দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েন

একটি প্রবাহমান নদী নৌচলাচলে অযোগ্য হওয়ার পথে

দুটি সরকারি দফতরের টানাপড়েনে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপাশা হয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকি পর্যন্ত সড়কে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যেকার জট খুলছে না। এমনকি এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু সচিব এবং নৌপরিবহন সচিবের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও সরকারের নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই সেতুটির নির্মাণ কাজ কবে পুনরায় শুরু ও শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমদি মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতুর ডিপিপি প্রণয়নের সময় বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর দক্ষিণ ব-দ্বীপ শাখার কাছে নদীটি কোন শ্রেণীর তা জানতে চাওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য নকশা প্রণয়নের আগে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর কাছে অনাপত্তি চাওয়া হলে প্রকৌশলীদের অদূরদর্শিতার কারণে সেখান থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭.২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ও ৩০.৪৮ মিটার হরাইজেন্টোল ক্লিয়ারেন্স রেখে প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণে সড়ক বিভাগকে অনাপত্তি পত্র প্রদান করা হয়। বিআইডিব্লিটিএর সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সেতু নকশা সার্কেল থেকে প্রস্তাবিত গোমা সেতুর জন্য ডিটেইল ডিজাইন সম্পন্ন করার পরে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের বরাবরে মূল সেত নির্মাণে ২০১৮ সালের ১৫ মে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেতুটির সমুদয় পাইল সম্পন্ন করে এবাটমেন্ট ও পিয়ারের ক্যাপ পর্যন্ত কাজ শেষ করার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। গত বছর ৯ মে বিআইডব্লিউটিএর তরফ থেকে দেয়া এক চিঠিতে পাঁয়রা সমুদ্র বন্দর শুরু হওয়ায় এই গোমা সেতুর রাঙ্গামাটি নদীটির গুরুত্ব ভবিষ্যতে অনেক বেড়ে যাবে ধারণা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার কথা জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিায়ারেন্স ১২.২০ মিটার ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নির্মাণ কাজ করার নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর থেকেই সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরসহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একাধিকবার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটএর সঙ্গে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণাল সভায়ও বিষয়য়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পরে ‘যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পূর্বে নেয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, বিআইডিব্লিউটিএর সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স যতটুকু সম্ভব সংশোধন পূর্বক সে সব সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে সড়ক অধিদফতরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং গত ৩০ জুন এক চিঠিতে জানায়, ‘নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি ভিত্তিসহ পিয়ার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সিট লেভেল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বিধায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (উচ্চতা) বৃদ্ধি করতে হলে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা সেতুটির স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে জানায়। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত লোড হবে। ফলে গোমা সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করা কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং।

এ অবস্থায় আরও সময় বয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বরিশাল সড়ক জোনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চোরম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গোমা সেতুর স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।

এ ব্যাপারে সড়ক অধিদফতরের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি সুরাহা হবার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন গোমা সেতুর কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে একই নদীর ওপর অপর একটি সেতু ৭.৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলবাসী সম্ভব হলে প্রবাহমান নদীটিকে নৌচলাচলের জন্য বাঁচিয়ে রেখে কিভাবে সেতুটি নির্মাণ করা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েন

একটি প্রবাহমান নদী নৌচলাচলে অযোগ্য হওয়ার পথে

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

দুটি সরকারি দফতরের টানাপড়েনে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপাশা হয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকি পর্যন্ত সড়কে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যেকার জট খুলছে না। এমনকি এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু সচিব এবং নৌপরিবহন সচিবের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও সরকারের নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই সেতুটির নির্মাণ কাজ কবে পুনরায় শুরু ও শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

বরিশালÑলক্ষ্মীপাশাÑদুমদি মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতুর ডিপিপি প্রণয়নের সময় বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর দক্ষিণ বÑদ্বীপ শাখার কাছে নদীটি কোন শ্রেণীর তা জানতে চাওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য নকশা প্রণয়নের আগে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর কাছে অনাপত্তি চাওয়া হলে প্রকৌশলীদের অদূরদর্শিতার কারণে সেখান থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭.২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ও ৩০.৪৮ মিটার হরাইজেন্টোল ক্লিয়ারেন্স রেখে প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণে সড়ক বিভাগকে অনাপত্তি পত্র প্রদান করা হয়। বিআইডিব্লিটিএর সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সেতু নকশা সার্কেল থেকে প্রস্তাবিত গোমা সেতুর জন্য ডিটেইল ডিজাইন সম্পন্ন করার পরে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের বরাবরে মূল সেত নির্মাণে ২০১৮ সালের ১৫ মে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেতুটির সমুদয় পাইল সম্পন্ন করে এবাটমেন্ট ও পিয়ারের ক্যাপ পর্যন্ত কাজ শেষ করার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। গত বছর ৯ মে বিআইডব্লিউটিএর তরফ থেকে দেয়া এক চিঠিতে পাঁয়রা সমুদ্র বন্দর শুরু হওয়ায় এই গোমা সেতুর রাঙ্গামাটি নদীটির গুরুত্ব ভবিষ্যতে অনেক বেড়ে যাবে ধারণা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার কথা জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিায়ারেন্স ১২.২০ মিটার ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নির্মাণ কাজ করার নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর থেকেই সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরসহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একাধিকবার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটএর সঙ্গে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণাল সভায়ও বিষয়য়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পরে ‘যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পূর্বে নেয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, বিআইডিব্লিউটিএর সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স যতটুকু সম্ভব সংশোধন পূর্বক সে সব সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে সড়ক অধিদফতরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং গত ৩০ জুন এক চিঠিতে জানায়, ‘নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি ভিত্তিসহ পিয়ার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সিট লেভেল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বিধায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (উচ্চতা) বৃদ্ধি করতে হলে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা সেতুটির স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে জানায়। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত লোড হবে। ফলে গোমা সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করা কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং।

এ অবস্থায় আরও সময় বয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বরিশাল সড়ক জোনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চোরম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গোমা সেতুর স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।

এ ব্যাপারে সড়ক অধিদফতরের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি সুরাহা হবার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন গোমা সেতুর কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে একই নদীর ওপর অপর একটি সেতু ৭.৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলবাসী সম্ভব হলে প্রবাহমান নদীটিকে নৌচলাচলের জন্য বাঁচিয়ে রেখে কিভাবে সেতুটি নির্মাণ করা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

image

বরিশাল : সওজ কর্তৃক নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি বর্তমান নকশানুযায়ী সম্পন্ন করা হলে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে

আরও খবর
বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে এনে মুজিববর্ষেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা উত্তর সিটির অবৈধ বিলবোর্ড ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদ
আইওএমকে ২০ লাখ ইউরো দিয়েছে জার্মানি
আশুলিয়ায় পরিকল্পনা হোসনী দালানে হামলা
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন ৪১২ প্রবাসী
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন ৪১২ প্রবাসী
বাড়তি দামেই সবজি পিয়াজেও চড়া
মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলীর করোনা পজিটিভ
জামায়াতের কেন্দ্রীয় ৩ নেতা গ্রেফতার
আরও ৪ জঙ্গি গ্রেফতার
সাংবাদিকতার মুখোশ পরে নানা অপকর্ম লোপার
হবিগঞ্জে কিশোর গ্যাং-এর আধিপত্য
ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৫
গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চাই পরিকল্পিত পদক্ষেপ

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েন

একটি প্রবাহমান নদী নৌচলাচলে অযোগ্য হওয়ার পথে

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

image

বরিশাল : সওজ কর্তৃক নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি বর্তমান নকশানুযায়ী সম্পন্ন করা হলে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে

দুটি সরকারি দফতরের টানাপড়েনে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপাশা হয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকি পর্যন্ত সড়কে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যেকার জট খুলছে না। এমনকি এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু সচিব এবং নৌপরিবহন সচিবের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও সরকারের নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই সেতুটির নির্মাণ কাজ কবে পুনরায় শুরু ও শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমদি মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতুর ডিপিপি প্রণয়নের সময় বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর দক্ষিণ ব-দ্বীপ শাখার কাছে নদীটি কোন শ্রেণীর তা জানতে চাওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য নকশা প্রণয়নের আগে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর কাছে অনাপত্তি চাওয়া হলে প্রকৌশলীদের অদূরদর্শিতার কারণে সেখান থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭.২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ও ৩০.৪৮ মিটার হরাইজেন্টোল ক্লিয়ারেন্স রেখে প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণে সড়ক বিভাগকে অনাপত্তি পত্র প্রদান করা হয়। বিআইডিব্লিটিএর সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সেতু নকশা সার্কেল থেকে প্রস্তাবিত গোমা সেতুর জন্য ডিটেইল ডিজাইন সম্পন্ন করার পরে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের বরাবরে মূল সেত নির্মাণে ২০১৮ সালের ১৫ মে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেতুটির সমুদয় পাইল সম্পন্ন করে এবাটমেন্ট ও পিয়ারের ক্যাপ পর্যন্ত কাজ শেষ করার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। গত বছর ৯ মে বিআইডব্লিউটিএর তরফ থেকে দেয়া এক চিঠিতে পাঁয়রা সমুদ্র বন্দর শুরু হওয়ায় এই গোমা সেতুর রাঙ্গামাটি নদীটির গুরুত্ব ভবিষ্যতে অনেক বেড়ে যাবে ধারণা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার কথা জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিায়ারেন্স ১২.২০ মিটার ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নির্মাণ কাজ করার নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর থেকেই সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরসহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একাধিকবার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটএর সঙ্গে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণাল সভায়ও বিষয়য়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পরে ‘যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পূর্বে নেয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, বিআইডিব্লিউটিএর সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স যতটুকু সম্ভব সংশোধন পূর্বক সে সব সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে সড়ক অধিদফতরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং গত ৩০ জুন এক চিঠিতে জানায়, ‘নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি ভিত্তিসহ পিয়ার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সিট লেভেল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বিধায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (উচ্চতা) বৃদ্ধি করতে হলে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা সেতুটির স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে জানায়। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত লোড হবে। ফলে গোমা সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করা কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং।

এ অবস্থায় আরও সময় বয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বরিশাল সড়ক জোনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চোরম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গোমা সেতুর স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।

এ ব্যাপারে সড়ক অধিদফতরের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি সুরাহা হবার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন গোমা সেতুর কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে একই নদীর ওপর অপর একটি সেতু ৭.৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলবাসী সম্ভব হলে প্রবাহমান নদীটিকে নৌচলাচলের জন্য বাঁচিয়ে রেখে কিভাবে সেতুটি নির্মাণ করা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েন

একটি প্রবাহমান নদী নৌচলাচলে অযোগ্য হওয়ার পথে

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

দুটি সরকারি দফতরের টানাপড়েনে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপাশা হয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকি পর্যন্ত সড়কে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যেকার জট খুলছে না। এমনকি এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু সচিব এবং নৌপরিবহন সচিবের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও সরকারের নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই সেতুটির নির্মাণ কাজ কবে পুনরায় শুরু ও শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

বরিশালÑলক্ষ্মীপাশাÑদুমদি মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতুর ডিপিপি প্রণয়নের সময় বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর দক্ষিণ বÑদ্বীপ শাখার কাছে নদীটি কোন শ্রেণীর তা জানতে চাওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য নকশা প্রণয়নের আগে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএর কাছে অনাপত্তি চাওয়া হলে প্রকৌশলীদের অদূরদর্শিতার কারণে সেখান থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭.২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ও ৩০.৪৮ মিটার হরাইজেন্টোল ক্লিয়ারেন্স রেখে প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণে সড়ক বিভাগকে অনাপত্তি পত্র প্রদান করা হয়। বিআইডিব্লিটিএর সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সেতু নকশা সার্কেল থেকে প্রস্তাবিত গোমা সেতুর জন্য ডিটেইল ডিজাইন সম্পন্ন করার পরে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের বরাবরে মূল সেত নির্মাণে ২০১৮ সালের ১৫ মে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেতুটির সমুদয় পাইল সম্পন্ন করে এবাটমেন্ট ও পিয়ারের ক্যাপ পর্যন্ত কাজ শেষ করার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। গত বছর ৯ মে বিআইডব্লিউটিএর তরফ থেকে দেয়া এক চিঠিতে পাঁয়রা সমুদ্র বন্দর শুরু হওয়ায় এই গোমা সেতুর রাঙ্গামাটি নদীটির গুরুত্ব ভবিষ্যতে অনেক বেড়ে যাবে ধারণা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার কথা জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিায়ারেন্স ১২.২০ মিটার ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নির্মাণ কাজ করার নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর থেকেই সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরসহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একাধিকবার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটএর সঙ্গে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণাল সভায়ও বিষয়য়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পরে ‘যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পূর্বে নেয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, বিআইডিব্লিউটিএর সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স যতটুকু সম্ভব সংশোধন পূর্বক সে সব সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে সড়ক অধিদফতরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং গত ৩০ জুন এক চিঠিতে জানায়, ‘নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি ভিত্তিসহ পিয়ার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সিট লেভেল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বিধায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (উচ্চতা) বৃদ্ধি করতে হলে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা সেতুটির স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে জানায়। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত লোড হবে। ফলে গোমা সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করা কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং।

এ অবস্থায় আরও সময় বয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বরিশাল সড়ক জোনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চোরম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গোমা সেতুর স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।

এ ব্যাপারে সড়ক অধিদফতরের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি সুরাহা হবার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন গোমা সেতুর কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে একই নদীর ওপর অপর একটি সেতু ৭.৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলবাসী সম্ভব হলে প্রবাহমান নদীটিকে নৌচলাচলের জন্য বাঁচিয়ে রেখে কিভাবে সেতুটি নির্মাণ করা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।