তদন্ত শুরু : আলামত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে

হত্যার প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা : পুলিশ

রাজধানীর কাঁঠালবাগানে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শহিদুল ইসলামের ছেলে তরুণ ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসান লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ক্লু উদ্ঘাটনে অপেক্ষা পুলিশ অপেক্ষা করছে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য। গত শুক্রবার ভোরে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আপাতত এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হলেও এ তরুণ আইনজীবীর মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের দাবি তার ছেলেকে হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি বিয়ে মেনে না হওয়ায় হতাশা থেকে ৯ তলা থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে ব্যারিস্টার জিসান।

গত শুক্রবার ভোরে আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসান (৩৩) নামের ওই তরুণ ব্যারিস্টারকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ভোর ৬টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তখন বলা হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির ৯ তলা ফ্লাটের বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে ব্যরিস্টার জিসান। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাাঠায়। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত থাকার বিষয়টি চোখে পড়ে। পরে গিয়ে এমন আঘাতের সৃষ্টি হয়েছে বলে তখন চিকিৎসকরা জানান। তবে সে নিজে পড়েছে নাকি তাকে কেউ ফেলে দিয়েছে এমন বিষয়টি নিশ্চিত হতে শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে আলামত হিসেবে পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, তরুণ আইনজীবী লফিয়ে পড়েছে নাকি তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে সে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। হত্যার প্রমাণ মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র জানান, কাঁঠালবাগানে ফ্রি স্কুল স্ট্রিল রোডের ১৬৩ নম্বর বাসার ৯ তলা থেকে আসিফ ইমতিয়াজ জিসান নামের ওই আইনজীবী পড়ে মারা যাওয়ার খবর পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। সেখানে আইনজীবী জিসানের বাবা এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন উভয় পক্ষই উপস্থিত ছিল। তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা হয়েছে। ছেলের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য সাব ইন্সপেক্টর আনোয়ারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা তার মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ পাঠানো হয়েছে মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে। মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে পুলিশ ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর আসল কারণ পরিষ্কার হবে। ওসি জানান, তরুণ আইনজীবী জিসানের বাবা সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ বাগবাড়ি এলাকার সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম। জিসান সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার। তার বাবাও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি পরিবারসহ মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের রোড ১৭, সি ব্লকে থাকতেন।

আসিফের শ্যালক সাইমন শাহিদ নিশাদের দাবি, চার বছর আগে আসিফ তার বড় বোন সাবরিনা শাহিদ নিশিতাকে বিয়ে করেন। তবে আসিফের পরিবার এটি মেনে নেয়নি। এজন্য আসিফ কাঁঠালবাগানে তাদের বাড়িতেই (শ্বশুরবাড়ি) থাকতেন। তাদের কোন সন্তান নেই। তিনি আরও দাবি করেন আসিফ ও সাবরিনার মাঝে মাঝে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস রিহ্যাবেও ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এক পর্যায়ে আসিফ নয় তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন। দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভোরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আসিফের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, আসিফ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার এবং মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারও ছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো না। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। পরে হাসপাতালে এসে আসিফের মৃতদেহ দেখতে পান। আমাদের সন্দেহ আসিফকে মেরে ফেলা হয়েছে।

আরও খবর
গোমতী নদীর ১৩ স্থান থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন
শতভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু আজ থেকে
ঢাকা থেকে রেল সংযোগের পর কক্সবাজার হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী রেলমন্ত্রী
সারাদেশে বিদ্যুতের তার হবে ভূগর্ভে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ঝুলন্ত তার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবে ডিএনসিসি ৩
এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মৃত্যু
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট একসঙ্গে ৭ জনকে অবসর প্রদান
ইলিশ ধরা পড়ছে ব্যাপক হারে চিন্তিত মৎস্য বিশেষজ্ঞরা
মানব পাচারের অভিযোগে নৃত্যশিল্পী সোহাগ গ্রেফতার
খাদ্যাভাবে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজের রহস্যজনক মৃত্যু

তদন্ত শুরু : আলামত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে

হত্যার প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা : পুলিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর কাঁঠালবাগানে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শহিদুল ইসলামের ছেলে তরুণ ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসান লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ক্লু উদ্ঘাটনে অপেক্ষা পুলিশ অপেক্ষা করছে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য। গত শুক্রবার ভোরে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আপাতত এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হলেও এ তরুণ আইনজীবীর মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের দাবি তার ছেলেকে হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি বিয়ে মেনে না হওয়ায় হতাশা থেকে ৯ তলা থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে ব্যারিস্টার জিসান।

গত শুক্রবার ভোরে আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসান (৩৩) নামের ওই তরুণ ব্যারিস্টারকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ভোর ৬টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তখন বলা হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির ৯ তলা ফ্লাটের বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে ব্যরিস্টার জিসান। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাাঠায়। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত থাকার বিষয়টি চোখে পড়ে। পরে গিয়ে এমন আঘাতের সৃষ্টি হয়েছে বলে তখন চিকিৎসকরা জানান। তবে সে নিজে পড়েছে নাকি তাকে কেউ ফেলে দিয়েছে এমন বিষয়টি নিশ্চিত হতে শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে আলামত হিসেবে পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, তরুণ আইনজীবী লফিয়ে পড়েছে নাকি তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে সে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। হত্যার প্রমাণ মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র জানান, কাঁঠালবাগানে ফ্রি স্কুল স্ট্রিল রোডের ১৬৩ নম্বর বাসার ৯ তলা থেকে আসিফ ইমতিয়াজ জিসান নামের ওই আইনজীবী পড়ে মারা যাওয়ার খবর পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। সেখানে আইনজীবী জিসানের বাবা এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন উভয় পক্ষই উপস্থিত ছিল। তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা হয়েছে। ছেলের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য সাব ইন্সপেক্টর আনোয়ারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা তার মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ পাঠানো হয়েছে মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে। মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে পুলিশ ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর আসল কারণ পরিষ্কার হবে। ওসি জানান, তরুণ আইনজীবী জিসানের বাবা সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ বাগবাড়ি এলাকার সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম। জিসান সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার। তার বাবাও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি পরিবারসহ মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের রোড ১৭, সি ব্লকে থাকতেন।

আসিফের শ্যালক সাইমন শাহিদ নিশাদের দাবি, চার বছর আগে আসিফ তার বড় বোন সাবরিনা শাহিদ নিশিতাকে বিয়ে করেন। তবে আসিফের পরিবার এটি মেনে নেয়নি। এজন্য আসিফ কাঁঠালবাগানে তাদের বাড়িতেই (শ্বশুরবাড়ি) থাকতেন। তাদের কোন সন্তান নেই। তিনি আরও দাবি করেন আসিফ ও সাবরিনার মাঝে মাঝে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস রিহ্যাবেও ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এক পর্যায়ে আসিফ নয় তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন। দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভোরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আসিফের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, আসিফ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার এবং মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারও ছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো না। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। পরে হাসপাতালে এসে আসিফের মৃতদেহ দেখতে পান। আমাদের সন্দেহ আসিফকে মেরে ফেলা হয়েছে।