রুশ হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন : মাইক্রোসফট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট জানিয়েছে, রাশিয়া, চীন ও ইরান সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা ২০২০’র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্ত ব্যক্তি ও বিভিন্ন গ্রুপের ওপর খবরদারির চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৬’র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচারণার নথি হাতিয়ে নেয়া রুশ হ্যাকাররা এবারও তৎপর রয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট বলছে, এবারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন উভয়ের প্রচারণার ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে হ্যাকাররা। সিএনএন, এবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বিশদ তদন্তের পর সংস্থাগুলোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই যে, নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের পরাজয়ের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিল রাশিয়া। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে সাইবার হামলা চালানোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয় ফেক নিউজ। স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্ত বলছে রাশিয়ান হ্যাকাররা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির কম্পিউটার সিস্টেম এবং ক্লিন্টনের প্রচারণা প্রধান জন পোদেস্টার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে সক্ষম হয়। ফাঁস হয় হাজার হাজার ইমেইল। পরে ফেসবুকও স্বীকার করে রুশ সমর্থিত বিভিন্ন কন্টেন্ট তাদের প্লাটফর্মে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন নাগরিকের কাছে পৌঁছেছিল।

মাইক্রোসফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা ও বিশ্বাস অর্জনে দায়িত্বপ্রাপ্ত টম ব্রাট বিবৃতিতে বলেছেন, একই রকমভাবে মানুষের লগ-ইন তথ্য এবং তাদের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেতে কার্যক্রম চালানো শুরু করেছে স্ট্রোনটিয়াম (রুশ প্রতিষ্ঠান), ধারণা করা হচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কিংবা কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এগুলো করা হচ্ছে।’ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চীনা হ্যাকাররা বাইডেনের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। ইরানি হ্যাকাররা ট্রাম্পের প্রচারণায় সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানানো অব্যাহত রেখেছে। সাইবার হামলার বেশিরভাগই সফল হতে পারেনি বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, হামলাকারীরা এখনও নির্বাচন ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিরা বিনামূল্যে কিংবা কম-দামি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে হ্যাকাররা। মাইক্রোসফটের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রচারণা দলের ডেপুটি ন্যাশনাল প্রেস সেক্রেটারি থিয়া ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ‘আমরা বড় লক্ষ্যবস্তু, ফলে আমাদের প্রচারণা দল এবং কর্মীদের লক্ষ্য করে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতে দেখা বিস্ময়কর কিছু নয়।’ অন্যদিকে বাইডেনের এক প্রচারণা কর্মী বলেছেন, ‘প্রচারণার শুরু থেকেই আমরা জানি যে এ ধরনের হামলার শিকার হতে হবে এবং আমরা প্রস্তুত। অপরদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানানো হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে জড়িত চার কর্মীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। এ ব্যক্তিরা হলেনÑ রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ইউক্রেনের সংসদ সদস্য আন্দ্রি দেরকাচ এবং সেন্ট পিটার্সবার্গভিত্তিক ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সির ট্রোল ফার্মের সঙ্গে জড়িত রাশিয়ার তিন কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে রাশিয়া নয় চীন ৩ নভেম্বরের ভোটের সবচেয়ে বড় হুমকির প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় ডেরকাচকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন সক্রিয় রাশিয়ান গোয়েন্দা বলে অভিহিত করেছে। গত মাসে দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ডেরকাচ সক্রিয়ভাবে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচারণাকে খর্ব করার জন্য কাজ করছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর জানা যায় ট্রাম্প নির্বাচনের রণক্ষেত্র মিশিগানে বিজয়ের পূর্বাভাস হিসাবে হাজার হাজার লোক ভাইরাস নিরাপত্তা বিধি অমান্য করায় প্রেসিডেন্ট বিমান বাহিনীর সামনে এসে দাঁড়ানোর সময় ট্রাম্প পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের বলেছিলেন, এটি কোনও ব্যক্তির ভিড় নয়। মিশিগানের মিডল্যান্ডের কাছে বিমানবন্দরের চিত্র এটি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তারা মিশিগানে একটি বৃহৎ পরিমাণ সময় ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে। জরিপ অনুসারে গণতান্ত্রিক প্রার্থী বিডেন জাতীয়ভাবে সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ১২ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে নিয়েছেন এ সময়ে। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স অনুসারে, বিডেনের নেতৃত্ব মিশিগানে স্ফটিক, যেখানে গড়ে ৪.২ শতাংশ পয়েন্ট রয়েছে।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

রুশ হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন : মাইক্রোসফট

image

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট জানিয়েছে, রাশিয়া, চীন ও ইরান সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা ২০২০’র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্ত ব্যক্তি ও বিভিন্ন গ্রুপের ওপর খবরদারির চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৬’র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচারণার নথি হাতিয়ে নেয়া রুশ হ্যাকাররা এবারও তৎপর রয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট বলছে, এবারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন উভয়ের প্রচারণার ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে হ্যাকাররা। সিএনএন, এবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বিশদ তদন্তের পর সংস্থাগুলোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই যে, নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের পরাজয়ের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিল রাশিয়া। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে সাইবার হামলা চালানোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয় ফেক নিউজ। স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্ত বলছে রাশিয়ান হ্যাকাররা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির কম্পিউটার সিস্টেম এবং ক্লিন্টনের প্রচারণা প্রধান জন পোদেস্টার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে সক্ষম হয়। ফাঁস হয় হাজার হাজার ইমেইল। পরে ফেসবুকও স্বীকার করে রুশ সমর্থিত বিভিন্ন কন্টেন্ট তাদের প্লাটফর্মে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন নাগরিকের কাছে পৌঁছেছিল।

মাইক্রোসফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা ও বিশ্বাস অর্জনে দায়িত্বপ্রাপ্ত টম ব্রাট বিবৃতিতে বলেছেন, একই রকমভাবে মানুষের লগ-ইন তথ্য এবং তাদের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেতে কার্যক্রম চালানো শুরু করেছে স্ট্রোনটিয়াম (রুশ প্রতিষ্ঠান), ধারণা করা হচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কিংবা কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এগুলো করা হচ্ছে।’ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চীনা হ্যাকাররা বাইডেনের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। ইরানি হ্যাকাররা ট্রাম্পের প্রচারণায় সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানানো অব্যাহত রেখেছে। সাইবার হামলার বেশিরভাগই সফল হতে পারেনি বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, হামলাকারীরা এখনও নির্বাচন ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিরা বিনামূল্যে কিংবা কম-দামি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে হ্যাকাররা। মাইক্রোসফটের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রচারণা দলের ডেপুটি ন্যাশনাল প্রেস সেক্রেটারি থিয়া ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ‘আমরা বড় লক্ষ্যবস্তু, ফলে আমাদের প্রচারণা দল এবং কর্মীদের লক্ষ্য করে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতে দেখা বিস্ময়কর কিছু নয়।’ অন্যদিকে বাইডেনের এক প্রচারণা কর্মী বলেছেন, ‘প্রচারণার শুরু থেকেই আমরা জানি যে এ ধরনের হামলার শিকার হতে হবে এবং আমরা প্রস্তুত। অপরদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানানো হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে জড়িত চার কর্মীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। এ ব্যক্তিরা হলেনÑ রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ইউক্রেনের সংসদ সদস্য আন্দ্রি দেরকাচ এবং সেন্ট পিটার্সবার্গভিত্তিক ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সির ট্রোল ফার্মের সঙ্গে জড়িত রাশিয়ার তিন কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে রাশিয়া নয় চীন ৩ নভেম্বরের ভোটের সবচেয়ে বড় হুমকির প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় ডেরকাচকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন সক্রিয় রাশিয়ান গোয়েন্দা বলে অভিহিত করেছে। গত মাসে দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ডেরকাচ সক্রিয়ভাবে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচারণাকে খর্ব করার জন্য কাজ করছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর জানা যায় ট্রাম্প নির্বাচনের রণক্ষেত্র মিশিগানে বিজয়ের পূর্বাভাস হিসাবে হাজার হাজার লোক ভাইরাস নিরাপত্তা বিধি অমান্য করায় প্রেসিডেন্ট বিমান বাহিনীর সামনে এসে দাঁড়ানোর সময় ট্রাম্প পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের বলেছিলেন, এটি কোনও ব্যক্তির ভিড় নয়। মিশিগানের মিডল্যান্ডের কাছে বিমানবন্দরের চিত্র এটি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তারা মিশিগানে একটি বৃহৎ পরিমাণ সময় ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে। জরিপ অনুসারে গণতান্ত্রিক প্রার্থী বিডেন জাতীয়ভাবে সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ১২ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে নিয়েছেন এ সময়ে। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স অনুসারে, বিডেনের নেতৃত্ব মিশিগানে স্ফটিক, যেখানে গড়ে ৪.২ শতাংশ পয়েন্ট রয়েছে।