করোনা নিয়ে আগামীর জীবন

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

করোনাভাইরাসের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধের ৬ মাস অতিবাহিত হলো। ৮ মার্চ বাংলাদেশে মানুষের দেহে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু এবং ১৮ তারিখে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে এক পরিবর্তিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতোদিন পরেও আজ করোনা আক্রান্তের হার তেমন কমছে না। সরকারি হিসাবে এখনও দেশে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন ৩৫ থেকে ৫০ জনের কাছাকাছি। তথ্য বলছে, মোট পরীক্ষিত সংখ্যার মধ্যে আক্রান্তের হার প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। বলাবাহুল্য করোনা আক্রান্ত অনেক মানুষই পরীক্ষার আওতায় আসছে না। এই হার সহনীয় সীমা ৫ শতাংশে নেমে আসতে অনেক সময় লাগবে। অবস্থাদৃষ্টে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো আশা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতোদিন গণপরিবহনে যাত্রী বহনের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করা হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা তুলে নেয়া হয়েছে। গণপরিবহনে যাত্রীর ঠাসাঠাসি, বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেছে। পরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নেই কোনো বালাই। এমনিতেও রাস্তাঘাটে, হাটে-বাজারে, বিপণিকেন্দ্রে রয়েছে মানুষের ভিড়। বাইরে সবার জন্য ফেসমাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই তা মানছেন না।

কোভিড-১৯ শ্বাসতন্ত্রের রোগ। স্বাভাবিক কারণেই শীত মৌসুমে এর বিস্তারের জন্য পরিবেশ অনুকূলে থাকে। দেশে শীতের শেষদিকে মার্চেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল এই ভাইরাস। বেশি তাপে করোনা বেঁচে থাকতে পারে না- এমন ধারণা থেকে মনে হয়েছিল বাংলাদেশে করোনা খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেল আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমিত হয়েছে অতি দ্রুতবেগে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও করোনা রেহাই দেয়নি। তাই বাংলাদেশের ৩৫-৩৮ ডিগ্রি তাপে করোনা যে তার বিস্তার অব্যাহত রাখবে তা ধারণা করা অমূলক নয়। ৭০ ডিগ্রি সেলাসিয়াস তাপমাত্রার নিচে করোনা মারা যায় না। ওই তাপে মানুষসহ অন্যসব প্রাণীরও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়! ডিসেম্বরে শীত পৌঁছবে চরমে, তখন করোনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে কিনা, তা বোঝা মুশকিল!

দেশে যখন কমছে না করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার, একই অবস্থায় রয়েছে মৃত্যু, সেই মুহূর্তে গণপরিবহনকে এভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া সংক্রমণ এবং মৃত্যুকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনতিই দেশে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস কম। করোনা নিয়ে বর্তমান গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাস বহনকারী মানুষের মধ্যে ৭৮ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ থাকে না। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি কোভিড-১৯ এর শিকার। অথচ এমন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই একে অন্যকে ছড়িয়ে দেয় করোনার জীবাণু। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতিতে করোনার বিস্তার হ্রাসের সম্ভাবনা কম। কঠিন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে গত ঈদুল আজহার ছুটিতে। গণপরিবহনের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জনগণকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ উৎসব পালন করতে বলা হলেও কোরবানির ঈদে এর কোনো বালাই ছিল না। গণপরিবহন ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যেতে এবং ঢাকায় ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। করোনাভাইরাস বিস্তারে ঈদযাত্রার এ অবস্থা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

লকডাউন সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা কড়াকড়ি আরোপিত হতে দেখা যায়নি প্রথম থেকেই। লকডাউনের ব্যাপারটা জনগণের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি। জনগণ রীতিমতো বাজারে গেছেন, রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেছেন স্বাভাবিক সময়ের মতো। ঈদের বাজার সরগরম করে রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাস্তায় নামিয়ে কিছুদিন চেষ্টা করেও তেমন সফলতা লাভ করেনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে চলাফেরা করে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেপরোয়া ঘুরে-ফিরে জনগণ করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের যেভাবে বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে দেশ। করোনা কখনোই সব জায়গায় একই সময়ে সমভাবে বিস্তার লাভ করে না। প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং মাদারীপুরে বিস্তৃত হয়ে পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যকর লকডাউনই হতে পারতো করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের উৎকৃষ্ট উপায়। লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে লাল অঞ্চলকে অধিক গুরুত্বসহকারে করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পর্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ হলুদ জোন এবং আরও পরে সবুজ জোনে লকডাউন দেয়ার কার্যক্রম হঠাৎ থেমে গেল। রাজাবাজার আর ওয়ারীতে লকডাউন ঘোষণার পর এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ অদূর ভবিষ্যতে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অথচ করোনা আছে, করোনা কি আরও দীর্ঘকাল থাকবে? বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনার ইতি ঘটার ব্যাপারে আশাব্যাঞ্জক কোনো খবর দিতে পারছে না। বাংলাদেশে এখনও শতকরা ১০ ভাগের মতো মানুষের ইমিউনিটি রয়েছে বলে ধরা হয়। এই হার ৭০ বা তার ঊর্ধ্বে পৌঁছে হার্ড-ইমিউনিটিতে পৌঁছতে নিশ্চয়ই অনেক সময় নেবে! করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়ে বিশে^র শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে যে প্রতিযোগিতার রাজনীতি চলছে তাতে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগণের কাছে প্রতিষেধক টিকা কবে সহজলভ্য হবে তা বলা মুশকিল। এর মাঝে করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ বেরিয়েছে, যা বাংলাদেশেও উৎপন্ন হচ্ছে। তবে ব্যয়বহুল এ ওষুধের মূল্য হ্রাস পেয়ে যদি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসে তবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবেন। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীরা পেলে করোনায় মৃত্যুহার হ্রাস পাবে। করোনা আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই এখন বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেন। সঠিক ওষুধ সেবনের ব্যাপারে তারা যাতে সহজে উপযুক্ত পরামর্শ পান তা নিশ্চিত করতে হবে।

করোনার চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হাসপাতাল অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রয়োজনে রোগীরা যেন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কারণে যদি নিরীহ মানুষকে ভুগতে হয়, দিতে হয় প্রাণ- তবে সেই সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। অন্যথায় আগামী দিনে বড় ধরনের বিপদ হয়তো অপেক্ষা করছে। করোনাভাইরাস যে অতি শিগগিরই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেÑ এমন আশ^াস কেউ দিতে পারছে না। তবে কি বিশ্বাস করতে হবে- করোনা আছে, করোনা থাকবে। করোনার সঙ্গে হবে মানুষের দীর্ঘ বসবাস!

[লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট]

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

করোনা নিয়ে আগামীর জীবন

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

করোনাভাইরাসের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধের ৬ মাস অতিবাহিত হলো। ৮ মার্চ বাংলাদেশে মানুষের দেহে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু এবং ১৮ তারিখে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে এক পরিবর্তিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতোদিন পরেও আজ করোনা আক্রান্তের হার তেমন কমছে না। সরকারি হিসাবে এখনও দেশে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন ৩৫ থেকে ৫০ জনের কাছাকাছি। তথ্য বলছে, মোট পরীক্ষিত সংখ্যার মধ্যে আক্রান্তের হার প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। বলাবাহুল্য করোনা আক্রান্ত অনেক মানুষই পরীক্ষার আওতায় আসছে না। এই হার সহনীয় সীমা ৫ শতাংশে নেমে আসতে অনেক সময় লাগবে। অবস্থাদৃষ্টে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো আশা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতোদিন গণপরিবহনে যাত্রী বহনের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করা হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা তুলে নেয়া হয়েছে। গণপরিবহনে যাত্রীর ঠাসাঠাসি, বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেছে। পরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নেই কোনো বালাই। এমনিতেও রাস্তাঘাটে, হাটে-বাজারে, বিপণিকেন্দ্রে রয়েছে মানুষের ভিড়। বাইরে সবার জন্য ফেসমাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই তা মানছেন না।

কোভিড-১৯ শ্বাসতন্ত্রের রোগ। স্বাভাবিক কারণেই শীত মৌসুমে এর বিস্তারের জন্য পরিবেশ অনুকূলে থাকে। দেশে শীতের শেষদিকে মার্চেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল এই ভাইরাস। বেশি তাপে করোনা বেঁচে থাকতে পারে না- এমন ধারণা থেকে মনে হয়েছিল বাংলাদেশে করোনা খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেল আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমিত হয়েছে অতি দ্রুতবেগে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও করোনা রেহাই দেয়নি। তাই বাংলাদেশের ৩৫-৩৮ ডিগ্রি তাপে করোনা যে তার বিস্তার অব্যাহত রাখবে তা ধারণা করা অমূলক নয়। ৭০ ডিগ্রি সেলাসিয়াস তাপমাত্রার নিচে করোনা মারা যায় না। ওই তাপে মানুষসহ অন্যসব প্রাণীরও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়! ডিসেম্বরে শীত পৌঁছবে চরমে, তখন করোনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে কিনা, তা বোঝা মুশকিল!

দেশে যখন কমছে না করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার, একই অবস্থায় রয়েছে মৃত্যু, সেই মুহূর্তে গণপরিবহনকে এভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া সংক্রমণ এবং মৃত্যুকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনতিই দেশে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস কম। করোনা নিয়ে বর্তমান গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাস বহনকারী মানুষের মধ্যে ৭৮ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ থাকে না। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি কোভিড-১৯ এর শিকার। অথচ এমন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই একে অন্যকে ছড়িয়ে দেয় করোনার জীবাণু। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতিতে করোনার বিস্তার হ্রাসের সম্ভাবনা কম। কঠিন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে গত ঈদুল আজহার ছুটিতে। গণপরিবহনের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জনগণকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ উৎসব পালন করতে বলা হলেও কোরবানির ঈদে এর কোনো বালাই ছিল না। গণপরিবহন ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যেতে এবং ঢাকায় ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। করোনাভাইরাস বিস্তারে ঈদযাত্রার এ অবস্থা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

লকডাউন সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা কড়াকড়ি আরোপিত হতে দেখা যায়নি প্রথম থেকেই। লকডাউনের ব্যাপারটা জনগণের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি। জনগণ রীতিমতো বাজারে গেছেন, রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেছেন স্বাভাবিক সময়ের মতো। ঈদের বাজার সরগরম করে রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাস্তায় নামিয়ে কিছুদিন চেষ্টা করেও তেমন সফলতা লাভ করেনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে চলাফেরা করে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেপরোয়া ঘুরে-ফিরে জনগণ করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের যেভাবে বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে দেশ। করোনা কখনোই সব জায়গায় একই সময়ে সমভাবে বিস্তার লাভ করে না। প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং মাদারীপুরে বিস্তৃত হয়ে পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যকর লকডাউনই হতে পারতো করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের উৎকৃষ্ট উপায়। লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে লাল অঞ্চলকে অধিক গুরুত্বসহকারে করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পর্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ হলুদ জোন এবং আরও পরে সবুজ জোনে লকডাউন দেয়ার কার্যক্রম হঠাৎ থেমে গেল। রাজাবাজার আর ওয়ারীতে লকডাউন ঘোষণার পর এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ অদূর ভবিষ্যতে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অথচ করোনা আছে, করোনা কি আরও দীর্ঘকাল থাকবে? বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনার ইতি ঘটার ব্যাপারে আশাব্যাঞ্জক কোনো খবর দিতে পারছে না। বাংলাদেশে এখনও শতকরা ১০ ভাগের মতো মানুষের ইমিউনিটি রয়েছে বলে ধরা হয়। এই হার ৭০ বা তার ঊর্ধ্বে পৌঁছে হার্ড-ইমিউনিটিতে পৌঁছতে নিশ্চয়ই অনেক সময় নেবে! করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়ে বিশে^র শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে যে প্রতিযোগিতার রাজনীতি চলছে তাতে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগণের কাছে প্রতিষেধক টিকা কবে সহজলভ্য হবে তা বলা মুশকিল। এর মাঝে করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ বেরিয়েছে, যা বাংলাদেশেও উৎপন্ন হচ্ছে। তবে ব্যয়বহুল এ ওষুধের মূল্য হ্রাস পেয়ে যদি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসে তবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবেন। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীরা পেলে করোনায় মৃত্যুহার হ্রাস পাবে। করোনা আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই এখন বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেন। সঠিক ওষুধ সেবনের ব্যাপারে তারা যাতে সহজে উপযুক্ত পরামর্শ পান তা নিশ্চিত করতে হবে।

করোনার চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হাসপাতাল অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রয়োজনে রোগীরা যেন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কারণে যদি নিরীহ মানুষকে ভুগতে হয়, দিতে হয় প্রাণ- তবে সেই সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। অন্যথায় আগামী দিনে বড় ধরনের বিপদ হয়তো অপেক্ষা করছে। করোনাভাইরাস যে অতি শিগগিরই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেÑ এমন আশ^াস কেউ দিতে পারছে না। তবে কি বিশ্বাস করতে হবে- করোনা আছে, করোনা থাকবে। করোনার সঙ্গে হবে মানুষের দীর্ঘ বসবাস!

[লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট]