অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

মামলা করে বিপাকে মা-বাবা

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গরে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ জেসমিন আক্তারকে (১৯) যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী জুনাইদ মিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বানিয়াচং থানাকে।

এদিকে, মামলা করে বিপাকে পড়েছেন নিহত গৃহবধূ জেসমিন আক্তারের বাবার বাড়ির লোকজন। স্বামীর বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় অব্যাহতভাবে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে জুনাইদ মিয়ার সঙ্গে ১০/১২ বছর আগে বিয়ে দেয়া হয় একই গ্রামের আছকির আলমের মেয়ে রুসমিন আক্তারকে। বিয়ের পর তাদের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর কয়েক বছর পর আরও একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নবজাতকসহ রুসমিন আক্তার মারা যান। সে মারা যাওয়ার পর জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন আকছির আলমের ২য় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ সময় নিহত বড় মেয়ের প্রতিবন্ধী ছেলের কথা বিবেচনা করে আছকির আলম তার ২য় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদের সঙ্গে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে জুনাইদ ও তার পরিবার। প্রায় সময়ই জুনাইদ মিয়া জেসমিনকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে গ্রামের ময়-মুরব্বিরা একাধিকবার সালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে দেন। জেসমিনকে খুনের কিছুদিন আগে আবারও টাকার জন্য মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় জুনাইদ মিয়া। পরে জেসমিন বাবার বাড়িতে চলে আসে। কিছুদিন পর জুনাইদ মিয়ার গোষ্ঠীর প্রধান সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রউপ জেসমিনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে স্বামীর বাড়িতে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই গত ১ সেপ্টেম্বর স্বামী জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেসমিনকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরদিন বুধবার সকালে সুজাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওমর ফারুক লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন বিকেলে জেসমিনের দাফন গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়।

ঘটনার পর বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বাদী হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- নিহত জেসমিনের স্বামী জুনাইদ মিয়া, ভাসুর ছামেদ মিয়া, দেবর জুবায়ের মিয়া, আলমগীর মিয়া, আসামি ছামেদ মিয়ার স্ত্রী রুশেনা আক্তার ও ফরহাদ মিয়া। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বানিয়াচং থানাকে।

এ ব্যাপারে নিহত জেসমিনের বাবা আকছির আলম বলেন- ‘টাকার জন্য জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবার লোকজন আমার মেয়েকে খুন করেছে। ঘটনার পরই মামলা দায়ের করেও আমি নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে তারা।’

মামলার বাদী ও নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বলেন- ‘আমার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তার স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন। গর্ভবর্তী মেয়েকে তারা সবাই মিলে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিছে। কিন্তু আবদুর রউফ আমার মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ায় আমি আমার মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়ে খুন করেছে। এখন আবদুর রউফসহ আসামিরা আমাদের মামলা তুলতে হুমকি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন- ‘আমি গরিব মানুষ ও স্বামী প্রতিবন্ধী। টাকাপয়সার অভাবে কিছুই করতে পারি না। আমি সরকারের কাছে আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি মো. এমরান হোসেন বলেন- ‘আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব বানিয়াচং থানাকে দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আমরা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব বলে আশা করছি।’

আরও খবর
গোমতী নদীর ১৩ স্থান থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন
শতভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু আজ থেকে
ঢাকা থেকে রেল সংযোগের পর কক্সবাজার হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী রেলমন্ত্রী
সারাদেশে বিদ্যুতের তার হবে ভূগর্ভে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ঝুলন্ত তার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবে ডিএনসিসি ৩
এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মৃত্যু
অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট একসঙ্গে ৭ জনকে অবসর প্রদান
তদন্ত শুরু : আলামত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে
ইলিশ ধরা পড়ছে ব্যাপক হারে চিন্তিত মৎস্য বিশেষজ্ঞরা
মানব পাচারের অভিযোগে নৃত্যশিল্পী সোহাগ গ্রেফতার
খাদ্যাভাবে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

হবিগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

মামলা করে বিপাকে মা-বাবা

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গরে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ জেসমিন আক্তারকে (১৯) যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী জুনাইদ মিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বানিয়াচং থানাকে।

এদিকে, মামলা করে বিপাকে পড়েছেন নিহত গৃহবধূ জেসমিন আক্তারের বাবার বাড়ির লোকজন। স্বামীর বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় অব্যাহতভাবে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে জুনাইদ মিয়ার সঙ্গে ১০/১২ বছর আগে বিয়ে দেয়া হয় একই গ্রামের আছকির আলমের মেয়ে রুসমিন আক্তারকে। বিয়ের পর তাদের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর কয়েক বছর পর আরও একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নবজাতকসহ রুসমিন আক্তার মারা যান। সে মারা যাওয়ার পর জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন আকছির আলমের ২য় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ সময় নিহত বড় মেয়ের প্রতিবন্ধী ছেলের কথা বিবেচনা করে আছকির আলম তার ২য় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদের সঙ্গে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে জুনাইদ ও তার পরিবার। প্রায় সময়ই জুনাইদ মিয়া জেসমিনকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে গ্রামের ময়-মুরব্বিরা একাধিকবার সালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে দেন। জেসমিনকে খুনের কিছুদিন আগে আবারও টাকার জন্য মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় জুনাইদ মিয়া। পরে জেসমিন বাবার বাড়িতে চলে আসে। কিছুদিন পর জুনাইদ মিয়ার গোষ্ঠীর প্রধান সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রউপ জেসমিনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে স্বামীর বাড়িতে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই গত ১ সেপ্টেম্বর স্বামী জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেসমিনকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরদিন বুধবার সকালে সুজাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওমর ফারুক লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন বিকেলে জেসমিনের দাফন গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়।

ঘটনার পর বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বাদী হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- নিহত জেসমিনের স্বামী জুনাইদ মিয়া, ভাসুর ছামেদ মিয়া, দেবর জুবায়ের মিয়া, আলমগীর মিয়া, আসামি ছামেদ মিয়ার স্ত্রী রুশেনা আক্তার ও ফরহাদ মিয়া। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বানিয়াচং থানাকে।

এ ব্যাপারে নিহত জেসমিনের বাবা আকছির আলম বলেন- ‘টাকার জন্য জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবার লোকজন আমার মেয়েকে খুন করেছে। ঘটনার পরই মামলা দায়ের করেও আমি নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে তারা।’

মামলার বাদী ও নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বলেন- ‘আমার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তার স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন। গর্ভবর্তী মেয়েকে তারা সবাই মিলে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিছে। কিন্তু আবদুর রউফ আমার মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ায় আমি আমার মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়ে খুন করেছে। এখন আবদুর রউফসহ আসামিরা আমাদের মামলা তুলতে হুমকি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন- ‘আমি গরিব মানুষ ও স্বামী প্রতিবন্ধী। টাকাপয়সার অভাবে কিছুই করতে পারি না। আমি সরকারের কাছে আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি মো. এমরান হোসেন বলেন- ‘আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব বানিয়াচং থানাকে দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আমরা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব বলে আশা করছি।’