রেফতার
সাবেক এমপি শামছুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাবরিনা-আরিফসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলায় আরও দু’জনের সাক্ষ্য
বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৩
সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক পুলিশসহ নিহত ৩

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

মানবসৃষ্ট ধ্বংসযঞ্জে

চার দশকে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বণ্যপ্রাণীর প্রাণনাশ

image

মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গত চার দশকে পৃথিবীর মোট বন্যপ্রাণীর সংখ্যা প্রায় আটষট্টি শতাংশ (দুই-তৃতীয়াংশ) কমে গেছে। গত বুধবার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। লিভিং প্লানেটের আরও এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালের থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রায় ৪,৩৯২টি পাখি, মাছ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রাণনাশ হয়েছে মানুষের দ্বারা।

বিবিসি জানিয়েছে, বন্যপ্রাণীর ‘সর্বনাশা এ পতনের’ হার কমার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না এবং মানুষ যেহারে প্রকৃতি ধ্বংস করছে তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। ডব্লিউডব্লিউএফের প্রধান নির্বাহী তানিয়া স্টিল বলেছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস, বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং বনে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মতো কারণে বিশ্বে বন্যপ্রাণির সংখ্যা ‘হু হু করে কমছে’।

‘যাকে আমরা আমাদের বাড়ি বলছি, সেই পৃথিবীর সর্বনাশ করে চলেছি আমরা। নিজেদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পৃথিবীতে টিকে থাকার সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলছি। প্রকৃতি এখন মরিয়া হয়ে আমাদের বিপদসংকেত পাঠাচ্ছে, সময় ফুরিয়ে আসছে,’ বলেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কয়েক হাজার প্রজাতি এবং তাদের বাসস্থান নিয়ে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ডব্লিউডব্লিউএফ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

বন্যপ্রাণীর সংখ্যার এ ক্রমাবনতিকে মানুষের কর্মকা-ে পৃথিবীর যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বলছেন লন্ডনের জুওলজিকাল সোসাইটির (জেডএসএল) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক পরিচালক ড. অ্যান্ড্রু টেরি।

জেডএসএলই ডব্লিউডব্লিউএফের প্রতিবেদনে তথ্য সরবারহ করেছে। ‘যদি কোনকিছুই না বদলায়, তাহলে সন্দেহাতীতভাবে বন্যাপ্রাণীর সংখ্যা কমতে থাকবে, একসময় তা বন্যপ্রাণীগুলোকে বিলুপ্ত করে দেবে এবং আমরা যে বাস্তুসংস্থানের ওপর নির্ভর করছি তার অখ-তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে,’ বলেছেন টেরি। মানুষ এবং প্রকৃতি যে একে অপরের পরিপূরক, কোভিড-১৯ মহামারী তা ভালোমতোই মনে করিয়ে দিয়েছে বলেও ডব্লিউডব্লিউএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাসস্থান ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর ব্যবহার ও বেচাকেনাসহ এবারের মহামারীর আবির্ভাবের পেছনে যেসব কারণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, তার অনেকগুলো বন্যপ্রাণির সংকোচনের পেছনেও দায়ী বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনও যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় এবং উৎপাদন ও খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া বদলে ফেলা যায় তাহলে বিপন্ন বন্যপ্রাণির বাসস্থান ধ্বংস হওয়া বন্ধ এমনকি অনেকক্ষেত্রে পরিস্থিতি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়াও সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীদের বেশকিছু মডেলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

‘সেরকমটা করতে হলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন, শক্তি তৈরি, সমুদ্রের ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। তবে সবার আগে লাগবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ‘আছে যখন ভালোই’ বা ‘জরুরি কিছু নয়’ এরকমটা না দেখে পৃথিবীর ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে একক সর্বশ্রেষ্ট মিত্র হিসেবে দেখতে হবে,’ বলেছেন ব্রিটিশ টিভি উপস্থাপক ও প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো।

১৯৭০ সালের পর থেকে ৪৬ বছরে বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় লাতিন আমেরিকার ও ক্যারিবীয় অঞ্চলেই বন্যপ্রাণির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অঞ্চলটির সরীসৃপ, উভচর ও পাখি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউডব্লিউএফ।

‘এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক চিত্র এবং বন্যপ্রাণি সংকোচনের গতিমুখ ঘুরিয়ে দিতে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দেয়া হয়েছে,’ বলেছেন জেডএসএলের লুইজ ম্যাকরে।