সন্দেহভাজন আটক ৬ পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দকৃত অস্ট্রেলিয়াগামী নতুন মাদক অ্যামফিটামিন পাচারে শুধুমাত্র ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশকে। ইউরোপের দেশগুলোতে এ মাদকের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা মূল্যের চালানটি পাঠানোর চেষ্টা করছিল। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ যাচাইবাছাই করে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আহসানুল জব্বার।
গতকাল ডিএনসি সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী, পরিচালক (অপারেশন্স) ড. এএফএম মাসুম রব্বানী, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা, সহকারী পরিচালক (অপারেশন্স) মো. বজলুর রহমান, উপ-পরিচালক (ঢাকা-মেট্রো) মুকুল জ্যোতি চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডিজি মো. আহসানুল জব্বার বলেন, তৈরি পোশাক (জিন্স প্যান্ট) রপ্তানির আড়ালে ৭টি কার্টনে ছোট-বড় ২৮টি কার্বনের লেয়ার দিয়ে তৈরি পাতলা এলুমিনিয়াম প্যাকেটে পাচারের সময় বিমানবন্দরে সমন্বিত অভিযানে ধরা পড়ে অ্যামফিটামিনের চালানটি। এরপরেই জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে ডিএনসির একাধীক টিম। সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেনÑ আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সংস্থা বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ (৫০), সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রাসেল মাহমুদ (৩২), ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম (৪৩), এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম (৩০) ও মো. নজরুল ইসলাম।
ডিএনসি প্রধান বলেন, ৩৪০ কার্টন পণ্যের আড়ালে ওই ৭টি কার্টন পাচার করা হচ্ছিল। কার্টনগুলোর সংযুক্ত রপ্তানি দলিলাদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফেডেক্সের মাস্টারওয়ে বিলে শিপারের নাম নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেড। যার ঠিকানা কেরানীগঞ্জের ১৪ নম্বর রোডের ৫০১ নম্বর বাড়ি। ফেডেক্সে পণ্যগুলো বুকিং দিয়েছে তাদেরই লোকাল এজেন্ট ইউনাইটেড এক্সপ্রেস। আর এসব পণ্য রপ্তানিতে কাস্টমসের জন্য ম্যানুয়ালি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছে রপ্তানিকারকের পক্ষে মেসার্স ডিনামিক ট্রেডার্স। অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায়, প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেপচুন ফ্রেইটের ঠিকানা ভুয়া। তবে, আশকোনায় তাদের অফিসের ঠিকানা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়। রাসেলকে গ্রেফতার করা গেলে মূলহোতা সম্পর্কে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন্স) ড. এএফএম মাসুম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। কিন্তু মায়ানমার ও চীনে বৈধভাবে অ্যামফিটামিন তৈরি হয়ে থাকে। ফলে চোরাকারবারীরা হয়তো ওই দেশগুলোর কোনটি থেকে এগুলো এনে হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করতে যাচ্ছিল। এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অধিদফতরের রাসায়নিক গবেষক ড. শফিক বলেন, ৭টি কার্টন থেকে প্যাকেট বাদে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন উদ্ধার করা হয়। এগুলো এখনও আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় মাদক কারবারিরা ইউরোপে পাচার করে থাকতে পারে। এগুলোর আনুমানিক দাম কেজি প্রতি ২ কোটি ধরলে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আসবে। আর বাংলাদেশে যে ইয়াবা আসে সে ধরনের ১৩ লাখ ৩২ হাজার ইয়াবা তৈরি করা যেত।
শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭
সন্দেহভাজন আটক ৬ পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দকৃত অস্ট্রেলিয়াগামী নতুন মাদক অ্যামফিটামিন পাচারে শুধুমাত্র ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশকে। ইউরোপের দেশগুলোতে এ মাদকের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা মূল্যের চালানটি পাঠানোর চেষ্টা করছিল। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ যাচাইবাছাই করে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আহসানুল জব্বার।
গতকাল ডিএনসি সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী, পরিচালক (অপারেশন্স) ড. এএফএম মাসুম রব্বানী, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা, সহকারী পরিচালক (অপারেশন্স) মো. বজলুর রহমান, উপ-পরিচালক (ঢাকা-মেট্রো) মুকুল জ্যোতি চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডিজি মো. আহসানুল জব্বার বলেন, তৈরি পোশাক (জিন্স প্যান্ট) রপ্তানির আড়ালে ৭টি কার্টনে ছোট-বড় ২৮টি কার্বনের লেয়ার দিয়ে তৈরি পাতলা এলুমিনিয়াম প্যাকেটে পাচারের সময় বিমানবন্দরে সমন্বিত অভিযানে ধরা পড়ে অ্যামফিটামিনের চালানটি। এরপরেই জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে ডিএনসির একাধীক টিম। সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেনÑ আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সংস্থা বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ (৫০), সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রাসেল মাহমুদ (৩২), ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম (৪৩), এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম (৩০) ও মো. নজরুল ইসলাম।
ডিএনসি প্রধান বলেন, ৩৪০ কার্টন পণ্যের আড়ালে ওই ৭টি কার্টন পাচার করা হচ্ছিল। কার্টনগুলোর সংযুক্ত রপ্তানি দলিলাদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফেডেক্সের মাস্টারওয়ে বিলে শিপারের নাম নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেড। যার ঠিকানা কেরানীগঞ্জের ১৪ নম্বর রোডের ৫০১ নম্বর বাড়ি। ফেডেক্সে পণ্যগুলো বুকিং দিয়েছে তাদেরই লোকাল এজেন্ট ইউনাইটেড এক্সপ্রেস। আর এসব পণ্য রপ্তানিতে কাস্টমসের জন্য ম্যানুয়ালি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছে রপ্তানিকারকের পক্ষে মেসার্স ডিনামিক ট্রেডার্স। অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায়, প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেপচুন ফ্রেইটের ঠিকানা ভুয়া। তবে, আশকোনায় তাদের অফিসের ঠিকানা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়। রাসেলকে গ্রেফতার করা গেলে মূলহোতা সম্পর্কে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন্স) ড. এএফএম মাসুম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। কিন্তু মায়ানমার ও চীনে বৈধভাবে অ্যামফিটামিন তৈরি হয়ে থাকে। ফলে চোরাকারবারীরা হয়তো ওই দেশগুলোর কোনটি থেকে এগুলো এনে হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করতে যাচ্ছিল। এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অধিদফতরের রাসায়নিক গবেষক ড. শফিক বলেন, ৭টি কার্টন থেকে প্যাকেট বাদে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন উদ্ধার করা হয়। এগুলো এখনও আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় মাদক কারবারিরা ইউরোপে পাচার করে থাকতে পারে। এগুলোর আনুমানিক দাম কেজি প্রতি ২ কোটি ধরলে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আসবে। আর বাংলাদেশে যে ইয়াবা আসে সে ধরনের ১৩ লাখ ৩২ হাজার ইয়াবা তৈরি করা যেত।