সীতাকুণ্ডে ৩শ’বর্ষী দিঘী ভরাট করে বহুতল ভবন!

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে প্রায় তিন শ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নূরমার দিঘী ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ইতোমধ্যে দিঘির চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে উঁচু দেয়াল। বেসরকারি একটি পেট্টোলিয়াম কোম্পানি এই ঐতিহ্যবাহী দিঘিটি ভরাট করে তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ভবনগুলো নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী দিঘি রক্ষায় দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

জানা যায়, উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার সুপ্রাচীন এই দিঘিটি ছিল স্থানীয় চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই দিঘিকে ঘিরে। চার একর আয়তনের ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি ২০১৭ সালে শেষেরদিকে কিছু প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের হাত চলে যায়। এতে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এই দীঘির পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়। ২০১৮ সালে মার্চ মাসে দিঘীটি ভরাট শুরু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিঘী ভরাট বন্ধ করে দেন। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানকালে সেখানে দীঘি ভরাটে দু’জন হাতে নাতে ধরেন। এই ঘটনার পর পেরিয়ে যায় দীর্ঘ দুই বছর। এরই মধ্যে দিঘিটির মালিকানা স্বত্ব বিক্রি করে দেন বেসরকারি পেট্টোলিয়াম একটি কোম্পানীর কাছে। ওই কোম্পানী স্থানীয় ভূমিদস্যুদের ব্যবহার করে দিঘির বিশাল একটি অংশ ভরাট করে। ভরাটকৃতস্থানে ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেন স্টিল মার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। আবার এই ভবণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই দ্রুপে কয়েক দফায় জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্থানীয় এক মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মতিন জানান, তারা সাগর পাড় থেকে ট্রাকযোগে মাটি এনে রাতের আঁধারে নুরমার দিঘির চারপাশে ভরাট করে। স্থানীয় ৫টি গ্রামের মানুষ এই দিঘীটি ব্যবহার করলেও এখন ওখানে কাউকে যেতে দেয়া হয় না। এছাড়া ওখানে ভবন নির্মাণের কাজ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেড এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আজাদের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এবং কোন তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তবে ভবন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টিল মার্কের কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন,স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেটের কার্যাদেশ পাওয়ার পর আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। তবে দিঘী ভরাটের বিষয়টির তথ্য জানতে স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো এই দিঘিটি রক্ষায় জন্য স্থানীয়রা দাবি করে আসছে। তবে যারা বর্তমানে দিঘিটি দখলে নিয়েছে স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেড খুবই প্রভাবশালী। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি।

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

সীতাকুণ্ডে ৩শ’বর্ষী দিঘী ভরাট করে বহুতল ভবন!

image

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে প্রায় তিন শ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নূরমার দিঘী ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ইতোমধ্যে দিঘির চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে উঁচু দেয়াল। বেসরকারি একটি পেট্টোলিয়াম কোম্পানি এই ঐতিহ্যবাহী দিঘিটি ভরাট করে তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ভবনগুলো নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী দিঘি রক্ষায় দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

জানা যায়, উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার সুপ্রাচীন এই দিঘিটি ছিল স্থানীয় চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই দিঘিকে ঘিরে। চার একর আয়তনের ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি ২০১৭ সালে শেষেরদিকে কিছু প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের হাত চলে যায়। এতে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এই দীঘির পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়। ২০১৮ সালে মার্চ মাসে দিঘীটি ভরাট শুরু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিঘী ভরাট বন্ধ করে দেন। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানকালে সেখানে দীঘি ভরাটে দু’জন হাতে নাতে ধরেন। এই ঘটনার পর পেরিয়ে যায় দীর্ঘ দুই বছর। এরই মধ্যে দিঘিটির মালিকানা স্বত্ব বিক্রি করে দেন বেসরকারি পেট্টোলিয়াম একটি কোম্পানীর কাছে। ওই কোম্পানী স্থানীয় ভূমিদস্যুদের ব্যবহার করে দিঘির বিশাল একটি অংশ ভরাট করে। ভরাটকৃতস্থানে ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেন স্টিল মার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। আবার এই ভবণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই দ্রুপে কয়েক দফায় জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্থানীয় এক মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মতিন জানান, তারা সাগর পাড় থেকে ট্রাকযোগে মাটি এনে রাতের আঁধারে নুরমার দিঘির চারপাশে ভরাট করে। স্থানীয় ৫টি গ্রামের মানুষ এই দিঘীটি ব্যবহার করলেও এখন ওখানে কাউকে যেতে দেয়া হয় না। এছাড়া ওখানে ভবন নির্মাণের কাজ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেড এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আজাদের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এবং কোন তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তবে ভবন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টিল মার্কের কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন,স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেটের কার্যাদেশ পাওয়ার পর আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। তবে দিঘী ভরাটের বিষয়টির তথ্য জানতে স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো এই দিঘিটি রক্ষায় জন্য স্থানীয়রা দাবি করে আসছে। তবে যারা বর্তমানে দিঘিটি দখলে নিয়েছে স্ট্যান্ডার এশিয়েটিক লিমিটেড খুবই প্রভাবশালী। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি।